লংগদুতে পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস পালিত 

0
253
এরশাদ আলী
 লংগদুতে তথাকথিত শান্তিবাহিনী কর্তৃক পাকুয়াখালীতে ৩৫ কাঠুরিয়াকে গণহত্যার প্রতিবাদে ও ৩৫ কাঠুরিয়া সহ পার্বত্যাঞ্চলের সকল হত্যার বিচারের দাবীতে শোকর‍্যালী  শোকসভা ও দোয়া মাহফিল  অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার)  সকাল ১১ ঘটিকায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলায পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্বর হতে এক শোক র‌্যালী বের করা হয়। শোক র‌্যালীটি উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে  উপজেলা পরিষদের ২৮ কাঠুরিয়ার গণ কবরের সামনে এসে কবর জিয়ারত, দোয়া ও  মোনাজাতে শরীক হয়। অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ দাখিল মাদ্রাসার সুপার হাফেজ মাওলানা ফোরকান আহম্মদ, পরে উপজেলা পরিষদ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের পূর্বপার্শ্বে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবসের আয়োজক কমিটির আহবায়ক মোঃ খলিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মহা-সচিব আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে  বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান।বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক  মোর্শেদা বেগম, ৩৫  কাঠুরিয়া গণহত্যা দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মোঃ আলমগীর হোসেন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ লংগদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ,বি,এস মামুন, সাবেক লংগদু উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ নাছির উদ্দীন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পারিষদ রাংগামাটি জেলা শাখার সভাপতি হাবিব আজম, পাকুয়াখালীতে হত্যা কান্ডের শিকার হওয়া পিতা হারা সন্তান মোঃ রাকিব হাসান ও ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী কাঠুরিয়া মোঃ আব্দুল হাকিম প্রমুখ্য বক্তব্য রাখেন।বক্তারা বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে পাকুয়াখালীতে ৩৫ কাঠুরিয়া গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে, পাকুয়াখালী গণহত্যায় নিহতদের পরিবারদেরকে পূর্ণবাসন করা নিহতদের পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতানুসারে চাকরির প্রদান করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, পার্বত্য বাঙালীদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে  ভূমি কমিশন পূনঃগঠন, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে বৈষম্য দুরকরার দাবী জানান।প্রধান অতিথি বলেন, বর্তমান সরকার আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় দেশে গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছেন,  তিনি নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার পরিবারকে প্রধানমন্তীর গৃহীত আশ্রাযণ প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসার  আহবান  জানান।শোকসভা শেষে পাকুয়াখালীতে গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীসহ নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নগদ আর্থিক সহায়তা ও দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়।উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালের  ৯ সেপ্টেম্বর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী রাঙ্গামাটি জেলার পাকুয়াখালীতে নিরীহ এবং নিরস্ত্র বাঙালি কাঠুরিয়াদের উপর নির্মম হত্যাকান্ড চালিয়ে তাদের বিভৎস মানসিকতার এক জঘন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। পাকুয়াখালী গণহত্যা  শান্তিবাহিনীর নৃশংসতম গণহত্যা কান্ডের অন্যতম ঘটনা। সেদিন শান্তিবাহিনী মিটিং করার নামে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ডেকে নিয়ে ৩৫ জন নিরীহ বাঙালী কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সেদিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তথাকথিত শান্তিবাহিনী নামক পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে যে, শান্তিবাহিনী নামক পাহাড়ি সন্ত বাহিনীর  সন্ত্রাসী জনগোষ্টি সেদিন এতগুলো মানুষকে হত্যা করতে একটিও বুলেট ব্যবহার করেননি, হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়েএবং বন্দুকের বেনেট আঘাত করে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে নিরীহ কাঠুরিয়া গুলোকে হত্যা করেছিল।সে সময় ইউনুছ মিয়া নামে এক বাঙালী কাঠুরিয়া পালিয়ে আসতে পারায় এত বড় হত্যাকান্ডের খবর জানা সম্ভব হয়েছিল এবং সেই কাঠুরিয়াদের লাশ উদ্ধার করে আনার সক্ষম হয়েছিল। সেই থেকে পার্বত্য বাঙালীরা এই দিনটিকে কাঠুরিয়া হত্যাকান্ড দিবস হিসেবে পালন করে এবং এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে আসছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এত বড় হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ২৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কারো কোন বিচার না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালীরা।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here