প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিরুদ্ধে শীতলক্ষ্যা নদী দখলের অভিযোগ

0
388
মুজিবর রহমান প্রধান: 
নরসিংদীর পলাশে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে নিচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। শীতলক্ষ্যার বিশাল জমি দখল করে স্থাপনা করেছে দেশের অন্যতম এই শিল্পগোষ্ঠী। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার কাজীরচর মৌজায়। পণ্য ওঠানামার অস্থায়ী অনুমতি নিয়ে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিরুদ্ধে। নদীর জমি উদ্ধারে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দাখিল করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শীতলক্ষ্যার জমি দখলের অভিযোগে গত ৮ মে নরসিংদীর ঘোড়াশাল নদীবন্দরের উপপরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ এহতেশামুল পারভেজ পলাশ থানায় এজাহার দায়ের করেছে। পলাশ থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলার কাজীরচর মৌজায় অবস্থিত প্রাণ-আরএফএলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টিলাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-২ অবৈধভাবে মাটি/বালু/রাবিশ/প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমি ভরাট করছে। অধিকতর ভরাটের উদ্দেশ্যে নদীর জমিতে ডাইক তৈরি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতদের ভরাট অংশসহ ডাইক অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘোড়াশাল নদীবন্দরের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রথীন্দ্র নাথ পালের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের নদী এবং নদীর তীরভূমি তথা নিম্নাঞ্চল ভরাট/ক্ষতিগ্রস্থ করার এরূপ কার্যকলাপ যা হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং-৩৫০৩/২০০৯-এর নির্দেশ, এই রায়ের ধারাবাহিক আদেশগুলো-বন্দর আইন-১৯০৮, বন্দর বিধি-১৯৬৬, ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬-এর সংশ্লিষ্ট ধারা, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০০) ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি ১৯৯৬ ও পেনাল কোডের ৪৩১ ধারা অমান্যের শামিল। হাইকোর্টের রিট পিটিশন নম্বর ৩৫০৩/২০০৯-এর নির্দেশনায় নদী দখলদার উচ্ছেদসহ নদীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং বালু ফেলে বা অন্য কোনোভাবে নদী ভরাট সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। বন্দর আইন-১৯০৮, বন্দর বিধি-১৯৬৬-এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী ঘোষিত বন্দর সীমানার মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি ছাড়া কোনো কার্যক্রম গ্রহণ বা স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের শীতলক্ষ্যা নদী ধ্বংসকারী এরূপ কার্যকলাপে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌপথ সংকুচিত ও পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং নৌ দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। অবৈধভাবে নদীর জমি দখলের কারণে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে এজাহার (মামলা) গ্রহণ করে নদী ও নদীর তীরভূমি তথা নিম্নাঞ্চল ভরাট/ক্ষতিগ্রস্থ করায় ইনল্যান্ড লিপিং অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০-এর ১৫(১) এর টেবিল-৮ ও পেনাল কোডের ৪৩১ নম্বর ধারা অনুযায়ী কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন এজাহারে উল্লেখ। জানা গেছে, প্রাণ গ্রুপের দখল করা জমি বিআইডব্লিউটি এর চেয়ারম্যান পরিদর্শন করেছেন। এ সময় বিআইডব্লিউটিএর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এজাহারের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, জেলা প্রশাসক/পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির দপ্তরে। এজাহারের বাদী বিআইডব্লিউটিএ ঘোড়াশাল নদীবন্দরের উপপরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ এহতেশামুল পারভেজ বলেন, মাল্টিলাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-২ অবৈধভাবে শীতলক্ষ্যা নদীর জমি ভরাট করায় পলাশ থানায় এজাহার দাখিল করা হয়েছে। প্রাণ-আরএফএলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টিলাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-২-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রথীন্দ্র নাথ পাল বলেন, নরসিংদীর বেশিরভাগ কলকারখানা নদীর পাড়ে। আমরা নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠান করেছি। এর মধ্যে নদীর কিছুটা অংশও রয়েছে। সবুজ জমি নষ্ট করিনি, তবে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে। শীতলক্ষ্যার জমি নষ্ট না করার দাবি করে তিনি বলেন, নদীর জমি ব্যবহারে আইন মেনে লিজ নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তবে লিজ চূড়ান্ত হয়নি। বাঁচাও শীতলক্ষ্যা নদী আন্দোলনের সভাপতি- মাহবুব সৈয়দ বলেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নদী দখলের মানসিকতায় শীতলক্ষ্যা নদী আজ খালে পরিণত হচ্ছে। দীর্ঘ দুই যোগধরে  প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ শীতলক্ষ্যা নদীর নরসিংদী ও গাজীপুর অংশে জমি ভরাট করে গড়ে তুলেছেন কয়েক ডজন শিল্পকারখানা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদী দখল ও দূষণে প্রাণ গ্রুপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছি।  প্রশাসনের উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা ও নিস্ক্রিয়তায়ই শান্ত স্বচ্ছ জলধারার জোয়ার ভাটা প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদী আজ বিপন্নের পথে। তাই কালক্ষেপণ না করে সরকারকে এখনিই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষার্থে যত দ্রুত সম্ভব বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২০ জুন-২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here