জুড়ীতে পরিবেশ আইন না মেনে অবাধে কাটা হচ্ছে টিলা

0
1049
কেটে রাখা টিলা/ ছবি: প্রতিনিধি

এস. এম. জালাল উদদীন:

 

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে পরিবেশ মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে অবাধে টিলা কেটে সাবাড় করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। ফলের বাগান করা ও ঘর বাড়ি নির্মাণের অজুহাতে টিলা কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার পরও এসব দেখেও না দেখার ভান করছে উপজেলা প্রশাসন। সরেজমিন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের ভরাডহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মৃত আব্দুল হাছিবের ছেলে জাবেদুল আলম সিপার বসতভিটার পাশের উঁচু পাহাড়ের মাঝখানের মাটি কেটে সমতল করে সরকারি অর্থায়নে মাল্টা বাগান করেছেন। টিলা কাটার বিষয়টি যাতে লোকজনের নজরে না পড়ে সেজন্য গাছ-গাছালি দিয়ে এটাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সঙ্গে টিলার চূড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করেছেন‌। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প ২২/২৩ অর্থবছরের আওতায় ভরাডহর এলাকার মৃত আব্দুল হাছিবের ছেলে জাবেদুল আলম সিপারকে ৬০ টি মাল্টা চারা প্রদান করা হয়। টিলা কাটা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কাটা টিলায় প্রকল্প দেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। টিলা কেটে বাগান করা জাবেদুল আলম সিপার বলেন, আমাদের বাড়ির এ অংশে ৪০/৫০ বছর যাবত আমাদের বসবাস। তাছাড়া এখানে সরজমিনে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এসে দেখে মাটি কেটে সমান করতে বলায় আমি মাটি কেটেছি। এরপর তিনি এখানে মাল্টা বাগান দিয়েছেন। টিলা কাটা নিষেধ থাকলে তিনি মাল্টা বাগান দিতেন না। এ ব্যাপারে জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন টিলা কাটা নিষিদ্ধ তা আমার জানা না থাকায় ওই ব্যক্তি কে মাল্টা বাগান প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান বলেন, যিনি বাগান করেছেন তিনি টিলা কেটেছেন, আমরা কাটিনি। এখানে আমাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। যেখানে টিলা কাটা আইন বিরোধী সেখানে সরকারি টাকায় প্রকল্পের বাগান করার যুক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সুদোত্তর দিতে পারেননি। জুড়ীর সাগরনাল ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী লেবু বেগম প্রায় ৩০ ফুট উঁচু একটি বিশাল টিলার মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। টিলার মাটি কেটে নেওয়ার ফলে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোন সময় মাটি ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলা গ্রামের সাবেক আনসার সদস্য মাহমুদ আলী টিলার মাটি কেটে নিচু জমি ভরাট করছেন। টিলার মাটি কাটার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাহমুদ আলী জানান, এলাকার অনেকেই মাটি কাটছে আমি কাটলে দোষ কোথায়! আলাপকালে স্থানীয় সচেতন মহল জানান, যেভাবে প্রভাবশালীরা নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটছে তাতে করে তা জনজীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। পাহাড়ের তলে কিংবা পাহাড়ে যেসব বাড়িঘর রয়েছে ভারী বর্ষণে যেকোনো মুহূর্তে ধসে গিয়ে প্রাণহানি হবে এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তারা আরো বলেন, প্রশাসন টিলা কাটার বিরুদ্ধে কখনও কখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আবার থমকে যায়। প্রভাবশালীসহ অনেক জনপ্রতিনিধি দিন দিন টিলা কেটে পাহাড়ি জনপদগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. মাইদুল ইসলাম দৈনিক আলোকিত প্রতিদিনকে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রঞ্জন চন্দ্র দে বলেন, টিলা কাটার বিষয়টি জেনেছি। তবে আইন অনুযায়ী টিলা কাটা অবস্থায় খবর পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। যেহেতু বিষয়টি পরে জেনেছি তাই পরিবেশ অধিদপ্তর কে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হবে। কাটা টিলায় সরকারি প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। পরিবশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো মাইদুল ইসলাম বলেন দৈনিক আলোকিত প্রতিদিনকে জানান, টিলা কাটার বিষয়টি জানা নেই অভিযোগ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৭ জুলাই ২৩/এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here