প্রতিনিধি, শরীয়তপুর:
শরীয়তপুর সদর উপজেলার মধ্য পালং ০১ নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা শওকত বেপারী। জমিজমা বিরোধের জেরে ৫ ভাইবোনকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছেন বড় ভাই মৃত আঃ আব্দুল আলীম’র পরিবার। এই অভিযোগ বড় ভাই মৃত আলীম বেপারির স্ত্রী খুরশিদা বেগম(৫৫) ও তার ২ ছেলে নাহিদ বেপারী (৩৫) মুন্না বেপারী (৩০) বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে। বসতবাড়ি ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে (মঙ্গলবার ২৫ শে জুলাই) নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী সারেং বাড়ি (শওকতের শ্বশুর বাড়ি) সংবাদ সম্মেলন করেন শওকত বেপারী ও তার পরিবারবর্গ। পারিবারিক এই সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে লেখা ছিল “জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যার হুমকিতে বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত আমরা” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায়। এই ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় , জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার শরীয়তপুর, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শওকত বেপারী ও তার স্ত্রী রুনা আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে শওকত বেপারী জানান, আমার বাবা নয়ন বেপারীর ৭ সন্তান, আমরা ৩ ভাই ৪ বোন। আমার মা রহিমা বেগম অনেক বছর আগে আমার বড় ভাই মৃত :আঃ আলীম বেপারিকে ১০৪ শতাংশ জমি লিখে দেন। সেই জমির ভাগ সে একলা পেলেও আমরা বাকি ভাইবোনেরা পাইনি। আমার বড়ভাই আমার মা বাবাকে কোনো প্রকার ভরণপোষণ দিতেন না।(৬ জুন ২০২২ সালে) আমার মা রহিমা বেগম আমাদের দুই ভাই ও তিন বোন (রুহুল আমিন বেপারী, মাকসুদা বেগম, মায়া রানী বেগম, ফিরোজা বেগম) কে ১২০ শতাংশ জমি লিখে দেন (বি.দ্র. আমার ছোট বোন রাজিয়া বেগম যিনি আমাদের মায়ের ৭ নং সন্তান তিনি কোন জমি নেননি)। জমি লিখে দেয়ার এই সংবাদ পেয়ে আমার বড় ভাই আলীম বেপারির স্ত্রী খুরশিদা বেগম (৫৫) ও নাহিদ বেপারী (৩৫) মুন্না বেপারী (৩০) আমার পরিবার এর উপর নির্যাতন চালায়, আমাকে ও আমার স্ত্রী সন্তানের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে । তারা বলেছে ১২০ শতাংশ জমি থেকেও তাদের ভাগ দিতে হবে। খুরশিদা বেগম বলেন যদি নাই দেই পাঁচটি কবর খুড়ে রেখেছি তোদের পরিবারের ৫ জনকে তোদের এই জমিতে কবর দিবো। তিনি বলেন, মূলত স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক কর্মীর সহযোগিতায় তারা এই হুমকি প্রদর্শন করছেন। আমি বাড়ি করার জন্য ৩০ হাজার ইট এনে রেখে ছিলাম সেই ইট ও আমার ঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন আমার বড় ভাইর ছেলে নাহিদ বেপারি ও মুন্না বেপারী। আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছে গিয়ে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাই নাই। আমার দুই ছেলে এক মেয়ের শিক্ষা জীবন অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। মুন্না ও নাহিদ বেপারী ভয়ে বিগত তিন মাস ধরে ইস্কুলে যেতে পারছে না। তাই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শরীয়তপুর পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক শরীয়তপুরসহ যে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছে তাদের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি এই সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে শওকত বেপারীর স্ত্রী রুনা আক্তার বলেন,আমার বিয়ের পর থেকে আমি ঐ বাড়িতে শান্তিতে থাকতে পারি নাই আমার জাল খুরশিদা বেগম আমাকে বহুবার মারধর করছে। এখন আবার আমার শাশুড়ী রহিমা বেগম তার ৫ সন্তানকে কিছু জমি লিখে দেন এই নিয়ে আমার ও সন্তানদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসতে জীবন বাঁচাতে আমি কুরবানির ঈদের দুই দিন আগে খুব সকালে স্বামী বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসি। আমার ঘরের মালামাল ও স্বর্ণ অলংকার নগদ টাকা লুটপাট করেন নাহিদ ও মুন্না তার মা মিলে। শওকত বেপারী বোন মায়া রানী মুঠোফোনে বলেন, আমার মা রহিমা বেগম আমাদের ৫ ভাই বোন কে ১২০ শতাংশ জমি লিখে দেন এই সংবাদ পেয়ে আমার বড়ইর ছেলেরা বাড়ি থাকা শওকত ভাইর পরিবার এর উপর নির্যাতন চালায় তাদের ভয়ে আমি স্বামী বাড়িতে থাকি। সব সময় বাবার বাড়িতে যেতে পারি না।গেলে আমার ভাবি খুরশিদা ও ভাতিজারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কিছু দিন আগে গ্রামে স্থানীয় লোকজন নিয়ে বসে একতরফা দরবার শালিস করেন।ন অনেক বছর আগে আমার বড় ভাই মৃতঃ আব্দুল আলীম বেপারি কে আমার মা ১০৪ শতাংশ জমি লিখে দেন এবং আমার বাবা বাড়ির সাথে ৩৬ শতাংশ জমি বড় ভাইর নামে কিনে দেন। কিন্তু আমরা সেই জমি দাবী করি নি। আমার মা আমাদের ৫ ভাই বোন কে ১২০ শতাংশ জমি লিখে দেন। এই নিয়ে বড় ভাইর ছেলেরা বাড়িতে মেজো ভাই শওকত বেপারীর পরিবার কে নির্যাতন করেন নাহিদ বেপারি ও মুন্না বেপারী তার মা খুরশিদা বেগম। এই নির্যাতনের সঠিক বিচার চাই আমরা। এবিষয়ে নাহিদ বেপারি মুঠোফোনে বলেন, শওকত বেপারী যেই অভিযোগ করছেন সব মিথ্যা বানোয়াট। এর কোনো কথার ভিত্তি নাই এমন কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটে নাই। আমার বাবা ২০২০ সালে মারা যায় আমরা এতিম। আমাদের অভিভাবক আমার চাচা শরীয়তপুর সদর উপজেলার প্যানেল মেয়র বাচ্চু বেপারী, তার সাথে কথা বলতে পারেন। শওকত বেপারী ও তার তিন বোন মিলে আমার দাদিকে ভুল বুঝিয়ে দাদির সব সম্পত্তি লিখে নেন, এবিষয়ে জানতে পারলে আমারা বাচ্চু চাচার কাছে বিচার দেই। বিচারে শওকত বেপারী জমি ফিরত দিবে বলে স্বীকার করে। কিন্তু তারা এখন জমি জানি ফেরত না দেয়া লাগে সেই জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছে। আমাদের সংবাদ সম্মেলন করা কথা, কিন্তু উল্টো তিনি আমাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার, মোঃ মাহবুবুল আলম মুঠোফোনে বলেন, গতকাল শওকত বেপারির স্ত্রী রুনা আক্তার তার স্বামীর বড় ভাইর পরিবারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এবিষয়ে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে সঠিক তদন্তের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ধান কর্তনের উদ্বোধন
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৫ জুলাই ২৩/এসবি