এস এম বেলাল:
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ জানিয়েছেন, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করার কথা আদালতে দায় স্বীকার করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেওয়ান ফয়সাল।
হত্যার পরিকল্পনাকারী, শ্যুটার এবং কিলিং মিশনে থাকা হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করেছে সে। সে নিজেও কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছে বলে জানান এসপি।
২ মে মঙ্গলবার রাত ৯টার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করেননি।
এর আগে, সন্ধ্যা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় দেওয়ান ফয়সাল। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। দেওয়ান ফয়সাল রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেওয়ান বাচ্চুর ছোট ভাই। সে নোমান-রাকিব হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত তৃতীয় আসামী। ঘটনার পর একটি সিসি টিভি ফুটেছে দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ আরও জানান, সোমবার ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার সকালে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে তারা। এসময় তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে নিজের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে চায়। তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালতের বিচারকের সামনে জবানবন্দি দেয়।
২৫ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দেওয়ান ফয়সালের মোবাইল ফোনে একটা কল আসে। যুবলীগ নেতা নোমানকে মারতে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই ফয়সাল রাজি হয়ে এ হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে। ফয়সালসহ আরও ৮জন এ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। ঘটনার সময় ওইসময় নোমান-রাকিব একটি মোটরসাইকেল যোগে নাগের হাট এলাকায় পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা প্রথমে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে যুবলীগ নেতা নোমান মোটরসাইকেল থেকে ঝাপ দিয়ে সটকে পড়ে, একটি দোকানে আশ্রয় নেয়, সেখানেও সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে।
এরপর আরেকটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে সন্ত্রাসীরা ওই-দোকান থেকে নোমানকে বের করে তিনটি গুলি করে। এবং তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা অবস্থান ত্যাগ করে। হত্যার পর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা দেওয়ান ফয়সাল একটি বিয়ের গায়ে হলুদের অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় যুবলীগ নেতা নোমান এবং ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা নোমানকে মৃত ঘোষণা করেন। ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান তিনিও।
২৬ এপ্রিল রাত ১ টার দিকে নিহত নোমানের বড় ভাই এবং বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকে র্যাব এবং পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/০৩ মে -২০২৩/মওম