এম জসিম উদ্দিন:
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমি সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকার পরও আনোয়ারা উপজেলার ৯ নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। আনোয়ারার কয়েকটি ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি বধ্যভূমির স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। স্মৃতিচিহ্ন থাকা সবকটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধও নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সব বধ্যভূমি সংরক্ষণের নির্দেশনা থাকলেও অরক্ষিত হয়ে আছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৯ নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের ৩ টি বধ্যভূমি। বধ্যভূমিগুলো হলো, পরৈকোড়া, পূর্বকন্যারা ও বাথুয়া। এ তিনটি বধ্যভূমিতে শহীদের সংখ্যা প্রায় ১৭৬ জন। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেয়ায় অযত্ন অবহেলা ও বেদখলের কারণে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে বধ্যভূমিগুলো। এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কএশিয়াটিক সোসাইটির গবেষকসহ প্রগতিশীল সচেতন নাগরিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। আনোয়ারার সর্ববৃহৎ বধ্যভূমিটি হলো বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর বধ্যভূমি। এ বধ্যভূমিতে বিশাল আকারের সুউচ্চ স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এছাড়া বারশত ইউনিয়নের সুরমা পুকুর বধ্যভূমি, জয়কালী বাজার বধ্যভূমিসহ কয়েকটিতে স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এসব স্মৃতিসৌধগুলো করা হয়েছে নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বাকি বধ্যভূমিগুলো অযত্ন অবহেলা ও স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারগুলোর অবৈধ দখলের কারণে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। পরৈকোড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠর মুখে জানতে পেরেছি, পশ্চিম পাকিস্তানের দোসর কুখ্যাত রাজাকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন পরৈকোড়া গ্রামের খাইর আহমদ চৌধুরী ওরফে খয়রাতি মিয়া। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পরৈকোড়া ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে গণহত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণধর্ষণের মতো জঘন্যতম যেসব ঘটনাগুলো ঘটেছে সব ঘটনার মূল নায়ক ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার খাইর আহমদ চৌধুরী ওরফে খয়রাতি মিয়া। স্থানীয়রা আরো বলেন, রাজাকার খয়রাতি মিয়ার সব সন্তানই বাবার সহযোগী হয়ে নৃশংস ঘটনাগুলোতে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। খয়রাতি মিয়ার দলের দুর্ধর্ষ আরও কয়েকজন রাজাকারের মধ্যে রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাকিম (মুক্তিযোদ্ধার গুলিতে নিহত), রাজাকার কমান্ডার ওষখাইনের আবুল কালাম, আবুল কালাম (প্রকাশ আলম শাহ্;), আবুল ফজল চৌধুরী, নুরুল হক চৌধুরী, ইউনুস, আবদুল খালেক, নুরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মোহাম্মদ সিরাজ (যুদ্ধকালে নিহত), আবদুর রহমান, ইব্রাহিম, আসহাব মিয়া, ভেট্টা বড়ুয়া (যুদ্ধকালে নিহত), ফটিক বড়ুয়া (যুদ্ধকালে নিহত), খাসখামা গ্রামের রাজাকার কমান্ডার নুরুল আবছার, রাজাকার ফজল হক, আবদুল হাকিম পেছু মিয়া (যুদ্ধকালে নিহত), মামুরখাইনের রাজাকার মনির আহমদ (মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত), মাহাতা গ্রামের রাজাকার মইত্যা, কৈখাইনের রাজাকার আহমেদ ছফা, তালসরার দুদু মিয়াসহ অনেকে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা (মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী) জানান, ঐসব নৃশংস ঘটনাগুলো মনে পড়লে শরীরের পশম এখনো শিউরে ওঠে। বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে, ওষখাইন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুল্লাহ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরৈকোড়া ইউনিয়নে রাঘববোয়ালের (রাজাকার) সন্তানেরা বিশাল ধনকুবের মালিক। এমনকি তাদের আত্মার পরম আত্মীয়রাও বিশাল ক্ষমতার অধিকারী। তাদের ভয়ে পরৈকোড়া ইউনিয়নের আওতাধীন বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে সাহস করেনা কেউ। তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওইসব রাঘববোয়ালদের নাম শুনলে এমনিতেই পিছু হটে। তাই নানা কারণে পরৈকোড়া ইউনিয়নের সব বধ্যভূমিগুলো অরক্ষিত। এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আবদুল মান্নান বলেন, পরৈকোড়া ইউনিয়নের বধ্যভূমির বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। কোন গণকবরে কতজনের লাশ তাও আমি জানিনা। তিনি (আবদুল মান্নান) বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলাম। এসব বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন বলেন, সারাদেশের বধ্যভূমিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংস্কার ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চলমান। পরৈকোড়া ইউনিয়নের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারের একটা আলাদা প্রকল্প আছে।
আরও পড়ুন: আনোয়ারায় শ্রমিকবাহী বাস দুর্ঘটনায় আহত ৫
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৩ জুলাই ২৩/এসবি