নিহত কলেজছাত্র প্রান্তের হত্যাকারীরা গ্রেফতার

0
234
মোঃসাদ্দাম হোসাইন সোহান:
ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত মিত্র (২৩) । পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ আসামিকে গ্রেফতার করেছে । তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ড ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত। গ্রেফতারকৃতরা হলেন তানভীর আহম্মেদ সজিব শেখ (২৩), ইসরাফিল মল্লিক (৩৪), সিফাতুল্লাহ বেপারী (১৯) ও মাসুম শেখ (৩৪)। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, চাপাতি, সেভেন গিয়ার চাকু, রেঞ্জ, রক্তমাখা জামা-কাপড়, জুতা ও বেল্ট উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন আর মাসুম তাদের মোটরসাইকেল সরবরাহ করেন। বুধবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, একইরাতে ছিনতাইকারী দলটি প্রান্তকে হত্যার পর একটি মোটরসাইকেলে ঘুরে ঘুরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আরো কয়েকটি ছিনতাই সংগঠিত করে। সংবাদ সম্মেলনে নিহত প্রান্ত মিত্রের বাবা বিকাশ মিত্র, মা পুতুল মিত্রসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সবাই মাদকসেবী। জেলখানা থেকে তাদের একে অপরের সঙ্গে সখ্যতা ও সংঘবদ্ধতা। তারা মাদকসেবন ও পতিতালয়ে স্ফূর্তির জন্য এসব ছিনতাই করতো। তিনি বলেন, গত ২৫ জুলাই রাত ২টার দিকে হৃদয় নামে এক বন্ধুর বোনের ডেলিভারি সংক্রান্ত জটিলতায় সহায়তা করতে প্রান্ত শহরের ওয়ারলেসপাড়ার বাসা থেকে বের হন। এরপর একটি রিকশায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে আলিমুজ্জামান ব্রিজের ঢালে তিন ছিনতাইকারী তার স্মার্টফোন ও ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার বুকে চাকু দিয়ে কোপ মেরে তাকে হত্যা করে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছিনতাইকারীরা প্রান্তকে হত্যার পরে রাত পৌনে ৪টার দিকে আলীপুর বাদামতলী সড়কে একজন সবজি বিক্রেতার ভ্যান থামিয়ে ৩ হাজার টাকা ছিনতাই করে। রাত সোয়া ৪টার দিকে ঝিলটুলীতে পুরাতন পাসপোর্ট অফিসের সামনে ধুলদি মসজিদের ইমাম মুফতি আবু নাসিরের কাছ থেকে চাপাতির ভয় দেখিয়ে একটি স্মার্টফোন ও নগদ টাকা ছিনতাই করে। ভোর ৫টার দিকে শহরের কমলাপুরে জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে কুপিয়ে জখম করে তার স্মার্টফোন ছিনতাই করে। তারপর ভোর ৫টার পর তারা পূর্ব খাবাসপুর অন্ধকল্যাণ হাসপাতালের সামনে শরীফ উল্লাহ মাহমুদ মিয়া নামে একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি স্মার্টফোন ও নগদ টাকা ছিনতাই করে। এসব গণ ছিনতাইয়ের অভিযোগ পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা, থানা পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করে মামলার তদন্ত পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার শ্যামপুর থেকে তানভীর আহম্মদ সজিব শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে নিহত প্রান্ত মিত্রের ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মধুখালী থেকে আরেক আসামি ইসরাফিল মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে যাদু মিয়ার ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরবর্তীতে অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, কুপিয়ে আহত হওয়ার পর প্রান্তের শরীর রোড ডিভাইডারের ওপর হাঁটু ভাঙা অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়েছিল। এজন্য তার শরীরে রক্তক্ষরণ হলেও তার বেশিরভাগই পেটের খালি স্থানে জমে ছিল বলে ময়নাতদন্তে দেখা যায়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, আড়াই থেকে তিন লিটার রক্ত তার শরীরের মধ্যে জমা ছিল। অল্পকিছু রক্ত বাইরে বের হয় যা মাটিতে লেগে ছিল। এদিকে, সংবাদ সম্মেলন শেষে নিহত প্রান্তের মা পুতুল মিত্র সাংবাদিকদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে বলেন, ‌‌‘আমিতো টিকতে পারতেছি না। আমার বাবা সারাজীবন পরের উপকার করতে করতে নিজের জীবন দিয়ে গেলো। এমনভাবে আর কারো জীবন যেনো না যায়।’ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অন্যান্য কর্মকতা ছাড়াও প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকউপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার (২৫ জুলাই) রাত আড়াইটার দিকে হৃদয় নামে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে শহরের ওয়ারলেসপাড়ার বাসা থেকে রিকশায় করে শিশু হাসপাতালের উদ্দেশে যাওয়ার পথে ছুরিকাঘাতে নিহত হন প্রান্ত। এর দুদিন পরে বুধবার (২৭ জুলাই) রাতে প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ০২আগস্ট ২৩/ আর এম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here