এরশাদ আলী, লংগদু
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলায় মোটর সাইকেল চালক ও লংগদু সদর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার ছয় বছরেও বিচার পায়নি নূরুল ইসলাম নয়নের পরিবার। ২০১৭ সালের ১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা রোডের চার মাইল নামক স্থানে নূরুল ইসলাম নয়নকে নির্মম ভাবে হত্যা করে তার ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায় উপজাতীয় পাহাড়ি একদল সন্ত্রাসীরা। ঐদিন দুপুরে খাগড়াছড়ির কোন একজন ফেইসবুক পেইজে নযনের পড়ে থাকা দেহের ছবি পোস্ট করলে তাৎক্ষণিক লংগদু উপজেলা থেকে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি যান নয়নের ছোট্ট ভাই মোঃ দ্বীন ইসলাম লিটন সহ সঙ্গীয়রা। সন্ধ্যায় যখন নয়নের মরদেহ বাইট্টাপাড়া তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে তখন এলাকায় এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। এলাকার বাঙালি জনগোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সর্তক অবস্থানের কারনে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরের দিন ২ জুন নয়নে লাশ জানাযার জন্য লংগদু উপজেলা পরিষদ মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। বাঙালিরা যখন শোকে কাতর হয়ে নয়নের শেষ জানাযার নামাজ পড়তে ব্যস্ত ঠিক তখনই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে উপজাতি পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। যার প্রমাণ মিলেছে উপজাতি এক প্রবাসী ঘটনার প্রায় ১ ঘন্টার আগে তার ফেসবুক পেইজে লংগদুতে আগুন লাগার ঘটনা পোস্ট করেছে এবং যে ছবিটি দেয়া হয়েছিল সেটি ছিল শহরের কোথাও আগুন লাগার ছবি। যাহা লংগদুতে সংঘটিত আগুনের ছবি ছিলোনা, সেই ছবিতে ল্যাম্পপোস্ট দেখা গেছে, অথচ লংগদু উপজেলায় কোন ল্যাম্পপোস্ট ছিল না। তাই প্রশ্ন থেকে যায় ঘটনার আগেই সেই প্রবাসী কিভাবে আগুন লাগার ঘটনা জানতে পারল ? এঘটনার পর বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি, কর্মকর্তারা এসে অগ্নিকান্ড এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে উপজাতীয়দের পুড়ে যাওয়া ভাঙ্গাঁ ছনের বা টিনের ঘরগুলোকে (এমনকি শুকরের ঘর গুলো সহ) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর আওয়তায় প্রত্যেককে তিন কক্ষ বিশিষ্ট বাথরুম সহ আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পরিবার গুলো বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার মাধ্যমে ব্যাপক সাহায্য সহযোগিতা পেলেও কিছুই পায়নি স্বামী হারা নয়নের পরিবার জাহরা খাতুন। কেউ কথা রাখেনি নয়নের পরিবারের সাথে। নয়নের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে নয়নের বউ বলেন আমার স্বামীকে মারার পর সংসার চালানো আমার পক্ষে অনেক কষ্ট হয়। অনেক এমপি, মন্ত্রী এসে অনেকে অনেক কিছু করে দেওয়ার কথা বললেও কেউ কথা রাখেনি, তখন বলেছিল আমার ছেলে উপযুক্ত হলে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু কই কেউতো এখন খোঁজ খবর রাখেনা। আমি এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব। যাওয়া জায়গা নাই বলার জায়গাও নাই। অপর দিকে ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শত শত নিরীহ বাঙালিদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। যে মামলায় এখনও নিরীহ বাঙ্গালিরা নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন।নয়ন হত্যার ঘটনার পরে জুনেন চাকমা ও রুনেল চাকমা নামে দু’জনকে প্রশাসন গ্রেফতার করতে সক্ষম হন এবং তাদের তথ্য মতে নয়নের মোটর সাইকেলটি খাগড়াছড়ি মহালছড়ি উপজেলার মাইনী নদী থেকে উদ্ধার করেন।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি