পথশিশুর জন্ম নিবন্ধন: প্রক্রিয়া সহজ করুন

0
240

সম্পাদকীয়

‘সবার জন্য শিক্ষা’—এ লক্ষ্যেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। সরকার প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার সব চেষ্টাই করেছে। কিন্তু পথশিশুদের শিক্ষার কী হবে? জন্ম নিবন্ধনের জটিলতায় পড়ে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পথশিশুরা। শুধু শিক্ষা নয়, তাদের সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জন্ম নিবন্ধন। পথশিশুদের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পথশিশুদের সংখ্যার পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে শিশুর টিকার কার্ড, মা-বাবার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক। এগুলোর কোনোটাই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না পথশিশুদের। আবার পিতৃ-মাতৃ পরিচয়, ঠিকানা, ধর্ম নির্ধারণ ও ফি দিতে না পারায় অনেকের জন্ম নিবন্ধন হচ্ছে না। পথশিশুর খাদ্য ও বাসস্থানের কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় তার কাছে জন্ম নিবন্ধন একটি অকল্পনীয় বিষয়। এর একটি উদাহরণ ময়মনসিংহের ফাতেমা। তার কিংবা তার মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন নেই। তাই নিয়মের বেড়াজালে আটকে গেছে তার স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া। কোনো স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি ফাতেমাকে। একটি জাতীয় দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের আলোকিত শিশু প্রকল্পের কর্মকর্তারা ফাতেমাকে স্কুলে ভর্তির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন না থাকায় ভর্তি করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জন্ম সনদ না থাকায় করোনা মহামারি টিকা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে পথশিশুরা। ১৮টি ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করায় জন্ম নিবন্ধনের প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। গ্রাম এলাকায়ও এর গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। কিন্তু পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন না থাকাটা দুঃখজনক। জন্ম নিবন্ধন না থাকলে এরা ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। জন্ম সনদের অভাবে পথশিশুদের জাতীয় পরিচয়পত্র, সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগ, ব্যাংক হিসাব খোলা—এমন অনেক সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কখনো ওদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হলে পাসপোর্টও করা সম্ভব হয় না। জন্ম নিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল হওয়ায় পথশিশুদের নিবন্ধনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আগে ইউনিয়ন পরিষদ বা ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সহযোগিতা করতে পারতেন। বর্তমানে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে স্থায়ী ঠিকানা, মা-বাবার নাম ও তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক হওয়ায় নিবন্ধন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই পিছিয়ে পড়ছে পথশিশুরা। ভর্তি হতে পারছে না রেজিস্টার্ড কোনো বিদ্যালয়ে। সংকট শুধু ফাতেমার একার নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সম্ভাব্য জরিপ বলছে, ২০২৪ সালে দেশে পথশিশুর সংখ্যা হবে ১৬ লাখ। তাদের জন্ম নিবন্ধনের কী হবে? কাজেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন কী করে সহজ করা যায়, সে উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here