সম্পাদকীয়
এ দেশে চামড়ার প্রধান জোগান পাওয়া যায় কোরবানির ঈদের সময়। কিন্তু প্রতিবছরই চামড়ার দাম নিয়ে অসন্তোষ দেখা যায়। ব্যতিক্রম এবারও ঘটেনি। যদিও প্রতিবছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও ঈদের আগে চামড়া খাতের তিন সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এবার ঢাকার মধ্যে কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য ধরা হয় প্রতি বর্গফুট ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪৫-৪৮ টাকা। গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম তিন টাকা বাড়ানো হয়। এবার চামড়া নষ্ট হওয়া বা মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা খুব একটা না ঘটলেও দেশের কোথাও এবার সরকারের বেঁধে দেওয়া দর পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা—এমন অভিযোগ রয়েছে। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের দাবি, সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পুরোপুরি আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। তাঁরা বলছেন, চামড়ার দাম কমার এটাই অন্যতম কারণ। আর কমপ্লায়েন্সের শর্ত পূরণ না হওয়ার প্রধান দুটি কারণ হলো তরল ও কঠিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) একটি পুকুর খনন করেছে, যা পরিবেশসম্মত নয়।অন্যদিকে তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য স্থাপিত সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি) বা কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ইউরোপ-আমেরিকায় চামড়াজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তারা বাংলাদেশের পণ্য কেনে না কমপ্লায়েন্সের অভাব থাকায়। কেমিক্যাল, লবণের উচ্চমূল্য ও শ্রমিক মজুরিকেও দায়ী করছে তারা। অন্যদিকে ঢাকা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পোস্তার আড়তদার ও চামড়াশিল্পের মালিকরা দেশের জাতীয় সম্পদ কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণের নামে প্রতারণা করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কয়েক বছর ধরে চামড়ার একটি ভিত্তিমূলক মূল্য ধরে রেখেছে। সেটির ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয় প্রতিবছর চামড়ার একটি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এই মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়ার ভেতরে চামড়ার যে বাণিজ্যিক মূল্যের বিষয়টি রয়েছে, সেটি তেমন বিবেচনায় নেওয়া হয় না। ফলে বাজারের ভিত্তিতে দরদাম করা এবং কাঁচামাল হিসেবে এর যে মূল্য থাকা উচিত, সে বিষয়গুলো এখানে উপেক্ষিত থেকে যায়। ফলে সব সময় এটির নিম্নমূল্য নির্ধারিত হয় এবং প্রকৃত বাজারমূল্য অনুসারে চামড়ার মূল্যায়ন হয় না। আমরা চাই, চামড়া সংগ্রহের বিষয়টি সুষ্ঠু নিয়ম-নীতির আওতায় আনা হোক। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখেই মূল্য নির্ধারণ করতে হবে; কিন্তু তা করতে হবে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে। চামড়া নিয়ে যেন সিন্ডিকেট বা অন্য কোনো অনিয়ম চলতে না পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।