মোহাম্মদ জুবাইর:
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম চন্দনাইশ উপজেলার জাফরাবাদে একটি চক্র বিরোধপূর্ণ জমি দখলের চেষ্টা করছে। স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু চক্রের যোগসাজশে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি দখলের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। জমির মালিক মোঃ আবদুল কাইয়ুমের অভিযোগ, চট্টগ্রাম চন্দনাইশ উপজেলার জাফরাবাদ মৌজার আর.এস ৫১২ নং খতিয়ানের অধীনে ৬০৩ নং খতিয়ানভুক্ত আর.এস ৩৮৭৯, ২০২৭, ৩৮৭৩ ও ৩৮৭৮ দাগে এবং বি.এস ৮৬০/৩৫৬ এর খতিয়ানভুক্ত ৪১৪৭, ৪১৬৯, ২০৫০ এবং ৪১৬৮ নং দাগের সর্বমোট ৯৯ শতক হতে দিয়ারা ৭০৮৩ দাগে ৩৬.২০ শতক বিরোধীয়। এই জমি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে মামলা চলছে। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় জাফরাবাদ এলাকার সেকান্দার আলম(৪২) এর নেতৃত্বে বিরোধপূর্ণ জমি দখলের চেষ্টা করেন। সেকান্দার আলম এবং তার লোকজন যাতে এই বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে না পারেন সেজন্য মোঃ আবদুল কাইয়ুমের ছোট ভাই মোঃ সফিক আহম্মদ প্রার্থীক হয়ে ২০২১ সালের ২১ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। এরপর আদালত বিরোধপূর্ণ জমির দখল বিষয়ে চট্টগ্রাম চন্দনাইশ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দখল বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখর জন্য চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জকে নিদের্শ দেন। আদালতের নিদের্শের পরও সেকান্দর আলম ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা গত বছরের ৭ জুলাই জমিদখলের চেষ্টা করেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সেদিন চন্দনাইশ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ার সাহেব তপশীলোক্ত জায়গায় উপস্থিত হলে তাদের সামনেই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাদী পক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর মোঃ আবদুল কাইয়ুম ১৪ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে চন্দনাইশ থানায় একটি মামলা করেন। যার মামলা নং ১৭। তিনি অভিযোগ করেন, মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সেকান্দর আলম স্থানীয় প্রভাবশালী একটি ভূমিদস্যু চক্রের সহায়তায় তাদের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। তার এজাহারে উল্লেখ মতে ভূমি দস্যুরা হলেন, সেকান্দর আলম (৪২) পিতা- মৃত সবদর আহমদ চৌধুরী, মোঃ ইউছুপ মিয়া (৩৮) পিতা- মৃত আছহাব মিয়া, মোঃ ইউনুছ মিয়া (৪০) পিতা- মৃত আছহাব মিয়া, মোজাম্মেল হক (৩৫) পিতা- আহমদ ছফা এবং ফয়েজ আহমদ (৪৮) পিতা-মৃত ইউসুফ মিয়া। এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে চুরির অভিযোগও। জানা যায়, জমি দখল করতে এসে পকেটে থাকা নগদ ৮৫ হাজার টাকা ও একটি ঘড়ি ছিনতাই করেন তারা। আব্দুল কাইয়ুমের অভিযোগ এখানেই শেষ নয়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আরো একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন তাদের বিরুদ্ধে। এতে আগের পাঁচজন ছাড়াও যুক্ত হয়েছে নতুন দুজনের নাম। তারা হলেন- সাম্প্রতিক চাকুরী থেকে বরখাস্ত মোঃ ইদ্রিচ (৩২) ও মৃত আঃ সালাম এর ছেলে আবুল কালাম। এত উল্লেখ করা হয়, বাড়ির সবাই শহরে বসবাস করার কারণে উল্লেখিত সন্ত্রাসগণ সঙ্ঘবদ্ধভাবে তাদের জায়গা জমি দখল করে নিচ্ছে। তাদের পূর্বপুরুষদের স্থাপিত মসজিদের দান বাক্সের টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। চার বছর ধরে পুকুরের প্রকৃত মালিকদের মাছ ধরতে দিচ্ছে না এই অপরাধচক্র। এতে আব্দুল কাইয়ুম পুলিশের সহযোগিতা চান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেবল আবদুল কাইয়ুমের নয়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতে মামলা জমা পড়েছে আরও অনেকের। তাদের সকলের দাবিই যেন এক ও অভিন্ন। নিজের শেষ ভূমিটুকু রক্ষার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন সবাই। তেমনই একজন হলেন, সাবেক ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদ (৬০)। তিনিও আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। এই ৮ জনের চক্রটি তার কাছে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করলে তিনিও নিরুপায় হয়ে অন্যান্যদের মতো আদালতের আশ্রয় নেন। অতিরিক্ত জেলা হাকিমের আদালত (দক্ষিণ) চট্টগ্রামে আরও একটি মামলা করেন আরেক ভুক্তভোগী তালাত মাহমুদ চৌধুরী নামের এক ব্যাক্তি। ভুক্তভোগীর সংখ্যা এখানেই শেষ নয়। রয়েছে আরও শতাধিক ভুক্তভোগী। তার অন্যতম রেজাউল করিম টিপু। যাকে ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর চাঁদার দাবিতে তার নিজ বাড়িতে এসে হত্যার হুমকি প্রদান করে। এতে তিনি চন্দনাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়রী নং ৮২০। তারিখ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১। সামঞ্জস্যপূর্ণ অপর একটি ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে চন্দনাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন আবুল শরীফ। ডায়রী নং ৮৬৪। ১৩ আগস্ট ২০২২ সালে ১০ জনকে আসামি করে চন্দনাইশ থানায় মামলা করেছেন রওশনা আক্তার। যার এফআইআর নং-১৫/১৯৬। অভিযোগে জানা আরো জানা যায় সাম্প্রতিক সময়ে মোঃ আবুল কালাম নামের এক ব্যবসায়ী তাদের চাঁদা না দেওয়ায় তার মুদির দোকান দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় বিরোধীদলীয় নেতা নওশা মিয়ার পালিত সন্ত্রাসীরা। বিরোধীদলীয় এই নেতা টাকা যোগানের ব্যাংক হলেও সন্ত্রাসীদের মূল হোতা মোঃ ইদ্রিস,মোঃ ইউসুফ, সেকান্দর আলম মোজাম্মেল হক, মোঃ রহিম ও বকসু মিয়ার সন্তান আবদুর রহমানসহ ওরা ছয়জনের সিন্ডিকেট।
চন্দনাইশে এক ভয়াবহ আতংকের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে দশ সদস্যের এই অপরাধীচক্রটি। যাদের কোনো দৃশ্যমান কর্ম নেই কিন্তু উচ্চ বিলাসী জীবন-যাপন আছে। কার জমি কখন দখল করা যায়, চাঁদা আদায় করে কিভাবে বিলাসী জীবন উপভোগ করা যায়-সবই তাদের নিত্যদিনের পরিকল্পনা। আর এমন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রতিনিয়ত কাঁদাচ্ছে সাধারন মানুষকে। নিজের বাপ দাদার ভিটে,বাড়ি হারিয়ে মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব। তবুও থেমে নেই তারা। পুলিশ দেখলেই দখলদারিত্ব বন্ধ,যেন ওরা সাধু,ভদ্র মানুষ। পুলিশ যাওয়ার পরপরই-ই আবারো বেপরোয়া হয়ে দখলদারিত্বে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওরা। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর দাবি, অনতি বিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। নয়তো জীবন ও সম্পদ দুটোই হারাতে হবে।এমন শঙ্কায় আমরা অসহায়, নিরাপত্তা হীনতায় বোধ করছি।আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। নিজেদের মৌলিক অধিকারটুকু ফেরত চাই। জানা যায়, রাতের আঁধারে চুরি করে আবুল শরীফ বেলালের জায়গায় ওয়াল তৈরি করেছেন তারা।সাবেক বৈলতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার মোস্তফা চৌধুরী দুলালের জমি দখলেরও হুমকি দিয়েছেন।
এই বিষয়ে চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন সম্পর্কে কাইয়ুম ও সেকান্দর আলম আত্মীয়, বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ এবং কোর্টে মামলা হলেও প্রশাসন সরেজমিনে তদন্ত করে বিভিন্ন মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছেন এই সব জায়গায় জমি সংক্রান্ত মামলায় থানা প্রশাসনের এককভাবে কোন কিছু করার বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। চন্দনাইশ ৬ নং বৈলতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সাইমকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে ও ব্যাক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে এই বিষয়ে জানতে চেয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ০৩ জুন -২০২৩/মওম