ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার কারণ ভারত

0
257
ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার কারণ ভারত
ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার কারণ ভারত

বিশেষ প্রতিনিধি:

ব্রিকসের ১৫ তম বৈঠকে জোটটির সাথে বাংলাদেশের যুক্ত না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনীতির বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে বিষয়টিকে এখনই কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন যে, প্রকৃত কারণ জানতে হলে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কিছু সুক্ষ্ণ বিশ্লেষণ আলোকপাত করলেই নিঃসন্দেহে উপলব্ধি করতে পারবেন ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার কারণ ভারত।
গত ০৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় ’ব্রিকসে নতুন সদস্য চায় চীন, তবে ‘সতর্ক’ অবস্থানে ভারত ও ব্রাজিল’ শিরোনামের নিউজে স্পষ্ট তথ্য উঠে আসে।
প্রতীয়মাণ হয়, ব্রিকসের শুরু একটি শিথিল জোট হিসেবে। লক্ষ্য ছিল দেশগুলোর মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং সহযোগিতা বাড়ানো। বিশ্বের ৪৩ শতাংশ জনসংখ্যা বাস করে জোটভুক্ত দেশগুলোতে। পৃথিবীর ২৬ শতাংশ ভূমি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ৩০ শতাংশের মালিক এসব দেশ।

চীন গত বছর জানায় যে জোটে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হোক, এটা সে চায়। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন যে এই প্রক্রিয়া ‘এখনো চলমান’। তিনি বলেন, জোটের সম্প্রসারণ করা হলে এটির কাঠামো ঠিক কী হবে, সে ব্যাপারে মান, অনুমাপক এবং পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে।

ব্রাজিলের ফুন্ডাকাও গেটুলিও ভারগাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অলিভার স্টুনকেল বলেন, ‘জোট কতটা সম্প্রসারিত হলে তা নতুন দিল্লির স্বার্থের অনুকূলে’ থাকবে, তা নিয়ে ভারতের একটি উদ্বেগ আছে।
তাঁর মতে, জোট সম্প্রসারণে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী চীন। এরপর রয়েছে রাশিয়া। তবে ভারত ও ব্রাজিল এ ব্যাপারে কমবেশি ‘সতর্ক রয়েছে যে সম্প্রসারিত জোটে তাদের প্রভাব কমে যায় কি না’ এটা ভেবে। তিনি বলেন, ‘নতুন সদস্যরা চীনের ঘনিষ্ঠ হতে চাইবে, ব্রাজিল কিংবা ভারতের নয়।’

অলিভার স্টুনকেল আরও বলেন, জোটটি এরই মধ্যে পশ্চিমের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একই সঙ্গে এটিকে শক্তিশালী জি৭ গ্রুপের বিকল্প মডেল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। জি৭ গোষ্ঠীর সদস্যরা হলো ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি আরও যোগ করেন, ব্রিকস জোটের সম্পসারণ হোক বা না হোক, এর সদস্যদেশগুলোর নিজস্ব অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।

প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ভারতের ভূমিকাও প্রতীয়মাণ হয় যা চোখে পড়ার মতো।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ফেলো আনু আনোয়ার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত যে পশ্চিমের দিকে ঝুঁকে রয়েছে, তা ধারণা দিচ্ছে ব্রিকস জোটে তাদের অবস্থান ‘বিচ্ছিন্ন’ এবং এটা বোধগম্য যে অন্য সদস্যরা এই জোটের সম্প্রসারণ চায়।

দিল্লি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা জোরদার করেছে। এ ছাড়া কোয়াড নিরাপত্তা জোটেও ভারত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ভারত ছাড়াও এই জোটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। বিশ্বে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকার কারণে জোটটি সম্প্রতি পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।

আনু আনোয়ার মনে করেন, ব্রিকস জি৭ জোটের বিকল্প হিসেবে দাঁড়ানোর বিষয়টি সম্ভবত ঘটবে না। তিনি বলেন, ‘ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব কোনো সামরিক জোট নেই এবং কাছাকাছি সময়ে যে তা হবে, তেমন সম্ভাবনা খুবই কম।’ তাঁর মতে, একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে এমন একটি সামরিক জোট গঠন করা গুরুত্বপূর্ণ।

জার্মানির ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক গুন্থার মাইহোল্ড বলেন, একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা মূলত চীন ও রাশিয়ার স্বার্থ। তাঁর মতে, এই দুই দেশ তাদের আকাঙ্ক্ষাকে একধরনের বৈধতা দিতে ব্রিকসের সম্প্রসারণ চায়। অন্যদিকে ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা এ ক্ষেত্রে পরিবর্তনে আগ্রহী নয়।

গুন্থার মাইহোল্ড বলেন, এটা সম্ভবত ‘অনেক বেশি অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বিশেষভাবে ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্ত সংঘাতের কারণে তৈরি হওয়া খারাপ সম্পর্কের দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং বলেন যে দেশ দুটি আরও বেশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব তৈরির জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অ্যাশ সেন্টারের জেষ্ঠ ফেলো শার্লি জে ইয়ু বলেন, ব্রিকস সম্পসারিত হলে তা এই জোট ও বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকটি প্রতিফলতি করবে, কারণ ব্রিকসের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দুই–তৃতীয়াংশই আসে চীন থেকে।

তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগে সদস্য দেশই একটি সাধারণ বহুপক্ষীয় কাঠামোর কথা বলবে, তবে চীন ঠিক করে দেবে যে কী নিয়ম পালন করতে হবে।’ তিনি আরও মনে করেন, কোনো একটি দেশ এমন ভূমিকা পালন করলে তার প্রতিপত্তি দশকের দশক ধরে চলতে থাকে।

পশ্চিমা দেশগুলো যেমন একটি সাধারণ মতাদর্শ ধারণ করে, ব্রিকসের দেশগুলো তা করে না বলে মত দেন শার্লি জে ইয়ু। তিনি বলেন, বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদা প্রতিফলিত হয়, এসব দেশ এমনভাবে বর্তমানে প্রচলিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সংস্কার করতে চায়।

মূলত, বিশ্ব রাজনৈতিকে ভূ-রাজনীতির ফ্রেমে ফেলে স্বয়ং কর্তৃত্ব জাহির করবার নিমিত্তে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বকে চক্ষুশূল অগ্রগণ্য করে ভারত বাংলাদেশের সদস্যপদ নাচক করে।

 

আলোকিত প্রতিদিন / ২৫ আগস্ট ২০২৩/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here