টাঙ্গাইল রেল স্টেশনের টিকিট কালোবাজারি থামছেই না

0
515

লুৎফর রহমান উজ্জ্বল:

টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশনে বেশিরভাগ যাত্রীর কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা । ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা- যার কাছ থেকে যা পারছে অতিরিক্ত আদায় করছে টাঙ্গাইল রেল স্টেশনের অবৈধ টিকিট সিন্ডিকেট। এ কারণে এর আগে দু-একজনকে লঘুদন্ড দেয়া হলেও মেলেনি কোন স্থায়ী সুফল। ১০-১৫ দিন চুপচাপ থেকে তারা আবার পুরোদমে শুরু করে তাদের এই অবৈধ টিকিট বাণিজ্য। টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেলেও অতিরিক্ত টাকা খরচ করলে স্টেশনের চায়ের দোকানগুলোতে সিটসহ টিকিট পাওয়া যায়। কালোবাজারির মাধ্যমে টিকিট পাওয়া গেলেও সাধারণ যাত্রীদের কাছে যা প্রায় অসাধ্য। সিটসহ টিকিট না পেয়ে টাঙ্গাইল থেকে দাঁড়িয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায় -টাঙ্গাইল রেল স্টেশনে কর্মরত প্রায় সবাই-এমনকি কুলিরা পর্যন্ত এই টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িত । তাদের সাথে যোগ হয়েছে আশেপাশের কিছু দোকানদার ও দালাল। যারা নিয়মিত টাঙ্গাইল থেকে ট্রেনে যাতায়াত করেন তাদের অনেকেই এইসব দোকানদার বা দালালদের কাছ থেকে বাড়তি দামে টিকিট সংগ্রহ করেন। এর আগে তৎকালীন সহকারী স্টেশন মাস্টার মোঃ সোহেল, টিকিট মাস্টার মোঃ আশরাফসহ তিনজন কালোবাজারি মাধ্যমে টিকিট বিক্রির সময় গোয়েন্দাদের হাতে আটক হন। পরে তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। মোঃ সোহেলকে মহেড়া রেল স্টেশনে বদলি করা হয়। পরে মোঃ সোহেল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পুনরায় বদলি নিয়ে বর্তমানে টাঙ্গাইল (ঘারিন্দা)রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।সরেজমিনে টাঙ্গাইল রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়- ১০-১৫ জন যাত্রী টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে জটলা করছে। তাদের বলা হচ্ছে- কোন টিকিট নাই। রুমের উপরে লেখা- বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। অথচ একটু পরপর স্টেশনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের লোকজন মোবাইলে কথা বলছে আর ভিতরে ঢুকছে। তারা বাইরে বেরিয়ে এসে নির্দিষ্ট কাউকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে এবং কানে কানে কথা বলে হাতে টিকিট ধরিয়ে দিচ্ছে। এদিকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো টিকিট না পেয়ে হতাশ হচ্ছে । সাধারণ যাত্রীরা টিকিট না পেলেও যারা অতিরিক্ত টাকা খরচ করছে তারা পেয়ে যাচ্ছে কাঙ্খিত টিকিট। এ সময় টিকিট মাস্টার সেলিম রেজা কাউন্টারে বসে টিকিট বিক্রি করছিলেন। তাকে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করার সময় হাতেনাতে ধরলে সে বারবার ক্ষমা চাইতে থাকে এবং লাইনম্যান খালেকের কাছে যায়। লাইনম্যান খালেক স্টেশন মাস্টারের রুম থেকে বেরিয়ে এসে নানারকম হুমকি -ধামকি দিয়ে ভয় -ভীতি দেখায় এবং একপর্যায়ে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বহু মানুষের সামনে উচ্চস্বরে বলতে থাকে-এসব নিউজ কইরা কোন লাভ নাই। নিউজ কইরা আমাদের কোন কিছুই করতে পারবেন না। ঢাকাগামী যুবক রাকিব বলেন- আমরা হলাম জিম্মি। পরিস্থিতির শিকার। আমাদের ট্রেনে যেতেই হয়। এখন ট্রেনে যদি বাসের মতো দামাদামি করে টিকিট নিতে হয় সেটা খুব ভোগান্তির। মোহর আলী নামে কমলাপুরগামী একজন যাত্রী চারটি টিকিট দেখিয়ে বলেন- আমি চারজনের টিকিট কাটছি। ১১৫ টাকা দামের টিকিট ১৩০ টাকা দাম বলে ৬০ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। ফারজানা সুপ্তি নামের এক নারী বলেন- আমি প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ ছেলেকে নিয়ে বসে আছি দুইটা টিকিটের জন্য। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট নাই। কিন্তু একজন দালাল এসে বলল ১১৫ টাকার টিকিট ২০০ টাকা করে দিলে নাকি পাওয়া যাবে। কালিহাতি থানার দক্ষিণ চামুরিয়া থেকে আসা তোফাজ্জল স্বর্ণকার বলেন-বেশি টাকা না দিলে টিকিট দেয় না। ১১৫ টাকা দামের টিকিট আজকে ১৩০ টাকা দিয়ে নিছি ।এর আগে একদিন ২০০ টাকা দাম নিছে। আবুল কাশেম নামে একজন বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন -খুব সমস্যা ।একদিন ১৮০ টাকার টিকিট ২৫০ টাকা দাম নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুল আলীম বলেন- এখন সবকিছু ঠিক মতই হচ্ছে। কোন ঝামেলা নেই ।আমার জানামতে কেউ টিকিট কালোবাজারি করে না । স্টেশন মাস্টার মোঃ সোহেল বলেন- টিকিট সব সময় কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়। টিকিটের বিষয়ে আমার খুব বেশি এক্তিয়ার নাই ।এগুলো টিকিট কাউন্টারের মিলন তালুকদার, আশরাফ এবং সেলিম রেজা মিলে সব কিছু করে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্টেশন মাস্টার মোঃ সোহেল বলেন- লাইনম্যান খালেকের অফিসের কম্পিউটারে বসে কাজ করার কোন রাইট নাই । আর মুচলেকার বিষয় নিয়ে যে কথাটি চালু আছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১২ জুলাই ২৩/এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here