গোলাম রাব্বানী :
গতকাল সন্ধ্যায় নাটোর সদর উপজেলার রুয়েরভাগ গ্রামের একটি আমবাগান থেকে অর্ধগলিত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। লাশটি একই উপজেলার আমহাটি গ্রামের মো.রুপিজ উদ্দিনের ছেলে রুবেল উদ্দিনের (৩৩)।
নিহত রুবেল উদ্দিন গত বছরের নভেম্বরে নিখোঁজ হলে সেসময় তার বাবা সদর থানায় একটি জিডি করেছিলেন। পরবর্তীতে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় মুক্তিপণ দাবি করলে থানায় মামলা দায়ের করেন রুবেলের বাবা। সেসময়, বিভিন্ন চেষ্টায়ও রুবেলকে খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ।
তবে এই মামলার মোর ঘুরে যায় ঢাকার দক্ষিণখান থানার একটি মামলার ঘটনায়। জানা যায় গতবছরের ২৩ ডিসেম্বরে আশকোনার মেডিকেল রোড থেকে আমির হোসেন নামে এক যুবক নিখোঁজ হন। পরে আমির হোসেনের মোবাইল নম্বর থেকে তাঁর বোনের নম্বরে অপহরণকারীরা ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই বিল্লাল প্রথমে একটি জিডি এবং পরে গত ১৩ এপ্রিল দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করেন।
ওই মামলায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া মাইজদী এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার সমকামিতার ফাঁদে ফেলে মুক্তিপণ আদায় চক্রের মূল দুই হোতা তারেক আহমেদ ওরফে তারেক হাসান (৩৫) ও মো. হৃদয় আলীকে (২৫) গ্রেপ্তার হয়। অভিযুক্ত হদয় হোসেনের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর বাজার এলাকায় এবং তারেক হাসান বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার রুয়েরভাগ এলাকায়। এছাড়াও ঢাকার আশপাশ থেকে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার তারেক ও হৃদয়ের দেওয়া তথ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের দারোগার চালা এলাকার একটি পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংক থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় আমিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত মূল আসামি তারেক ও হৃদয়ের চার দিন ও বাকি তিনজনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মূল হোতা তারেক ও হৃদয় নাটোরের রুবেল উদ্দিন অপহরণ মামলার চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর সমকামিতার কথা বলে রুবেলকে তাঁর বাসায় ডেকে নিয়ে আসে তারেক। পরে গভীর রাতে তাঁকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা। তারপর গভীর রাতে রুবেলের মরদেহ বাড়ির পাশের একটি বাগানে গর্ত করে পুতে রাখা হয়।
এই তথ্যের ভিত্তিতে ৬ মাস পরে গতকাল সন্ধ্যায় নাটোরের রুয়েরভাগে তারেকের বাড়ির পাশের আম বাগান থেকে রুবেল উদ্দিনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
এ বিষয়ে নাটোর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে করা একটি অপহরণের মামলা ডিবি তদন্ত করছিল। পরে ডিএমপি’র দক্ষিণখান থানা-পুলিশের সহযোগিতায় ভিকটিম রুবেলের মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। মরদ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাকি আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আ.প্র // খ.র