এক সময় ঢাকার রাজপথ কাঁপানো নেতা সানাউল হক নিরু

0
283
এক সময় ঢাকার রাজপথ কাঁপানো নেতা সানাউল হক নিরু
এক সময় ঢাকার রাজপথ কাঁপানো নেতা সানাউল হক নিরু
মজিবর রহমান প্রধান:
সানাউল হক নীরু। ছিলেন ছাত্রদলের অন্যতম স্তম্ভ। তাঁর নাম শুনলেই কাঁপতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অসম্ভব ভালো সংগঠক হিসেবে ছাত্রদলের ভেতরে একসময় তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ‘৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে নীরু-গোলাম ফারুক অভি তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলন নস্যাতের চেষ্টা করছেন বলে চারিদিকে আওয়াজ ওঠে। বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব ডা. শামসুল আলম মিলনকে টিএসসি এলাকায় গুলি করে হত্যার অভিযোগ ওঠে অভি সংশ্লিষ্টদের। সর্বদলীয় ছাত্র সংগঠনের চাপের মুখে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয় নীরু-অভিকে। ‘৮০-৯০’- এর দশকের রাজপথ কাঁপানো নীরু এরপর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে আচমকা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন। আগের মতো তাঁকে দেখা যায় না খুব একটা। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। লম্বা বিরতি দিয়ে অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠালগ্নে যুক্ত হলেও সেখানেও ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তবে সবসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকেন নীরু। নরসিংদী (বেলাবো-মনোহরদী) আসনে নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে শোনা যায়। ছাত্র রাজনীতির প্রাণপুরুষ হিসেবে পরিচিত নীরুর ভাই মাহবুবুল হক বাবলু ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। যিনি ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। এখনো প্রতিবছর বাবলুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দলের বাইরে থাকা সানাউল হক নীরু বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এমন গুঞ্জন শোনা গেছে বহুবার। কিন্তু দলে ফেরা হয়নি তাঁর। পাশাপাশি নব্বই দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের স্বার্থে তখন আলোচনার ভিত্তিতে সাময়িক সময়ের জন্য নীরুকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অথচ সেই সাময়িক সময় দীর্ঘ ২৫ বছরেও শেষ হয়নি। সেই ক্ষোভটা এখনো রয়ে গেছে তাঁর। তাছাড়া বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড খুব একটা পছন্দ না করায় বর্তমান অবস্থায় দলে ফেরার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বললেই চলে। যদিও তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিকের ভাবনায় এখনো রাজনীতি আছে। এজন্য নিজে গড়ে তুলেছেন ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ নামে সংগঠন। তবে নীরুর প্রত্যাশা জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি যেন রাজনৈতিক অঙ্গনে সঠিক পথে চলে। অন্যদিকে ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নুরের গড়া নতুন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। তবে ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি নীরুর পক্ষ থেকে। গুঞ্জনই রয়ে গেছে বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার খবর অনেকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল সংস্কারবাদীদের দলে নিচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে কয়েকজন মূলধারায় চলেও এসেছেন। শোনা যাচ্ছিল সানাউল হক নীরুকেও ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়েও তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক সময় অপেক্ষা করলেও দলীয় প্রধানের দেখা পাননি। সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গুঞ্জন আরও জোরালো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর গতি পায়নি। সাবেক এই ছাত্রনেতার বিএনপিতে ফেরারও কিছু হয়নি। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না পেয়ে ফেরার সময় সাংবাদিকদের কাছে সানাউল হক নীরু বলেছিলেন, ২৪ বছর ধরে আমি বিএনপিতে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তবে ১৯৯০ সালে ডাকসুর নির্বাচনের সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়। তবে তিনি আবার দলে ফিরতে চান। দলের ক্রান্তিকালে আবার কাজ করতে চান। বিএনপির রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আগ্রহ না থাকলেও রাজনীতির মধ্যে বেঁচে থাকতে চান নীরু। সেই চিন্তা থেকে জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈরি হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চেয়েছিলেন তিনি। এই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক নীরু। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ও ইতিবাচক সুস্থধারার রাজনীতির করার কথা বলেছিলেন নীরু। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনের যাত্রা শুরু করতে আইনি কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে পড়ে গেছে নীরুর সংগঠন। তাই পুরোদমে কাজ করার আপাতত সুযোগ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। যদিও সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের পর রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন নীরু। অন্যদিকে ওই বছর আরও একটি কারণে বিএনপিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার মানহানীর মামলার আবেদন করেছিলেন নীরু। মওদুদ আহমদ তার আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘চলমান ইতিহাস’বইয়ে সানাউল হক নীরু ও গোলাম ফারুক অভিকে ‘জঙ্গি’ ও ‘মস্তান’ আখ্যায়িত করেন। যে কারণে মওদুদের পাশাপাশি বইটির প্রকাশক ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মুদ্রাক্ষরিক নাজমুলকেও বিবাদী করেছিলেন নীরু। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশার সূর শোনা গেল সানাউল হক নীরুর কণ্ঠে। সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল দমনসহ নানা অভিযোগ যেমন করলেন, তেমিন বিএনপির রাজনীতি সঠিক পথে নেই বলেও মনে করেন তিনি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের মতো একজন দেশপ্রেমিক নেতা আমরা আর পাবো না। তার রেখে যাওয়া দল যাতে সঠিক পথে রাজনীতি করে সেজন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। শীর্ষ নেতাদেরও পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি।’ নীরু বলেন, ‘ভবিষ্যতে কী হবে সেটা বলা মুশকিল। তবে যতদিন বেঁচে আছি মানুষের জন্য যতটুকু উপকারে আসা যায় অবশ্যই কাজ করব।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৪ জুলাই ২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here