এরশাদ আলী
গ্রীষ্মের প্রচন্ড রোদের উত্তাপ গায়ে মেখে চোখ ধাঁধানো রক্তিম টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার প্রকৃতির সৌন্দর্য । টুকটুকে এই লাল ফুলে সু-সজ্জিত হয়ে প্রকৃতিকে যেন সাজিয়েছে এক নতুন সাজে। এই সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পথে প্রান্তরে গাছে গাছে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া ফুল।দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয়, গ্রীষ্মের রৌদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়ে ফুটেছে সবুজ চিরল পাতার মাঝে এই রক্তিম পুষ্পরাজি, যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে প্রচণ্ড তাপে ওষ্ঠাগত পথিকের মনে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন সামান্য তম প্রশান্তি এনে দেয়। পথচারীরা অবাক বিস্ময়ে, পুলকিত নয়নে উপভোগ করেন কৃষ্ণচূড়ার এই অপরুপ সৌন্দর্য। বৈশাখের এই দিনে কৃষ্ণচুড়ার লাল লাল ফুল ছেয়ে যায় গাছ। চোখ ঝলসানো এই ফুলের নাম কৃষ্ণচুড়া কেন রাখা হলো তা হয়তো বা আমাদের অনেকের কাছে অজানা। এটির অন্য নাম গুলো হলো গুলমোহর, রক্তচোরা। ইংরেজিতে নাম Royal poinciana. বৈজ্ঞানিক নাম regia. কৃষ্ণচুড়া ফুল দেখতে উজ্জ্বল লাল ও হলুদ রঙের হয়ে থাকলেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, কৃষ্ণচূড়া তিন রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া চোখে পড়ে। তবে সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে না বললেই চলে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়া গাছর উঁচুতে অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তার ঘটায়। বসন্ত শেষে ও গ্রীষ্মের রোদের দাহের মধ্যে প্রায় একই সময়ে তিন রঙে-ই কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে প্রকৃতিকে নতুন রুপ দেয়। আমরা এসব অঞ্চলে লাল রঙেই দেখতে খুব বেশি অভ্যস্ত। সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও কৃষ্ণচূড়া গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষ ভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যপ্তি বেশ প্রশস্ত। এর ফুলগুলো সাধারণত বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো পাপড়িযুক্ত গাঢ় রক্তিম লাল হয়। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকেবাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। কৃষ্ণচুড়ার পাঁপড়ী গুলো সাধারণত ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতা গুলো সবুজ আকৃতির ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে, যার মধ্যে প্রতিটি পাতায় পাতায় ২০ হতে ৩০ টি উপপত্র থাকে । কৃষ্ণচুড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকায়। লংগদু উপজেলার প্রায় প্রতিটি রাস্তার পাশেই কৃষ্ণচূড়া ফুলের দেখা মিলছে। তার মধ্যে লংগদুর উপজেলা সদর, লংগদু ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস, রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রজেক্ট সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় এখন রক্তাক্ত লাল হয়ে ফুটে আছে এই ফুল। শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে থাকে । ব্যবসায়িক ভাবে এর কাঠ তুলনামূলক দামী না হওয়া এবং ভালো কোনো ব্যবহারে না আসায় আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে আগ্রহ অনেক কম। তবে শখের বেলায় এর কদর রয়েছে বেশ। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন কৃষ্ণচুড়ার ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রতিটি পথচারী যেন থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি