বীরগঞ্জে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লিচু

0
216

অনিক ঘোষ:

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এবার উৎপাদন কম হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমি ফল লিচু। প্রচণ্ড রোদ – দাবদাহ, দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টি এবং রোগ-বালাইয়ের কারণে চাহিদা অনুযায়ী লিচুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরজমিনে আড়ৎতে গিয়ে দেখা যায়, দাম শুনেই লিচু না কিনে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে!

ফলের বাজার থেকে শুরু করে হাট-বাজার, ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে এমনকি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝুড়িতে করে বিক্রি করা হচ্ছে ফলটি। কয়েকদিনের তুলনায় বাজারগুলোতে মৌসুমি ফল লিচুর আমদানি বেড়েছে। কিন্তু বাজারে প্রচুর পরিমাণে লিচুর সরবরাহ থাকলেও দাম এখনও অনেকটাই বেশি। অনেকেই শুধু দাম শুনে লিচু না কিনে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এবারে লিচু দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। বিক্রিও আশানুরূপ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। একদিন বিক্রি বাড়লে, আরেকদিন খুবই কম বিক্রি হয়। এভাবেই চলছে লিচুর বাজার। দাম বেশি থাকায় ক্রেতারাও পরিমাণে কম কিনছেন বলে জানা গেছে। লিচু ক্রেতারা জানান, লিচু এখন সৌখিন ফলে পরিণত হয়েছে। ১০০টি লিচু ৩২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতো দাম দিয়ে এই লিচু একবারের জায়গায় দুইবার আর কেনা হয় না। বীরগঞ্জ পৌরশহরের তাজ মহল সিনেমা হলের সামনে এবং বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লিচুর দোকানে বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক। ৫০ টি লিচুর একেকটি আঁটি করা আছে। ১০০টি লিচু (প্রকার ভেদে) ২৫০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু বড় সাইজের লিচু ৪০০ টাকা প্রতি ১০০টি এবং অন্যান্যগুলো ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা হাশেম আলীও সুরুজ আলী জানান, স্থানভেদে বিক্রি কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে বিক্রির পরিমাণ খুব যে বেশি তা নয়। কোনো কোনো দিন বিক্রি খুবই কম হয়। এবছর প্রচণ্ড রোদের কারণে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাগানে গরমে ঝলসে যাচ্ছে লিচু, বিপাকে ব্যবসায়ীরা। সেক্ষেত্রে লোকসান দিয়েও লিচু বিক্রি করতে হয়। ২৫০ টাকার মধ্যে লিচু বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। ৩০০ বেশি দামের লিচু ক্রেতারা কিনতে চান না। তাছাড়া ৫০ পিচের আঁটি বেশি বিক্রি হয়। তাজমহল সিনেমা হলের সামনে লিচু বিক্রেতা মো.লিয়ন শেখ বলেন, সপ্তাহের তিন-চার দিন ভালো বিক্রি হয়। তখন দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার লিচু বিক্রি হয়। আবার অন্যান্য দিন ৪-৫ হাজার বিক্রি করতেই কষ্ট হয়ে যায়। এ বছর লিচুর দাম একটু বেশি। তারপরে আবার গতবারের তুলনায় এ বছর বিক্রির পরিমাণ কম। এবারে লিচু কম বিক্রি হচ্ছে। শুধু দরদাম করেই অনেকে চলে যাচ্ছেন। মাদ্রাজি লিচু প্রতি একশো বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, হারিয়া লিচু ৪০০ থেকে ৪৫০, একশো বেদানা লিচু ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে উঠেছে চায়না ৩ লিচুও যা একশো বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০৫০ টাকা পর্যন্ত। লিচু কিনতে আসা কবিরাজহাট এলাকার সাদেকুল ইসলাম সাদেক বলেন, একটু ভালো মানের ১০০টি লিচু ৩০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর একটু ছোট সাইজেরগুলো ২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দাম আরেকটু কম হলে মাঝে মধ্যে কেনা যেতো। এতো দাম দিয়ে লিচু কেনা হয়ে উঠে না। আরেক ক্রেতা বিপ্লব বলেন, ৫০টি লিচু কিনেছি ১৫০ টাকা দিয়ে। এর বেশি কিনতে গেলে বাজেট পার হয়ে যায়। লিচুর দাম বেশি। এ জন্য লিচু খুব একটা কেনা হয় না। এদিকে লিচুর পাশাপাশি বাজারে আম উঠতে শুরু করেছে। জাত ভেদে আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১২০ টাকা কেজি পর্যন্ত। আম বিক্রির পরিমাণ বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরও ভালো আম বাজারে চলে আসবে বলেও জানান তারা। দেশীয় ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল আর লিচুর মৌসুম এখন। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ ফলের মধ্যে লিচুর দাম অনেকটাই বেশি নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছে। এরপরও পরিবার-পরিজনের জন্য সামর্থ অনুযায়ী মৌসুমি এ ফলটি কিনছেন অনেকে। তবে এর তুলনায় আম-কাঁঠালের দাম কম হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় বলে বাজারগুলো এসব ফলে ভরে গেছে। সেগুলোর দাম কিছুটা কম হওয়ায় এসব ফলের ক্রেতারাই বেশি। কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের বাগান মালিক মো.সাদেকুল হক মিলন জানান, অনাবৃষ্টি আর চলমান দাবদাহের প্রবাহে অতিরিক্ত গরম ও পশ্চিমা উষ্ণ বাতাসে ঝলসে যাচ্ছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার গাছের পাকা লিচু। লিচুর গায়ে পোড়া দাগ পড়ছে এবং ফেটে যাচ্ছে। অনাবৃষ্টির কারণে এবছর লিচুর আকার বা সাইজ ছোট হয়েছে। এ অবস্থায় গাছে লিচু রাখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বাজারেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন অনেক লিজ নেয়া বাগানি।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৯ জুন ২৩ / এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here