মোহাম্মদ জুবাইর:
চন্দনাইশে সক্রিয় কিশোর গ্যাংগুলো এখন রীতিমতো আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। চায়ের দোকান, বিভিন্ন সড়কে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক দলের সদস্য ঘোরাঘুরি করে। চায়ের দোকানগুলোয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আড্ডায় মেতে থাকে তারা। আর স্কুল-কলেজ ছুটির সময়ও এদের উৎপাতে অস্থির হয়ে ওঠেন সেখানে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আজকাল এই অপরাধীদের হাতে দেশের স্কুল-কলেজগামী কিশোরীরা শুধু লাঞ্ছিত, অপমানিত ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে না, একইসঙ্গে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের বিস্তার ঘটছে, যা সমাজের জন্য অশনিসংকেত। ক্ষেত্রবিশেষে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ও নিপীড়নের মাত্রা এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, ভুক্তভোগী অনেকে আত্মহননের পথেও পা বাড়ায়। চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী জাফরাবাদ গ্রামের মৃত মো. আছহাব মিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ (৪২) ও একই গ্রামের মৃত আহমদ ছফা’র ছেলে মোজাম্মেল হক (৩৮) এর নেতৃত্বে কিশোর অপরাধমূলক তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। ২০০৮ সালে ৪০০ টি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ পাহাড়তলী থানায় গ্রেফতায় হয় ইউসুফ। অবৈধ যৌন ওষুধ বিক্রি করতে না পেরেই কিশোর গ্যাংয়ের খাতায় নাম লেখান ইউসুফ ইউসুফ। বিষয়টি শুধু অভিভাবক শ্রেণি নয়, রাষ্ট্রের জন্যও দুর্ভাবনার। যারা কিশোর বয়সে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, তারা যে একদিন শীর্ষ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাবে না, তার নিশ্চয়তা কী? সমাজদেহে ব্যাপকভাবে এ ক্ষত বিস্তারের আগেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এ ব্যাধি রোধকল্পে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ইউসুফ একজন ভূমিদস্যু হিসেবে এলাকায় পরিচিত পেলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কিশোর গ্যাংদের লিডার। তার পালিত কিশোর গ্যাং মূলত চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে। এলাকায় তার নেতৃত্বে প্রতিদিন রাত দুইটা পর্যন্ত চলে কিশোর গ্যাংদের আড্ডা। এই আড্ডাতেই পরিকল্পনা করা হয় পরের দিনের কর্মসূচি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষকে মারধর ও ভূমি দখল করাই এখন তাদের নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো এমন কর্মকাণ্ডে গ্রেফতার হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার স্বাক্ষর জ্ঞান না থাকা থানার দালাল হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক তার পাশে দাঁড়িয়ে করেন পূর্ণ সহযোগিতা। এমনকি উৎসাহিত করেন অপরাধ কর্মকাণ্ডে। মূলত মোজাম্মেল হকের আইনি সহযোগিতায় কিশোর গ্যাং লিডার হয়ে ওঠেন যৌন ওষুধ বিক্রেতা ইউসুফ।
জানা যায় মোহাম্মদ ইউসুফ ও মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা ও অভিযোগ। ২০২১ সালে সাবেক ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে মামলার আসামি হন তারা। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পঞ্চম আদালত- যার মামলা নং ৪০৩/২০২১ (চন্দনাইশ থানা)। গত ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট অবৈধ যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রির দায়ে পাহাড়তলী থানায় মামলা হয় ইউসুফের বিরুদ্ধে। যার মামলা নং ২৭। এছাড়াও মো. ইউছুফ ২০১০ সালে ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দের হাত কাটায় ৩২৬ ধারায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছিল। যার জি.আর মামলা নং-২৯(১)১২। তাদের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম রেঞ্জ এর ডিআইপি বরাবর দেওয়া হয় আরও একটি চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের অভিযোগ। গত বছরের ১৭ মে আব্দুল কাইয়ুম নামের এক প্রতিবেশীকে চট্টগ্রাম মোমিন রোড দৈনিক সকালের সময় পত্রিকা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে আসাসি হন আদালত ভবনের দালাল মোজাম্মেল হক। কোতোয়ালী থানায় যার মামলা নং- ৬৫/২০২২। তাদের বিরুদ্ধে চন্দনাইশ থানায় মামলা আছে চুরি চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলসহ ভয়ভীতি প্রদানের অপরাধে। যার এফআইআর নং-১৭/১৩৫, তারিখ:১৪/৬/২২। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর রেজাউল করিম টিপু বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় আরও একটি সাধারণ ডায়েরি করে। যারা ডায়েরি নয়-৮২০। দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাছ চুরিরও। আবদুল কাইয়ুম এর পুকুর থেকে মাছ চুরি করে বাজারে বিক্রি করেন বলেও জানা যায়।
আলোকিত প্রতিদিন / ১০ জুন ২৩/ এসবি