বিশেষ প্রতিনিধি:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় মাঠে নামতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। কেন্দ্রে যোগাযোগও বাড়িয়েছেন তারা। এমনকি সারা বছর যারা জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন তারাও এখন বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থী হওয়ার কথা জানান দিচ্ছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা বা কোন প্রক্রিয়ায় ভোট হবে এ নিয়ে দ্বিধায় আছে বিএনপি। তার পরও ভেতরে ভেতরে মাঠ গোছাচ্ছেন দলটির সম্ভব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা। প্রতিদিনই পাড়া-মহল্লায়, চায়ের স্টলগুলোতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মানিকগঞ্জ জেলায় সাতটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ৬৫টি ইউনিয়ন নিয়ে তিনটি নির্বাচনী আসন রয়েছে। এর মধ্যে ঘিওর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে মানিকগঞ্জ-১ আসন গঠিত। গত ১৫ বছর ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। আসন ধরে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তাদের হারানো আসন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তিনি এবারও নির্বাচন করতে আগ্রহী। দুর্জয় আশা করছেন, এবারও দল তাকে মনোনয়ন দেবে এবং তিনি নির্বাচিত হবেন। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের পিপি আবদুস সালাম। এ তালিকায় আরও আছেন সাবেক সংসদ সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল হক। তিনি বিএনপির প্রভাবশালী প্রয়াত নেতা সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল হক বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা যায় না। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আস্থা আছে। এবার তিনি আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব। দলের নেতাকর্মীসহ এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভোটে আমি নির্বাচিত হয়ে আসব। শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমার খান জানু বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাকে নৌকা প্রতীক দেন। আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় লাভ করি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নেত্রীকে এ আসনটি উপহার দিতে পারব। এছাড়া কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়। জাহিদ এ এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাড়া-মহল্লায় কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে ব্যস্ত। এর পরও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে কেন্দ্র থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ পযায়ে যোগাযোগ রাখেন এমন একটি সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বরাবরই মানিকগঞ্জের রাজনীতিতে খোন্দকার দেলেয়ার হোসেন, হারুনার রশিদ খান মুন্নু এবং সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়াÑ এ তিনটি পরিবারের প্রতি আস্থাশীল। দলের মনোনয়ন বোর্ডও মানিকগঞ্জের এ তিনটি পরিবারের উত্তরসূরিদের প্রতি আস্থা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার পর মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী সংকট দেখা দেয়। সংকট নিরসনের জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খোন্দকার দেলোয়ারের বড় ছেলে ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলুকে কানাডা থেকে ডেকে এনে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করতে বলেন। সেই থেকে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে কানাডায় রেখে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন বাবলু। তিনি আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনটি উপজেলায়ই তার বাবার অনুসারী, পুরনো ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পাবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু বলেন, বিএনপি এখন আগের চেয়েও উজ্জীবিত এবং ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির ঘাঁটি মানিকগঞ্জ-১ আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য নেতাকর্মীরা এক হয়ে মাঠে নেমেছেন। ইনশাল্লাহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এ আসনে আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে আছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এ জিন্নাহ কবীর। সরকার পতনের আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া জেলা কৃষক দলের সভাপতি ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজা। মানিকগঞ্জ-১ আসনে এখনো জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান সাইদ মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
২৬-০৮-২০২৩ইং