#রাজধানীর পশুর হাটের চিত্র #ছোট গরুর চাহিদা তুঙ্গে, বড় গরুর দর্শনার্থী বেশি #বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর সরবরাহ কম #বিক্রেতারাও দাম না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন
বিশেষ প্রতিবেদক:
রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে পুরোদমে। এবার হাটে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। লাখ টাকার নিচে মিলছে না মাঝারি গরু। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে দামের পার্থক্য হচ্ছে ৩০-৫০ হাজার। সোমবার (২৬ জুন) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আফতাবনগর হাটে গরু কিনতে এসেছেন রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। কোরবানির জন্য ছোট গরু খুঁজতে গিয়ে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মেলাতে পারছিলেন না এ ক্রেতা সরেজমিনে আফতাবনগর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট গরুর চাহিদা বেশি। তবে বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর সরবরাহ কম। এ কারণেই ছোট বা মাঝারি সাইজের গরুর দাম অনেক বেশি। তবে সকাল থেকে বাজারে খুব বেশি ক্রেতার দেখা মেলেনি। যাদের উপস্থিতি চোখে পড়েছেন তাদের অধিকাংশই দর্শনার্থী। কেজিপ্রতি দামের হিসাবে বাজারে বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর দাম অনেক বেশি। ৭ থেকে ১০ মণ ওজনের একটি গরু কিনলে মাংসের কেজিপ্রতি দাম পড়ছে গড়ে ৭০০-৮০০ টাকা, যা ছোট গরুর ক্ষেত্রে কেজিতে আরও ১০০-২০০ টাকা বেশি। পাবনা থেকে হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী খালেদ হোসেন বলেন, সবাই ছোট গরু চায়। এ কারণে দাম বেশি। বড় গরুর চাহিদা কম এবার। তাই দামও কম। পশুর খাবারের দাম ও লালন-পালনের খরচ বেড়ে যাওয়াও কোরবানির পশুর দাম বাড়ার কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যাপারীরা। এ বছর ঈদুল আজহায় পশুর দাম গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। এতে যেমন ক্রেতারা কাঙ্ক্ষিত দামে পছন্দের পশু মেলাতে পারছেন না, আবারও বিক্রেতারাও দাম না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ব্যাপারীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকৃতিভেদে গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আফতাবনগর হাটে গত বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর (৩ থেকে ৫ মণ ওজনের) মণপ্রতি দাম ছিল ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা এবং বড় গরু (৫ মণের বেশি ওজনের) মণপ্রতি ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর মণ ৩২ থেকে ৩৫ হাজার আর বড় গরু মণ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকায়। যদিও অধিকাংশ ব্যাপারীরা শুরুতে দাম হাঁকছেন আরও বেশি। হাটে এখন সোয়া লাখ থেকে দেড় টাকার মধ্যে গরুর চাহিদা বেশি। আফতাবনগর হাটে হাসিল ঘরে গিয়েও ছোট গরুর হাসিল বেশি হতে দেখা গেছে। ওই হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সবুজ বলেন, যত গরু হাসিল হচ্ছে তার মধ্যে ৬০-৭০ শতাংশই ছোট গরু। তবে শেষ মুহূর্তে বড় গরুর চাহিদা বাড়তে পারে। কারণ, বড় গরু বাড়িতে রাখা সমস্যা। যারা বড় গরু কেনেন তারা শেষ দিকেই বেশি নেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে টুকটাক বেচাকেনা শুরু হলেও মূল বেচাকেনা হবে ঈদের আগের দুদিন। আফতাবনগরে গরুর দাম বেশি হলেও সরবরাহে কোনো কমতি দেখা যায়নি। সে তুলনায় ক্রেতা উপস্থিতি অনেক কম। হাটে ১২টি ছোট গরু নিয়ে এসেছেন নাটোরের ওহাব উদ্দিন। ওই গরুগুলোর দিকে ক্রেতার ভালো আনাগোনা চোখে পড়ে। জানতে চাইলে ওহাব উদ্দিন বলেন, সবচেয়ে ছোট গরুর দাম এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। ওজন হবে তিন মণের একটু বেশি। আর সাড়ে তিন মণের চারটি গরু আছে, দাম এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। দাম বেশি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো বাড়িতে পালা (লালন-পালন করা) গরু। খড়-চিটা-খুদের দাম এতো বেশি যে আমরাও পোষাতে পারছি না। গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় গরুর দামও বেড়েছে। পাবনা থেকে সাতটি বড় গরু নিয়ে আফতাবনগর হাটে আসা গোপাল চন্দ্র বলেন, আমার গরুগুলো বড় বলে বিক্রি কম। তিনদিনে চারটা ছোট গরু বিক্রি করেছি। এখন বড় ছয়টি আছে। এগুলোর ক্রেতা কম। ১৪ মণ ওজনের গরু সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান এই বিক্রেতা। তিনি বলেন, দামও সেভাবে বলেনি কেউ। এগুলো গ্রামের হাটে গড়ে ৩২ হাজার টাকা মণ কেনা। এদিকে খরচ বেশি হওয়ায় বিক্রিত গরুর দাম নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্ট নন খামারিরা। সরবরাহ বেশি থাকায় শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। আফতাবনগর হাটে সোমবার সকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গরু এনেছেন ফাহাদ ইসলাম আবিদ। তার গরুর নাম ট্র-স্পাইডার। ৩৫ মণ ওজনের এ গরুটি ওই বিক্রেতার চাঁদপুর খামারে পালন করা। আবিদ বলেন, গরুর দাম ১৫ লাখ চাচ্ছি। তবে এটিই ফিক্সড না। ক্রেতারা আসছেন, দাম বলছেন। এখন পর্যন্ত ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ জুন ২৩/ এসবি