লক্ষ্মীপুরে শাশুড়ি হত্যা মামলায় প্রেমিকসহ গৃহবধূর যাবজ্জীবন

0
287

এস এম বেলাল:

লক্ষ্মীপুরে শ্বাশুড়ি রাহেমা বেগমকে (৬৫) বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় পরকিয়া প্রেমিক জসিম উদ্দিনসহ গৃহবধূ তাহমিনা আক্তারকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।  ১৯ জুন সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম পৃথক এ দুই মামলার রায় দেন। লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার একটি অস্ত্র মামলায় জসিম উদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবককে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় অপর দুই আসামি লোকমান (৪৩) ও সুমনকে (৩৫) বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যা মামলায় গৃহবধূ তাহমিনা জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছে। রায়ের সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। অপর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাহমিনার পরকিয়া প্রেমিক জসিম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অস্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জসিম জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছে। রায়ের সময় তিনি আদালতে উপস্থিত হননি। হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তাহমিনা রামগঞ্জ উপজেলার সাউদেরখিল গ্রামের মফিজুল ইসলামের মেয়ে ও একই উপজেলার রাঘবপুর গ্রামের কবির হোসেনের স্ত্রী। এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত জসিম রাঘবপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে। অস্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত জসিম সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের চরচামিতা গ্রামের মৃত মনছুর আহম্মেদের ছেলে। খালাসপ্রাপ্ত লোকমান চরচামিতা গ্রামের মৃত অজি উল্যার ছেলে ও সুমন একই গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে। আদালত সূত্র জানায়, তাহমিনা ও তার চাচাতো ভাসুর জসিমের সঙ্গে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল রাতে তাহমিনা ও জসিম অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ঘটনাটি তাহমিনার শাশুড়ি রাহেমা দেখে ফেলেন। এতে জসিম তাকে ধাক্কা দিয়ে খাটের ওপর ফেলে দেয়। একপর্যায়ে তিনি চিৎকার করতে গেলে জসিম তাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে ধরে। এ সময় তাহমিনা তার শাশুড়ির দুপা চেপে ধরে রাখে। এতে রাহেমা মারা যান। পরে জসিম ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন ঘটনাটি টের পেয়ে ঘরে সামনে এসে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পায়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগীতায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন রাহেমার স্বামী আবু তাহের বাদী হয়ে রামগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে হত্যা মামলায় তাহমিনাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ঘটনার ৬ দিন পর ২৭ এপ্রিল হত্যাকারী জসিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতে সৌপর্দ করে। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রায় প্রদান করেন। অন্যদিকে অস্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত জসিম সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলম মিরন হত্যা মামলার আসামি। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর সদর উপজেলার মান্দারী বাজার থেকে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে নিয়ে মিরন হত্যা মামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ অভিযানে যায়। পরে বটতলি গ্রামের মিজি বাড়ির দরজা এলাকার একটি নির্মাণাধীন কাচারি ঘরে বালুর নিচ থেকে দেশীয় তৈরি একটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, দুটি এলজি ও বন্দুকের ২৬টি কার্তুজসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। একই দিন জসিমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাখন লাল রায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন। অপর দুই আসামি পলাতক থাকায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রায় প্রদান করেন।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৯ জুন-২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here