মান হারাচ্ছে প্রকৌশল শিক্ষা, গবেষণায় জোর দিতে হবে

0
255

সম্পাদকীয়:

খবরটি আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। গতকাল একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, প্রকৌশল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে অনেক কোর্স খুলে বসেছে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে মান কমছে দেশের প্রকৌশল শিক্ষার। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠিত বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন (বিএইটিই) দেশের প্রকৌশল শিক্ষার মান নিয়ে কাজ করে এবং স্বীকৃতি সনদ দিয়ে থাকে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি ১৪২টি এবং একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬টি প্রকৌশলবিষয়ক কোর্সের অ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃতি) রয়েছে। ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রকৌশল কোর্স পরিচালনায় অ্যাক্রেডিটেশন পেয়েছে মাত্র ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল কোর্স পরিচালনায় মানের ঘাটতি আছে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব নেই। অথচ প্রকৌশল শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে উপযোগী ল্যাব, কোর্স পরিকল্পনা, সিলেবাস প্রণয়নসহ দক্ষ শিক্ষক থাকতে হয়। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যে অ্যাক্রেডিটেশনের আবেদনও করেনি, তার কারণ বোধ হয় এটাই। কয়েক বছর আগে ইকোনমিস্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা দেখলে সেটা আরো স্পষ্ট হয়। বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট মান নিশ্চিত ছাড়াই কোর্স পরিচালনা করছে। কেউ আর্থিক সংকটে, আবার কেউ বাড়তি মুনাফার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফল দাঁড়াচ্ছে এই যে মুখস্থবিদ্যায় উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট পেতে সহায়তা করছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) একাধিক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটলেও শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষা হয়ে পড়ছে সার্টিফিকেটমুখী। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের গবেষণায় অবহেলার কথাও অনেকে নানাভাবে বলছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান নির্ভর করে তার ল্যাবরেটরি সক্ষমতা এবং গবেষকদের গবেষণাকর্মের ওপর। পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে যদি আমরা নজর দিই, তাহলে দেখা যাবে হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের ল্যাবরেটরিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা ছাত্রদের স্কলারশিপের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানোন্নয়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধির চেয়ে একাডেমি এবং গবেষণার মানোন্নয়ন বেশি প্রয়োজন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক ও সময়োপযোগী করে ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি। জাতি হিসেবে আমাদের উন্নতি করতে হলে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতার বিকল্প নেই। এ জন্য আমাদের প্রকৌশলে দক্ষ জনবল লাগবে। আর সেটা করতে হলে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় আরো বেশি জোর দিতে হবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণায় জোর দিতে হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ জুন ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here