রাজবাড়ীতে ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

0
152

নিজস্ব প্রতিনিধি
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় নিজ বাড়ির জানালা দিয়ে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ সুমন সবুজকে (২৮) হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নিহতের বাবা শামসুল আলম শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে রাজবাড়ী সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
নিহত শেখ সুমন সবুজ সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা গ্রামের শামসুল আলম শেখের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবুজ ছিলেন মেজো।
রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিহত সবুজের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর দুই ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সজীব শেখ নামে আরও একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সবুজের বাড়ির পাশের একটি বালুর চাতালের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৩০-৩৫ জনের একটি দল পদ্মা নদীর দিক থেকে বেড়িবাঁধ পার হয়ে সবুজের বাড়ির সামনে আসে। কিছু সময় পর হামলাকারীরাও একই পথ দিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর আসে। অল্প সময়ের জন্য একটা জটলা তৈরি হয়। এরপর হেঁটে হামলাকারীরা পদ্মা নদীর দিকে চলে যায়।
নিহত সবুজের প্রতিবেশী এবং জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আসজাদ হোসেন ওরফে আরজু জানান, বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা বাজারের পাশে গল্পগৃহ রিসোর্ট নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সবুজসহ কয়েকজন সেখানে পদ্মা নদীতে নৌকায় করে পর্যটক ঘোরানো ও শিশুদের জন্য কিছু রাইড চালু করেন। রাতে সবুজের বাড়িতে বসে তারা কয়েকজন হিসাব-নিকাশ করছিলেন। এ সময় জানালা দিয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে সবুজ ও তার ব্যবসায়ী সহযোগী সজীব গুলিবিদ্ধ হন।
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ জুয়েল বলেন, উড়াকান্দার গল্পগৃহ রিসোর্টে আমরা ৫ বন্ধু মিলে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইড নিয়ে আসি। ঈদ উপলক্ষ্যে রাইডগুলোতে চাপ থাকায় গতকাল আমরা হিসাব-নিকাশে বসি। সারাদিন আমরা রিসোর্টেই ছিলাম। পরে রোববার রাত সাড়ে ৯টার পর সবুজসহ মোট ৯ জন বাড়িতে গিয়ে রিসোর্টের রাইডের টাকার আয়ের হিসেব করছিল। আমি সবার শেষে রাত ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে যাই। আমি ঘরে ঢোকার পরপরই বাইরে থেকে মানুষের আসা যাওয়ার শব্দ পাই। হামলাকারীরা প্রথমে জানালায় নক করে। ঘরের ভেতর থেকে কে নক করছে জানতে চাওয়া হয়। হঠাৎ সবুজের বাড়ির সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর রুমের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। গুলির শব্দের পর সবাই দৌড়ে পালিয়ে যায়। কয়েকজন মিলে হামলাকারীদের ধাওয়া করে। পরে ঘরে ফিরে দেখতে পাই সবুজের কপালে এবং ঘরের মধ্যে থাকা সজিব নামে এক যুবকের পেটে ও পায়ে গুলি লেগেছে।
সবুজের চাচাতো ভাই সজিব শেখ জানান, সবুজ ও তার কয়েক বন্ধু মিলে উড়াকান্দা পদ্মা নদীর পাড়ে গল্পগৃহ রিসোর্টে (ইউকে বিচ) বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য ডিজিটাল বৈদ্যুতিক নৌকা, জাম্পিং স্লিপারসহ বিনোদনের বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এই ব্যাবসাকে কেন্দ্র করেই প্রতিপক্ষ আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামান জানান, অজ্ঞাতদের আসামি করে নিহতের বাবা মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মামলা করেছেন। কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশ পেয়েছে বলে জানান তিনি।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ এপ্রিল ২০২৩/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here