হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রঃ) মাজার : খাদেমদের অভিনব প্রতারণা

0
813

এম. জসিম উদ্দিন:

বার আউলিয়ার অন্যতম অলি হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া ( রঃ) সূদুর আরব থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য আনোয়ারায় আগমন করেন। এ সময়ে আরব দেশ থেকে আসা মুসলিম সুফিসাধকরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। শাহ মোহছেন আউলিয়া প্রথমেই অবস্থান করেন গহিরার বার আউলিয়া গ্রামের কড়িরহাট (সমুদ্রে বিলীন) নামক স্থানে। বার আউলিয়ায় কিছুদিন অবস্থান করে তিনি চলে আসেন দেয়াঙ তথা আজকের ঝিউরি গ্রামে। হুজরা শরীফ নির্মান করে তিনি ঝিউরি গ্রামেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ১৩৯৮ সালে তিনি ঝিউরি গ্রামে ইন্তেকাল করেন। ঝিউরি গ্রামেই নির্মিত হয় তার প্রথম মাজার। খরগ্রোতা শঙ্খ নদীর ভাংগনে মাজারটিও নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়। নদীর ভাংগনে স্থানীয়রা কফিন দেখতে পায়। শাহ্ মোহছেন আউলিয়া শোলকাটার জমিদার মনুমিয়া এবং বড়উঠানের জমিদার ফতে খাঁ’কে স্বপ্ন দেখান যে, কফিনটি নিকটবর্তী কোন পাহাড়ের উলুবন নামক স্থানে সরিয়ে নিতে। বারবার স্বপ্নে উপদেশ দেয়ার পরেও তাতে তারা কর্নপাত করেননি। পূনরায় স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী বাসিন্দাদেরকে উপদেশ দেন। স্থানীয়রা বটতলী গ্রামে উলুবন নামক স্থানে তিনটি শাখাসম্বলিত বটগাছ তলায় মোহছেন আউলিয়ার কফিনটি সমাহিত করেন। নির্মান করলেন ছোট্ট পরিসরে একটি মাজার। মোঘল সুবেদার ফিরোজ শাহ্ নিজ উদ্যোগে মোহছেন আউলিয়ার প্রথম মাজারের স্মৃতি রক্ষার্থে ঝিউরি গ্রামে অবস্থানরত মুসল্লীদের নামায আদায়ের সুবিধার্থে একটি পাকা মসজিদ নির্মান করেন। বর্তমানে বটতলী গ্রামে শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার মাজারের অভ্যান্তরে বাক্সবন্দি পাথরখন্ডটি ঐ মসজিদরই পাথরখন্ড শিলালিপি। সেটি আরবি, ফার্সি এবং উর্দু ভাষায় লেখা। মাজার পরিচর্যায় নিয়োজিত খাদেমেরা পাথরটিকে মোহছেন আউলিয়াকে বহনকারী পাথরের নৌকা বলে চালিয়ে দিচ্ছে যুগযুগ ধরে। ফলে জনমনে বিশ্বাস, অবিশ্বাস, সন্দেহ দিনদিন বেড়েই চলেছে। সন্দেহ বাড়ছে ভক্তদের মাঝে। খাদেমেরা প্রতিদিন মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে বালতি ভর্তি পানি টপের নিচে রাখে, ভোরবেলায় প্রচার করে সারারাতব্যাপী পাথরটি ঘামতে ঘামতে বালতি ভর্তি হইয়েছে। ঐ পাথরের ধৌত পানি ভক্তদের মাঝে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে খাদেমের দল। তিন গায়েবি বংশধর আবিস্কার করে পদবি নিয়েও মুহূর্তে মুহূর্তে লুকোচুরি খেলা : শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার রওজা শরীফের পূর্বপাশের কক্ষের রওজাশরীফ দুইটি ছিল মোহছেন আউলিয়ার কন্যা- নুরজাহান বেগম প্রকাশ নির্ঘন বিবি ও নির্ঘন বিবির স্বামী শাহ্ সেকান্দরের। দু”জনের নামে একটি নেমপ্লেটও ছিলো। তিন বছর আগে খাদেমের দল নেমপ্লেটটি লুকিয়ে রেখে সেখানে গায়েবি তিনজনের নাম স্থাপন করে। এই তিনজন হলেন খাদেমদের ভাষায় শেখ কুতুব, শেখ মনছুর ও শেখ ইব্রাহিম। এক বছর পরে তিনজনের নামের আগে ‘শেখ’ বাদ দিয়ে নামের আগে সংযুক্ত করেছেন ‘শাহ্’। মনছুর, কুতুব ও ইব্রাহিম এ তিন ব্যক্তি শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার বংশধর নয়। জনশ্রুতিমতে ১৫০ বছর আগে মনছুর, কুতুব ও ইব্রাহিম ছিলেন বটতলী গ্রামের উদ্বাস্তু। তৎকালীন সময়ে এ তিন ব্যক্তি অত্র মাজারের খাদেম ছিলেন। খাদেমদের দাবী এ তিনজন মোহছেন আউলিয়ার ভাগিনা। ভাগিনাদের ওয়ারিস সূত্রে মাজার পরিচর্যায় নিয়োজিত খাদেমরাও মোহছেন আউলিয়ার বংশধর। খাদেমেদের লুকোচুরির শেষ নাই। শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার রওজার পার্শ্বে রাতের আঁধারে কোন একসময় একটি রওজা নির্মান করে সেখানে নির্ঘন বিবি ও শাহ্ সেকান্দারের নামে একটি নেমপ্লেট ঝুলিয়ে রেখেছে। কথিত খাদেমদের এসব অনৈতিক এবং শরীয়তবিরোধী নেক্কারজনক সব অপকর্মের প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আনোয়ারার সেক্রেটারি মো. সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আনোয়ারা তথা বটতলী এলাকায় শাহ মোহছেন আউলিয়ার কোন বংশধর নাই। তারা বলেন, বাক্সবন্দি ছোট কালো পাথরটি কিসের পাথর, সঠিক তথ্যটি আমাদের জানা নাই। তবে লোকমুখে সবসময় শুনতে পাই পাথরটি মোহছেন আউলিয়াকে বহনকারী কিস্তি পাথর। নিচে বাক্সবন্দি পাথরের শিলালিপিটি মাজারে আগত অন্ধবিশ্বাসী ধর্মান্ধরা চুমু খেতে খেতে ক্ষয় করে ফেলেছে। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের ৬ তারিখ মাজার এলাকায় এই সুফি সাধকের বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০৭ জুন -২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here