মাজেদুর রহমান:
বগুড়ার গাবতলীতে দিনমজুরের স্ত্রীকে গভীর রাত পর্যন্ত বাঁশঝাড়ে বেঁধে রেখে সুদের টাকা আদায় করায় লজ্জা ও ক্ষোভে ওই ব্যক্তি ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাতে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই দিনমজুর। এ ঘটনা ঘটেছে গাবতলী উপজেলায়। জানা যায়, প্রায় চার মাস আগে দেড় ভরি স্বর্ণ, ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেক এবং ভোটার আইডি বন্ধক রেখে চড়া সুদে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ী গোলজারের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ঋণ নেন এক গৃহবধূ। পরে সুদে-আসলে সেই টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় লাখ টাকায়। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দাদন ব্যবসায়ী গোলজার ও তার লোকজন প্রতিনিয়ত ওই গৃহবধূকে নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি দিয়ে আসছিল। টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকাল ১০ টার দিকে ওই গৃহবধূ বাবার বাড়ির দিকে রওনা দেন। পথে দাদন ব্যবসায়ী গোলজার ও তার লোকজন তাকে ধাওয়া করলে তিনি একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই বাড়ি থেকে গোলজার ও তার বাহিনী গৃহবধূকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে আসে। গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে আটকে রেখে রাত আনুমানিক ২টা পর্যন্ত রিমার ওপর নির্যাতন চালায় গোলজার। একপর্যায়ে গোলজারের লোকজন মালেকের বাড়িতে গিয়ে টাকা না পেলে তার সম্ভ্রমহানীর হুমকি দেয়। সেই সাথে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তার স্ত্রীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করিয়ে টাকা আদায়েরও হুমকি দেয়। খবর পেয়ে মাঝরাতেই ওই গৃহবধূর বাবা নগদ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। এদিকে এই অপমান মেনে নিতে পারেননি তার স্বামী অপমানে, ক্ষোভে, লজ্জায় শনিবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাতে নিজ শয়নকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। রোববার (৯ জুলাই) ভোরে আত্মহত্যার খবর গ্রামে প্রচার হলে গ্রামবাসীদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তারা দাদন ব্যবসায়ী গোলজার রহমান ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। খবর পেয়ে গাবতলী মডেল থানা পুলিশ তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। ঘটনার দিন সকালেই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বাদী হয়ে গাবতলী থানায় আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলা করেন। পরে দুপুর আড়াইটা নাগাদ অভিযুক্ত দাদন ব্যবসায়ী গোলজার রহমানকে গ্রেফতার করে গাবতলী মডেল থানা পুলিশ। এ বিষয়ে গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, মালেকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দাদন ব্যবসায়ীকে গোলজারকে গ্রেফতার করে আদালাতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই আদলতের মাধ্যমে আসামির রিমান্ড আবেদন করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১০ জুলাই ২৩/ এসবি