পণ্যমূল্য কমে যাওয়ায় চীনের মাথাব্যথা

0
156

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

চীনের অর্থনীতিতে মূল্য সংকোচন দেশটির মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। গত জুলাই মাসে পণ্যমূল্য কমে গিয়ে দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত মূল্য সংকোচনের কবলে পড়েছে চীন। যখন মূল্যস্ফীতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঠিক তখনই চীনের উল্টো দশা। চীনের মূল্যস্ফতির হার আগের বছরের তুলনায় জুলাই মাসে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে ঋণাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। যাকে অর্থনীতির পরিভাষায় মূল্য সংকোচন বলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোভিডের ধকল সামলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি যখন চাহিদা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে, তখন এই মূল্য সংকোচন সরকারকে চাপে ফেলছে। বিবিসি লিখেছে, আমদানি ও রপ্তানি সূচকে অবনমনের পর ভোগ্যপণ্যের মূল্য সূচকের এই ধাক্কা চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি টেনে ধরবে। বাড়তে থাকা স্থানীয় সরকারের ঋণ এবং আবাসন খাতের খরার কারণেও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে চীন। এর মধ্যে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানো যুব বেকারত্বের সমস্যাও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি তরুণ এ বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করবে ধারণা করা হচ্ছে। পণ্যমূল্য হ্রাসের কারণে ঋণের বোঝা কমানো চীনের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। মূল্য সংকোচনের কারণে প্রবৃদ্ধির গতিও ধীর হয়ে আসবে, সেটা নিয়েও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে। বিনিয়োগ ফার্ম ইএফজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ড্যানিয়েল মুরে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে এমন গোপন কোনো যাদুর কাঠি নেই। তবে এজন্য আর্থিক নীতি সহজ করার পাশাপাশি সরকারি কর কমানোর ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যেসব পণ্যের সরবরাহ কম ছিল, চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দামের লাগাম ছুটে যায়। রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ করে বসার পর জ্বালানি খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু চীনে এমনটি ঘটেনি। বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন কোভিড বিধিনিষেধ থেকে ফেরা চীনের বাজারে পণ্যমূল্য বাড়েনি। সবশেষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনে পণ্যমূল্য পড়েছিল। চীনের অর্থনীতি আসলে কয়েক মাস ধরেই মূল্য সংকোচনের কিনারে। মিল গেইটে যে দামে পণ্য বিক্রি হয়, তাও পড়ে গিয়েছিল। বিশ্বে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন পণ্য সম্ভারের একটি বড় অংশ উৎপাদন করে চীন। ফলে সেখানে যদি মূল্য সংকোচন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে বিশ্বের অনেক দেশে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, অর্থাৎ পণ্যমূল্য কমে আসতে পারে। কম দামের চীনা পণ্য বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন অন্যান্য দেশের পণ্য উৎপাদনকারীরা চাপের মধ্যে পড়বে। তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়লে চাপ তৈরি হবে কর্মসংস্থানে। দীর্ঘসময় ধরে চীনে মূল্য সংকোচন চলতে থাকলে উৎপাদক কোম্পানির লাভের ভাগও কমে যাবে। তাতে বেড়ে যেতে পারে বেকারত্ব। জ্বালানি, কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্যের বৃহত্তম বাজারে চাহিদা কমে গেলে তা বিশ্বের রপ্তানি বাজারকেও ধাক্কা দেবে। চীনের অর্থনীতি মূল্য সংকোচন ছাড়াও নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। মহামারীর পর থেকে দেশটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারছে না। চীনের সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এভারগ্রান্ডে ধ্বংসের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়ার পর চলমান সংকট উৎরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। ‘সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’- সরকারের পক্ষ থেকে এমন বার্তা দেওয়া হলেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আদতে বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

 

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৪ আগস্ট ২০২৩/ আর এম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here