চট্টগ্রামে ডাকাতকে চিনে ফেলায় ছুরিকাঘাতে খুন,গ্রেফতার ১

0
233
আব্দুল সাত্তার টিটু: 
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির সময় ডাকাত দলকে চিনে ফেলায় ভিকটিমকে ছুরিকাঘাতে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামী দিদারুল আলম’কে দীর্ঘ ২০ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
 ১৬ মে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামি হাটহাজারী থানাধীন ফটিকালতি এলাকার মৃত সৈয়দ আহমেদের ছেলে।
র‌্যাব-৭ সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিডিয়া মোঃ নুরুল আবছার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
র‌্যাব জানান, গত ২৫ নভেম্বর ২০০৩ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ০১:৩০ ঘটিকায় দুুর্ধর্ষ একদল ডাকাত চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী এলাকার হাটহাজারী টু মোহাম্মদপুর গামী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে সাধারণ লোকজনকে আটক করে তাদের হাত পা বেধে নির্যাতন এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার প্রাক্কালে ভুক্তভোগী নিহত ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম অন্যান্যদের মত উক্ত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তখন উক্ত ডাকাত দল রাস্তা ব্লক দিয়ে ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে তার সাথে থাকা টাকা পয়সা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ভিকটিম জাহাঙ্গীর ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলে এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে।
 ভিকটিম জাহাঙ্গীর কর্তৃক ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলার বিষয়টি আচঁ করতে পেরে ডাকাত দল কর্তৃক ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের পায়ের উরুতে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে আহত করে পালিয়ে যায়। এসময় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে ভিকটিমকে মূমুর্ষ অবস্থায় এবং জনৈক মোঃ ফজল ড্রাইভারসহ ভুক্তভোগী আরো ৭/৮ জনকে হাত-পা বাধা ও আহত অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম মৃত্যু বরণ করেন।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিবেশী মোঃ ফজল আহাম্মদ ড্রাইভার (ডাকাতির ঘটনার রাত্রে ডাকাতদের কবলে পড়া ৭/৮ জন ভিকটিমদের মধ্যে একজন) বাদী হয়ে গত ২৯ নভেম্বর ২০০৩ ইং তারিখ চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ২৯/১১/২০০৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪; পেনাল কোড- ১৮৬০।
 মামলাটি রুজু হওয়ার পর ঐদিন রাতেই আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদার হাটহাজারী থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর আসামী দিদারুল আলম জামিনে মুক্তি নিয়ে বের হয়। এরপর সে নিয়মিত মামলার হাজিরা দিয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে আসামী দিদারুল আলম হাজিরা না দেয়ায় বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয় এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থেকে সে পলাতক হয়ে যায়।
 গত ৩০ মে ২০২২ইং তারিখ বিজ্ঞ আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এবং দীর্ঘ বিচার কার্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে উক্ত নির্মম এবং নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ০৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এবং ৩৯৪/৩৪ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং বিশ হাজার টাকা অর্থদন্ডসহ বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, সে উল্লেখিত হত্যার ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং উক্ত হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বলে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।
উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদার এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানায় ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি এবং মাদক সংক্রান্ত ০৩ টি মামলা পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ মে -২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here