বিশেষ প্রতিনিধি :
কবি মোজাফফর বাবুর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছে অন্যধারা সাহিত্য সংসদ। তিনি অন্যধারা সাহিত্য সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ভার্চুয়াল কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একাধারে কবি, গল্পকার, কথাসাহিত্যিক ও আশির দশকের প্রগতিশীল ছাত্র নেতা মোজাফফার বাবু ২৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মানবতাবাদী নতুন সমাজের দিশারী আদর্শে অবিচল এমন একজন বিরল ব্যক্তিত্ব মাস্টার ইমান আলী এবং মাতা শেফালী খাতুনের ঘর আলোকিত করে আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন যশোর সদরের খড়কির সার্কিটহাউজের বাড়িতে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসভবনে। মোজাফফর বাবু যশোরের খড়কি প্রাইমারি স্কুল পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে যশোর জেলা স্কুল ভর্তি হন সেখান থেকে ১৯৮০ সালে যশোর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে। ১৯৮২ সালে যশোর পলিটেকনিক কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ইন কমার্স পড়েন। ১৯৮৪ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শুরু করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী প্রগতিশীল চিন্তাধারার এক মানবতাবাদী যার নাম মাষ্টার ইমান আলী । তার আদি পরিবার ছিল প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকারী। তাদের বাসায় বহু গুণী লোকের যাতায়াত ছিল। তাঁদের মধ্য- শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ইব্রাহিম খাঁ, শ্রী সুধির বাবু, মোহাম্মদ সুলতান , আবদুল হামিদ খান ভাসানী , প্রতাপ উদ্দিন আহাম্মেদ , ডাক্তার এম এ করিম , শ্রী নারান মাস্টার ও শরীফ প্রফেসরসহ প্রমূখ। সংগঠক হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় ‘সাপ্তাহিক অন্যধারার সম্মাননা স্মারক ২০২০’ লাভ করেন। তার নির্বাচিত বই সমূহ: কাব্যগ্রন্থ – কফি হাউজের আবছায়াউপন্যাস – তালুক , অবাক জোছনা। গল্পগ্রন্থ-উলুখাগড়াদের গল্প, কুহেলিকা।
কবি মোজাফফর বাবুর কয়েকটি কবিতা :
সুহাসিনী
হয়তো ভাবোনি কোনদিনও সেই ছেলেটির কথা
শিমুল-ছায়ায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিন যে তোমারই অপেক্ষায়
কাটিয়েছে বিকেল-সন্ধ্যা-সাঁঝ,
ডাহুক ডাকা ভোরে
রোদেলা দুপুরে
বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে
একটু আসা একটু দেখা কতোই কারুকাজ।
দু’চোখ চেয়ে থাকে
ঢেউয়ের বাঁকে বাঁকে
মৃদু-মন্দ আশার আলো ভালোই মনে রাখে।
সুহাসিনী-
তোমার জাদুর পরশে জ্বলে ওঠা
সেই ছেলেটির আমি
জেগে ওঠে আমার মাঝে
শুভ্র মেঘের নীলাকাশে।
ময়নাতদন্ত
নিবারণ হাঁটু গেড়ে বসে আছে
চোখের কোণে চিকচিক করছে মুক্তোর মতো
ফোটা ফোটা জল
কিছু আগে যা ছিলো বেদনার নদী, এখন
প্রতীক্ষার ঘাম যেনো!
হাসফাঁস হাসফাঁস করছে তার মন।
দিন গেছে বিকেলের রোদ ছুঁয়ে
গোধূলি ফুরিয়ে হয়েছে সন্ধ্যা
এখন রাত নির্ঘুম চোখ
সে চোখে শুধুই প্রতীক্ষা-
কখন আসবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন।
বিরক্তিকর মোবাইল প্যাচাল
সারশূন্য অযথা ক্যাচাল,
বুকে ওড়ে মরুভূমির বালুঝড়
যে ঝড়ে আশা আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নসাধ
ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়
হয়ে যায় পর, আরও পর ।
ডোম, ডাক্তার, মর্গের চাবি,
হাতুড়ি, কাঁচিতে যেন
ট্রাফিক জ্যাম!
পিপাসা দহনে ক্লান্তির ঘামে
দিনলিপি যায় ঢেকে ,
চারদিকে নিষ্ঠুর হন্তারক
জাতসাপ শার্দুলে ভরপুর ।
লাশ ফুলে ফেঁপে যায়
দুর্গন্ধ ছড়ায়
নিবারণ প্রতীক্ষায় থাকে
কোথায় পায় নগদ নারায়ণ।
লাজ সরম ভুলে
ডোম চারাল কত না হাতায়
জামা কাপড় কাথায়
গাট্টিগাট্টা, পকেটে-জ্যাকেটে!
হরিবল হরিবল করে
কখন তুলবে চিতায় !
আঁধার ঘনিয়ে আসে
নিবারণের চোখে মুখে বেদনার দাবান
পাঁশুটে হয়ে যায় জীবনের রেলগাড়িটা ,
ধোঁয়া ছাড়ে না, সামনেও বাড়ে না
নিবারণ খাবি খায় মর্গের বারান্দায় ।
শ্রাবণের মিষ্টি আকাশ
সাজের বেলায় শ্রাবণের মিষ্টি আকাশ
আলো আধারে মাঝে কতোনা কারুকাজ
সবুজে সবুজে প্রকৃতি পেয়েছে নতুন দিন
আকাশের রংধনুর মতো মন হয়েছে রঙিন
দীঘিতে ভাষে শাপলা শালুক কলমিলতা
তাঁর সাথে সেজেগুজে নীল অপরাজিতা
ঝুম বর্ষায় চমকিত ছিল প্রকৃতি বুখ
বিবাগী মন খুজে ফেরে প্রেয়সীর মুখ
কচি কচি ঘাসের ডগায় ভাসে কতনা ছবি
ছুটি নিয়েছে রবি জীবনের কথা বলে কবি
হিমেল হাওয়া আর জল করে মাখামাখি
কুল কুল ধ্বনি করে ছুটে চলে সময়ের নদী
দূরে নীল পাহারে ঝর্নায় ভাসে কতোনা ছবি
নীল অম্বর আর পাহাড় একেই রথের যাত্রী
বিশাল আকাশে উড়াল দেয় পারিযায়ী পাখি
আঙ্গিনায় মিষ্টি গোধূলী দিনমনির হয় সমপ্তি
অতুল বৈভরে বাদল মেয়ে বাজায় নূপুর
কষ্টের মাঝে চিত্তে বাজে যেন বর্ণীল সুর
২৭-০৮-২০২৩ইং