আলোকিত ডেস্ক:
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। ‘গরিবের মাছ’ খ্যাত পাঙাশসহ দাম বেড়ে গেছে চাষের অন্যান্য মাছের। এতে একরকম দিশেহারা ভোক্তারা। তাদের দাবি, সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে বিক্রেতারা। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, কালীগঞ্জ ও আগানগর, রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ও রায়সাহেব বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা ও শিম ২৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা ও টমেটো ১৭০ টাকা। আর প্রতি পিস লাউ ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, আর বাঁধাকপি ৮০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজির দামই বেড়ে গেছে। মূলত আড়ত পর্যায়ে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত যোগান নেই। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের বিক্রেতা সোহেল জানান, সপ্তাহ ব্যবধানে সবজির দাম বেড়ে গেছে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সরবরাহ না বাড়লে, সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। তবে ভিন্ন সুর ক্রেতাদের কণ্ঠে। তাদের দাবি, সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে খেয়াল-খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। এতে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। আরাফাত নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। সবজির দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে, বাজারে আসাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’ আরেক ক্রেতা জুয়েল বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেই বিক্রেতারা সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেন। অথচ বাজারে পর্যাপ্ত শাক-সবজির যোগান রয়েছে। আসলে সংকটের অজুহাত দিয়ে দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন বিক্রেতারা। বাজারে বেড়েছে কাঁচা মরিচের ঝালও। বাজারভেদে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায় উল্টো চিত্র। রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। শ্যামবাজারের পাইকারি মরিচ বিক্রেতা নাজমুল বলেন, পাইকারি পর্যায়ে নতুন করে বাড়েনি কাঁচা মরিচের দাম। নেই কোন সরবরাহ সংকটও। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আসায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছন। এদিকে, অস্থির হয়ে ওঠেছে মাছের বাজারও। ‘গরিবের মাছ’ হিসেবে পরিচিত চাষের পাঙাশের দামও এখন লাগাম ছাড়া। বাজারভেদে প্রতি কেজি চাষের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি। এছাড়া প্রতি কেজি টেংরা মাছ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, দেশি মাগুর ১ হাজার ৩০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৪০০ টাকা ও শোল ১ হাজার টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৭৫০ টাকা ও নদীর পাঙাশ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি রুই ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা, রূপচাঁদা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, পাবদা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলেন, বাজারে মাছের সরবরাহ কম। এছাড়া এবার ইলিশ কম ধরা পড়ছে; তাই দামও বাড়ছে। অর্ণব দাস নামে এক ক্রেতা বলেন, আগে প্রতি কেজি চাষের পাঙাশ ১৫০ টাকায় পাওয়া গেলেও, সেটি বাড়তে বাড়তে এখন হয়েছে ২২০ টাকা। দিন দিন পাঙাশের দাম সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এভাবে দাম বাড়লে আর মাছ খাওয়া যাবে না। তবে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজারে দাম কমেছে মুরগির প্রতিকেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া লাল লেয়ার ৩০০ থেকে ৩২০ ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ বেড়েছে; এতে কমতে শুরু করেছে দাম। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের বিক্রেতা হাসান বলেন, পাইকারি পর্যায়ে মুরগির দাম কমেছে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। আর ক্রেতাদের দাবি, মুরগির বাজারে এখনও সিন্ডিকেট কাজ করছে। বিক্রেতারা খেয়ালখুশি মতো মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। দাম কমেছে ডিমের। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।বিক্রেতারা জানান, আমদানির হুশিয়ারিতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম কিছুটা কমিয়েছে। এতে খুচরা পর্যায়েও দাম কমছে। তবে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি রসুন ২৬০ টাকা ও আমদানিকৃত রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আরপ্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। এদিকে বাজারে জিরা ও শুকনা মরিচের দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে অন্যান্য মসলার দাম। প্রতিকেজি জিরা ১ হাজার ৫০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪৩০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, গোলমরিচ ৭০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০, কাঠবাদাম ৭৯০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল ডাল, আটা ও ময়দার দাম। প্রতিকেজি খোলা আটা ৪৫ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। আর নতুন দাম নির্ধারণের পর চিনি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকায় বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, এরই মধ্যে নতুন দামের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বাজারে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামেই। তবে খোলা সয়াবিন তেল মিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়তি।
এর আগে রোববার (১৩ আগস্ট) প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৫৪ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ২৩ টাকা কমিয়ে ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর রোববার (১৩ আগস্ট) প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১৩৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা এবং প্রতি কেজি পরিশোধিত প্যাকেট চিনি ১৪০ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮ আগস্ট ২৩/ এসবি