স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাদ পড়েছেন ত্যাগী নেতারা, চলছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল

0
252

বিশেষ প্রতিবেদক:

বিএনপির অন্যতম ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। রাজনীতিতে সক্রিয়, মামলা হামলার শিকার এমন নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে, ব্যক্তি স্বার্থ ও আঞ্চলিকতাকে প্রধান্য দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমনটাই অভিযোগ করছেন বিক্ষুব্ধ পদ বঞ্চিত নেতারা কর্মীরা। আরো অভিযোগ রয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে নেতারা অর্থের বিনিময়ে নিজেদের পকেট ভারী করে অযোগ্যদের স্থান দিয়েছেন। এমনকি সংগঠনের বিগত কমিটির ২৮০ জন নেতাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন স্বেচ্ছাচারিতায় কমিটির নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পরেছে। ইতোমধ্যে বিক্ষুব্ধ নেতারা দলটির হাইকমান্ড বরাবর স্বারকলিপির প্রদান করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে দলটি অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার
সম্ভাবনাও রয়েছে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

জানা যায়, বিগত কমিটির ১৯ জন কেন্দ্রীয় সহসভাপতির মধ্যে ১৮ জনকেই বাদ দিয়েছে বর্তমান নেতৃত্ব। অন্যান্য পদের ক্ষেত্রেও সাবেক নেতাদের বাদ দেওয়ার সংখ্যাই বেশি। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, সংগঠনের স্বার্থকে প্রধান্য না দিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং অন্য নেতারা কেবল আঞ্চলিকতাকে প্রধান্য দিয়ে ‘অযোগ্যদের’ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করেছেন। পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধরা আরো দাবি করছেন, কমিটিতে যাদের পদ দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হওয়ার কাঠামোর মধ্যেই পড়ে না। এতে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর, থানা কমিটির বিশেষ করে মহানগর  দক্ষিণের অনেক নেতাকে সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান নিজের এলাকা বরিশাল অঞ্চল থেকে ২১ জন যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে ১৬ জনকে পদায়ন করেন। নতুন কমিটির মধ্যে দেড় শতাধিক পদধারীর বাড়ি বরিশাল ও ফরিদপুর
এলাকায়; যা সুস্পষ্ট আঞ্চলিকতা হিসেবেই দেখছেন পদবঞ্চিতরা।

এদিকে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদধারী হয়েছেন, যারা অতীতে কখন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন না। অনেকে আদম ব্যাপারী, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, কেউবা ওয়ার্ড কমিটি, থানা কমিটির সদস্য ছিলেন। পদবঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতারা ঈদের পর কয়েক দফা বৈঠক করে সম্প্রতি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও অসাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রতিকার চেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগে দাবি করা হয়, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক,স সাংগাঠনিক নাজমুল হাসান ও সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াছিন আলী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কমিটি ভাগ- ভাটোয়ারা করে নেন। ঘোষিত ২১৩ সদস্যর কমিটির মধ্যে খোদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেরা ভাগ করে নিয়েছে ১৩৯ জন। সভাপতির ভাগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ দিয়েছে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও মহানগর দক্ষিণ থেকে। সাধারণ সম্পাদকের ভাগের পদ দেওয়া হয়েছে সবগুওলোই বরিশাল অঞ্চল থেকে। বাকি পদ ইয়াছিন আলী ও নাজমুল ভাগ করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে পদবঞ্চিত হুমায়ূন কবীর বলেন, নতুন কমিটিতে পদ পেতে আমাদের আগ্রহ নেই। আমরা শুধু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করে সংগঠনের কমিটি গঠনের অনিয়ম তুলে ধরতে চাই। কীভাবে অসাংগঠনিকভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা ওনাকে জানাতে চাই। তার এমন বক্তব্যে একমত পোষন করেছেন পদবঞ্চিত নেতা মির্জা ইয়াসীন আলী, এসএম সোলায়মান সোহেলসহ আরো কয়েকজন। পদবঞ্চিত গত কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিশু বলেন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিস্ক্রিয় কর্মীদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে সবাইকে রাখতে হবে, বিষয়টি এমনও নয়।
সংগঠনের বাদ পড়া সিনিয়ররা মূল দলে জায়গা পেতে পারেন; যারা বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে তারা কোথায় যাবেন? তিনি বলেন, নিজস্ব বলয়ের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে আমরা বিগত দিনে মামলা, হামলার শিকার হয়েছি, জেল-জুলুম খেটেছি, তাদের মধ্যে ৭০-৮০ জন নেতা নতুন কমিটিতে জায়গা পায়নি। প্রায় একই অভিযোগ করেন পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফ উদ্দিন রুবেল, মাহবুবুর রশীদ মাহবুব, সওগাতুল ইসলাম সগীর, মোস্তাফিজুর রহমান মনির, কাদের হালিমী, সহ- সাধারণ সম্পাদক মো. আকরাম হোসেন, মাহমুদুল বারী, রেজাউর রহমান বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু, জুলফিগার হোসেন জনি, অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, এইচ এম জাফর আলী, আবু জাফর বাদল,  প্রকাশনা সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক সাফায়েত হোসেন রিপন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মির্জা ইয়াছিন, অর্থ সম্পাদক মুসফিকুর রহমান লেনিন, সমবায় সম্পাদক মোশারফ হোসেন মশু, নাট্য সম্পাদক সোলায়মান সোহেল, প্রশিক্ষণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভূঁইয়া, সহ-পাঠাগার সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম মিল্টন, সহ- তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হারুণ অর রশিদ হিরন,  সহ- ধর্ম বিষযক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, মহ- মৎসজীবী সম্পাদক মমিনুল রহমান মালিতা, সহ- প্রশিক্ষণ ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক সম্পাদক ইসতিয়াক আহম্মেদ মানিক।

সহ-সাংগঠনিক সসম্পাদক বেলাল উদ্দিন আহম্মেদ, মুহাম্মদ শরীফ ফেরদৌস, আমিনুল ইসলাম লিপন, কাজী আনিছুর রহমান, আকরামুজ্জামান টোকন, আশ্রাফ উদ্দিন জনি, মো. শাহাবুদ্দিন সিকদার ডালিম, সালেহ আহম্মেদ কাঞ্চন, রবিউল ইসলাম পলাশ, খোরশেদ আলম পাটোয়ারি। সদস্য মাসুদুর রহমান, ওমর ফারুক, হেলাল উদ্দিন, অ্যাড. নূরে আলম দুলাল, জহিরুল ইসলাম জহির, খান রাজিব হোসেন রাজু।

তবে এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করেন, সক্রিয় নেতারাই নতুন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। কমিটিতে জায়গা না পেয়েই ক্ষুব্ধরা বিভিন্ন কথা বলছেন। ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে ২১৩ জনের নাম প্রকাশিত হলেও আরো পদ দেওয়ার সুযোগ আছে। যারা বাদ পড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আমলে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবেচনা করবেন। স্বেচ্ছাসেকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, সমালোচনা করার জন্য সমালোচনা করা যায়। সমালোচনাকে আমরা গুরুত্ব দেই না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তারা ফোরামে আলোচনা করে সুরাহা করতে পারে। ঘোষিত কমিটির বেশিরভাগ ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের  বঞ্চিতদের এ অভিযোগ সম্পর্কে নাজমুল বলেন, যারা সক্রিয়, যোগ্য তারা এক বা দুই জেলার হলে ক্ষতি কী? যোগ্যদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে ২১৩ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো অঞ্চলে যদি বেশি ত্যাগী নেতাকর্মী থাকে সংখ্যায় বেশি হলে দোষের কিছু নাই। কমিটিতে সাবেক ছাত্রদলের সাবেক নেতাদেরও স্থান দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবো। যদি ওই রকম কোনো ত্যাগী নেতা কমিটি থেকে বাদ পরে থাকে তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করবো।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১২ জুন ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here