লোডশেডিংয়ের কষ্ট কবে কমবে ?

0
217

অনলাইন ডেস্ক:

তীব্র গরমের পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সারা দেশের জনজীবন। রাজধানী ঢাকাতেই দিনে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। গরমে মানুষের কষ্টের পাশাপাশি শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে কবে উত্তরণ ঘটবে তার সুনির্দিষ্ট আভাস নেই। তবে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যে পরিষ্কার, এই জুন মাসে অন্তত নিস্তার নেই লোডশেডিংয়ের আপদ থেকে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য মতে, ৬ জুন দুপুর ১২টায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে উৎপাদন করা হয়েছে ১২ হাজার ১৬৬ মেগাওয়াট। লোডশেড করা হয়েছে মোট ২৬১০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। পিজিসিবি ও পিডিবি দুই সংস্থার তথ্য মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদার তথ্য পাওয়া গেলেও বাস্তবে চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র। অর্থাৎ বাস্তবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি সামলাতে সম্প্রতি বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংকট মেটাতে দেশি-বিদেশি কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি বিদ্যুৎ কেনা হবে। বর্তমানে ভারতের আদানি গ্রুপ ৭৫০ থেকে ৯৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। এখন সরকার আদানির কাছ থেকে ১০৫০ মেগাওয়াট নিতে চাইছে। রামপাল কেন্দ্র এখন ৩২০ থেকে ৩৭০ মেগাওয়াট দিচ্ছে। তা বাড়িয়ে ৬১২ মেগাওয়াট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, টঙ্গী, ভেড়ামারা, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন প্লান্টে ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের জন্য বর্তমানে দৈনিক ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। এর পরিমাণ বাড়াতে গেলে শিল্পে সরবরাহ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্যাস, কয়লা ছাড়াও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিভিন্ন কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধির কথাও ভাবছে সরকার। ইতোমধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আবারও উৎপাদন শুরু করা হয়েছে।

উৎপাদন ক্ষমতার ৪৫ শতাংশ অব্যবহৃত: এদিকে দেশজুড়ে লাগামছাড়া লোডশেডিং চললেও দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪৫ শতাংশ এখনও অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। বর্তমানে আমদানিসহ চালু থাকা ১৪৯টি কেন্দ্রের দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ রয়েছে চারটি কেন্দ্র, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা আরও ৩০৯ মেগাওয়াট।

কবে কাটবে লোডশেডিং? পিডিবিসহ খাত সংশ্লিষ্টরা লোডশেডিংয়ের মূল কারণ হিসেবে উপস্থাপন করছেন ডলার সংকটের কারণে কয়লা সংকট ও তাপপ্রবাহে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধিকে। কয়লা সংকটে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটো ইউনিট ২৫ মে ও ৫ জুন বন্ধ হয়ে যায়। ইউনিট দুটো চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা সংস্থানের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। তবে সে কয়লা এসে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে সময় লাগবে ২৫ দিন। সেক্ষেত্রে জুন মাস জুড়েই লোডশেডিং বজায় থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, আমাদের এখন কিছু ঘাটতি আছে, ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ধৈর্য ধরার আহ্বান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর: চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছে জাতীয় সংসদেও। গত (মঙ্গলবার) বিদ্যুৎ, জ্বালারি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংসদে বলেছেন, আমরা মনে করি ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে বিদ্যুতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আপনারা সকলে একটু ধৈর্য ধরুন। বিশ্বের দিকে ও নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে যদি আমরা ধৈর্য ধরি, তাহলে যে সমস্যাটা দেখতে পাচ্ছি সেটা পার হতে পারব। আরেক সংসদ সদস্য বলছেন আমরা প্রচার করছি না। কিন্তু আমি বারবার আসছি, প্রচার করছি। ওয়েবসাইটে দিয়েছি, বিজ্ঞাপন প্রচার করছি। আমরা কষ্টটা সকলের সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছি। সকলকে জানিয়েছি কোথায়, কীভাবে হবে এবং মিডিয়াতে বলা হয়েছে বারবার। লোডশেডটা বেশিদিন থাকবে না। এর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৮ জুন ২৩ / এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here