ঢাকাসহ দেশের ৪ স্থানে গরমে অসুস্থ ৩২ শিক্ষার্থী

0
192

অনলাইন ডেস্ক:

তীব্র দাবদাহে ঢাকাসহ দেশের ৪ স্থানে গরমে অসুস্থ ৩২ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ ছাত্রী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় ২২ শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির ২ শিক্ষার্থী ও নোয়াখালীর চাটখিলে প্রচণ্ড গরমে ২ শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দাবদাহে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। প্রচণ্ড এই গরমে হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগ হতে পারে। এ সময় নিরাপদ থাকা জরুরি।

রাজধানী: রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৭ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত  সময়ে অসুস্থ হওয়াদের পার্শ্ববর্তী মনোয়ারা হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, তীব্র গরমে একাদশ শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী গরমে ক্লাসরুমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাই। পাঁচ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি মিরপুর। সে হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার সঙ্গে তার মা-বাবাও আছেন। চলমান তীব্র গরমে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় উদ্ভূত এমন পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী।

কুমিল্লা: কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর সুবল-আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের মধ্যে চারজন দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। শিক্ষার্থীদের অসুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিনুল ইসলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বুধবার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ছিল। ওই সময় বিভিন্ন কক্ষের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তাদেরকে দ্রুত দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, চারজন শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যরাও ভয় ও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবাইকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। হাসপাতালে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর মোহাম্মদ আলী সুমনসহ অনেকে। গত মঙ্গলবার একই স্কুলের শিক্ষার্থী হাবিবা অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তার চোখ মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। যে কারণে অনেকেই ধারণা করেছেন হিট স্ট্রোকে হাবিবার মৃত্যু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ময়নাতদন্তের পর হাবিবার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে পরীক্ষা চলাকালীন গরমে অসুস্থ হয়ে দুই শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বুধবার (৭ জুন) দুপুরে উপজেলার উত্তর রাবাইতারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা হলো মো. হাসান আলী ও মোছা. হেলেনা। তাদের দুজনের বাড়ি উত্তর রাবাইতারির বটতলা গ্রামে। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সফিকুল ইসলাম সফিক জানান, সকালে নবম শ্রেণির ইংরেজি পরীক্ষা চলছিল। এসময় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে ওই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে হেলেনা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় তাকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণ পর ওই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী হাসান আলী পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকেও স্বজনরা নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মোহাম্মদ ইফতেখার উল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি পরীক্ষার চাপ থাকায় মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজ রাখছি।
চাটখিল: নোয়াখালীর চাটখিলে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দুই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়েছে। গুরুতর অবস্থায় তাদের চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের দুজনের একজন হলো উপজেলার ভীমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর ছাত্রী, অপরজন একই স্কুলের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ভীমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে স্কুলে মধ্য বার্ষিক পরীক্ষা দিতে আসেন ওই দুই শিক্ষার্থী। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নবম ও দশম উভয় শ্রেণীতেই বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। তারা দুজনই পরীক্ষা চলাকালে সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। তিনি আরও জানান, পরীক্ষা শেষে বাড়ি যাবার সময় আনুমানিক দেড়টার দিকে তারা তীব্র গরমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায় সহপাঠীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি দিয়ে দেন। স্কুল থেকে তাদের দেখাশোনার জন্য দুজন শিক্ষককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তবে দুজনই আগে থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিল এবং একাধিকবার চিকিৎসাও নিয়েছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে ওই দুই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়েছে বলে জানান চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত।’

এদিকে প্রচণ্ড গরমের তীব্রতায় বাড়ছে বিভিন্ন রোগবালাই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর, চর্মরোগ, কাশি, মাথা ব্যথা ও টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আয়শা আক্তার বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যখন বাইরের তাপমাত্রা মানুষের শরীরে চেয়ে বেশি মনে হবে এবং বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকবে তখন একটু পর পর বেশি বেশি তরল খাবার ও পানি খেতে হবে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, যারা বাইরে কাজ করেন তাদের বাইরের খাবার কম খেতে হবে। বিশেষ করে এই গরমে খাবারের দিকে একটু বেশি নজর নিতে হবে। গরমে মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ায় বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বেশি বেশি বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৭ জুন ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here