স্পোর্টস ডেস্ক:
দিনের শুরুতে আঘাত হানলেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি। পরপর দুই ওভারে উইকেট নিলেন শরিফুল ইসলাম। শেষ দিকে আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দিলেন তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশ পেল রেকর্ড গড়া জয়। ম্যাচ শেষে পেসারদের প্রশংসায় ভাসালেন লিটন দাস। একই সঙ্গে ভালো উইকেটে খেলার তাগিদও দিলেন ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক। মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসে বাংলাদেশের তিন পেসারের শিকার ১৪টি। কোনো টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড এটি। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেন ইবাদত। দ্বিতীয় ভাগে ৪ উইকেট নেন তাসকিন। আর শরিফুল পান মোট ৫টি উইকেট। শুধু উইকেট শিকারের দিক থেকেই নয়, সবুজ ঘাসের উইকেটে পেস বোলিংয়ের দারুণ প্রদর্শনী দেখান তাসকিন-ইবাদতরা। নিখুঁত লাইন-লেংথের সঙ্গে গতি ও বাউন্সের মিশেলে দুই ইনিংসেই সফরকারী ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নেন তারা। অথচ মিরপুরে টেস্ট মানেই এতদিন দেখা যেত স্পিনারদের দাপট। যে কারণে এই মাঠে ৩ বা ৪ জন স্পিনার নিয়েও খেলার নজির অনেক আছে বাংলাদেশের। এবার উইকেটের আচরণ বদলের কারণে বাড়ানো হয় পেসারের সংখ্যা। তারা প্রত্যেকেই ভালো করায় সন্তুষ্টি অধিনায়কের কণ্ঠে। রেকর্ড গড়া জয়ের পর দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকবার পেসারদের স্তুতি গাইলেন লিটন দাস। মিরপুরে আমরা সাধারণত তিন পেসার নিয়ে খেলি না। উইকেটের আচরণের কারণেই হয়তো খেলি না। যেহেতু এবারের উইকেটের আচরণটাই এমন ছিল যে, তিন পেসার নিয়ে খেলার মতো এবং উইকেটে পেসারদের জন্য যথেষ্ট সাহায্য ছিল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি অধিনায়ক হিসেবে খুব খুশি। আমার মনে হয়, আমাদের পেস ইউনিট দিন দিন উন্নতি করছে। পিচ ম্যাপ দেখলে অনেক কিছু বোঝা যায়। আগে আমাদের দুই-একজন ছাড়া তেমন বোলার ছিল না যারা একই জায়গায় টানা বল করতে পারত। এখন দেখেন আমরা কাভার-পয়েন্ট (ফিল্ডার) ছাড়া বল করি। শুধু এই উইকেট না, ফ্ল্যাট উইকেটেও করি। কারণ আমরা জানি আমাদের বোলাররা অনেক উন্নতি করছে। তাদের অনুশীলনের ধরন বদলেছে। পেসারদের উত্থানে প্রতিপক্ষের পাশাপাশি লিটনদেরও পড়তে হয় কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে। নেট সেশনে এখন আর নির্ভার ব্যাটিং করার সুযোগ পান না তারা। নিজ দলের বোলারদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই সারতে হয় অনুশীলন। অবশ্য এর ইতিবাচক দিকই দেখছেন লিটন। এখন আমাদের নেটে ব্যাটিং করলেও পরীক্ষা দিতে হয়। যেটা আগে হতো না। আমার মনে হয়, তাসকিন, ইবাদত, খালেদ (আহমেদ), শরিফুল, মুশফিকরা (হাসান)… এছাড়া যারা সাদা বলের খেলোয়াড় আছে, তাদের মুখোমুখি হলেও নেটে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। এটা আমাদের জন্যও অনেক ভালো যে, আমরা ম্যাচের আগে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। যেটার কারণে ম্যাচে খেলা অনেকটা সহজ হয়। এমন বোলিং যদি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে, তাহলে আরও অনেক অনেক পেস বোলার উঠে আসতে থাকবে। গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়েও বড় ভূমিকা ছিল পেসারদের। ওই ম্যাচে ১৩ উইকেট নেন ইবাদত-তাসকিনরা। সাদা বলে এখন নিয়মিতই ভালো করছেন ফাস্ট বোলাররা। তাই স্বাভাবিকভাবে চলে আসে সামনেও পেসবান্ধব বা স্পোর্টিং উইকেটে খেলার আলোচনা। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ অনুযায়ী উইকেট-কন্ডিশন ঠিক করার পক্ষে লিটনের ভোট। এটা (পেস বান্ধব উইকেট করা হবে কি না) নির্ভর করছে আমরা কার সঙ্গে খেলছি। এমন না যে শুধু স্পিন উইকেটে খেলব বা শুধুমাত্র পেস উইকেটে খেলব। যার সঙ্গে খেলব তাদের শক্তি, দুর্বলতা সব কিছু দেখেই… যেটা মানুষ বলে যে, ঘরের মাঠের সাহায্য নেওয়া- ওটাই করব। এমন হলে আবার নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ হয়তো সেভাবে পাবেন না পেসাররা। যা তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি মানেন লিটনও। তবু পুরোপুরি পেসবান্ধব উইকেট না বানিয়ে বরং ভালো উইকেটে খেলতে চান তিনি। এটি ঠিক যে, যদি সুযোগই না পায়, তাহলে পেসাররা কীভাবে তাদের সামর্থ্য তুলে ধরবে! তবে এরপরও অনেক কিছু আছে। আমরা যখন নিউ জিল্যান্ডে খেলতে যাই, তারা কিন্তু আমাদের বিপক্ষে চারটা পেসার নিয়ে খেলে। হয়তো একটা স্পিনার থাকে। তারা তাদের এই জিনিসটা কাজে লাগাতে চায়। ওখানে ওরা তো তিন স্পিনার নিয়ে খেলবে না। একইভাবে এশিয়ায় যখন কেউ খেলতে আসে, তারা কিন্তু ঘূর্ণি উইকেট বানায়। আমি বলছি না যে, আমাদেরও একই হবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে জয়টা খুব দরকার। এজন্য অনেক সুযোগ নিতে হয়। তবে আমরা চাইব ভালো উইকেটে খেলতে। যেন দুই দিকেই সুবিধা থাকে; এমন নয় যে শুধু স্পিনার বা পেসাররা একচেটিয়া দাপট দেখাবে। এই উইকেটে দেখেন, স্পিনাররাও কিন্তু সাহায্য পেয়েছে। দেখা যাক, ভবিষ্যতে এটা ঠিক করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ জুন ২৩/ এসবি