প্রসঙ্গ সংলাপ/ বড় দুই দলই চলছে উল্টো পথে

0
470
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোগো/ সংগৃহীত

 

 

*নির্বাচন নিয়ে সংলাপ প্রয়োজন- মনে করছে না আওয়ামী লীগ

*পদত্যাগ করতেই হবে, শর্তহীন সংলাপ নাকচ বিএনপির

 

আলোকিত ডেস্ক :

চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে অর্থবহ সংলাপই শেষ ভরসা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ দেশের বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আলোচনার টেবিলে বসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আর এ উদ্যোগ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তরফ থেকেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে ‘শর্ত’ জুড়ে দিলে এই সংলাপ দিনশেষে অর্থহীনই হবে। এতে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকবে। বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সমন্বয়ে গঠিত এ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনদের পাঁচটি সুপারিশ করেন তারা। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও সংকট সমাধানে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনও দুই বড় দলকে আলোচনার টেবিলে বসার অনুরোধ জানিয়েছে। কেউ শর্ত জুড়ে দিয়ে আবার কেউ শর্ত ছাড়াই একটেবিলে বসার পরামর্শ দিয়েছে আওয়ীমী লীগ ও বিএনপিকে। পাশাপাশি প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও নির্বাচন সামনে রেখে চলমান সংকট আরও প্রকট হওয়ার আগেই সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথে হাঁটার জন্য দুই বড় দলকে একটেবিলে বসতে বলেছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে-দুই বড় দলই চলছে উল্টো পথে। তারা যার যার অবস্থানে অনড়, কেউ কাউকে ছাড় দিতেও নারাজ। নির্বাচন নিয়ে সংলাপ প্রয়োজন- মনে করছে না আওয়ামী লীগ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক সংলাপের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয় আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট আছে বলেও দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করে। পরে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে প্রতিনিধি দলটি বিবৃতির আকারে তাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটির প্র্রয়োজন মনে করে না দেশের বর্তমান শাসক দল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ দলটির জোট যে এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে তার মধ্যে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি রয়েছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি ভোটে অংশ নেবে না ও নির্বাচন প্রতিহত করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। এ দাবিগুলো আগেই নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্বে থাকা এবং সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। এ সময় আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে এবং এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেবে না বলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ আছে কিনা- সেটিও জানতে চায় প্রতিনিধি দল। আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি যে এক দফা দাবি করেছে সেটা করেই দলটি সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফের গঠন, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্বাচন কমিশন বাতিল- এগুলো সম্ভব নয় বলে প্রতিনিধি দলকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় এ সব বিষয়ে জানান। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, নভেম্বরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কোনো সংলাপে যাবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এটাই আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। যে দলগুলো আসবে তাদের অংশগ্রহণেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি যে দাবিগুলো করছে সেগুলোয় ছাড় দেওয়া হবে না। যদি আলোচনা করতেই হয় দাবিগুলো ছেড়ে আসতে হবে বিএনপিকে। তাছাড়া দলটি নির্বাচনে না এলেও কোনো সংকট তৈরি হবে বলেও মনে করেন না ক্ষমতাসীনরা। যে কারণেই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন শাসক নেতারা। গত ১৫ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ যে চারটি শর্ত দিয়েছে বিএনপি- সেগুলো প্রত্যাহার করা হলে সংলাপের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বিএনপি সংসদের বিলুপ্তি চায়, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। সংলাপ হলে শর্ত কীসের? বিএনপির কোনো শর্তযুক্ত সংলাপে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে না। গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) এ ব্যাপারে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে। স্বল্প আলাপে তিনি বলেছেন,নির্বাচন নিয়ে কোনো সমস্যা তো নাই যে সমাধানের জন্য সংলাপ করতে হবে। সংলাপের কি প্রয়োজন আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে; নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে; রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে। এখানে কে আসবে, কে আসবে না সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কেউ সংলাপ করতে চাইলে নো কন্ডিশন, উইদাউট কন্ডিশনে আসতে হবে। পদত্যাগ করতেই হবে, শর্তহীন সংলাপ নাকচ বিএনপির: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের পরিষ্কার কথা, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলপ্ত করুন, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন হবে। সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য আসার পরদিন গত সোমবার নয়াপল্টনে যুবদলের সমাবেশে বক্তব্যে এসব কথ বলেন তিনি। এ বক্তব্য থেকে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এই সমাবেশ হয় । বাংলাদেশে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত’ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী দল পরামর্শ দিয়েছে । এ প্রসঙ্গে  মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আমরা তখনই কোনো আলোচনা করতে রাজি আছি, যখন বিএনপি সমস্ত শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনায় আসবে। সবার আগে কিছু প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কাছে। আপনারা যে কথা বলছেন, সরকারে যে বসে আছেন আপনারা কি সংবিধানভাবে বৈধ? এটা প্রমাণ করতে হবে আপনাকে। সংবিধান পরিবর্তন করে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে এসেছেন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। অবৈধভাবে আপনারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক একটা ছোট রায় দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন যে, এটা (তত্ত্বাবধায়ক) প্রাসঙ্গিক নয়, (সংবিধানের সঙ্গে) সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আরও দুইটা নির্বাচন এই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করা যেতে পারে।  তাদের শর্ত ছিল বিচারককে (প্রধান উপদেষ্টা) করা যাবে না। সেই শর্ট রায় ১৬ মাস পরে পূর্ণাঙ্গ রায় হিসেবে বেরিয়েছিল। কিন্তু শর্ট ভার্ডিক্ট ও পূর্ণাঙ্গ ভার্ডিক্টে কোনো মিল ছিল না। পূর্ণাঙ্গ ভার্ডিক্ট দেওয়ার আগে সংসদে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতারণা করে আইনটা পাস করেছিল। আজকে আপনারা বলছেন, সংবিধানের ভিত্তিতে হতে হবে। তাহলে সবার আগে আপনাকে (শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার) পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, আপনারা অবৈধ। পেছনে ফেরার সময় নেই: কয়েক দিনের মধ্যেই সরকার পতনের ‘চূড়ান্ত আন্দোলন’ ঘোষণা হবে জানিয়ে নেতা-কর্মীদের ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি নিতেও বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, একটাই লক্ষ্য আমাদের এখন যে, সরকারের পতন ঘটাতে হবে। একটাই লক্ষ্য যে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। কথা একটাই, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে লড়াই করছি, অনেক ভাই চলে গেছে, প্রাণ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে; আমাদের অনেক মা-বোনের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে, আমাদের অনেক সন্তান পিতৃহারা হয়েছে, অনেক মা সন্তানহারা হয়েছে, আমাদের পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সময় নেই। যু্বদলের এই সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে ফখরুল বলেন, শেষ পর্যায়ে এসে তারা দেশের সব মানুষের যে আশা-সাহস, এটাকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার, যারা আমাদের বুকের ওপর পাথরের মতো বসে আছে, তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। সংকট থেকে মুক্ত হতে  সংলাপ জরুরি বলছে জাতীয় পার্টি:  সংলাপ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সংলাপ করতে হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলকেই ইগো থেকে সরে আসতে হবে। এক্ষেত্রে একেবারে শর্ত ছাড়া যেমন সংলাপ হয় না, আবার সব শর্ত মেনেও সংলাপ হয় না। আমরা মনে করি, দেশের জনগণকে দল দুটি ভালো বাসলে তারা ইগো না দেখিয়ে সংলাপে বসবে। বর্তমানে দেশে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যে সংকট, তা থেকে মুক্ত হতে একটা সংলাপ খুবই জরুরি। সংলাপ নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী— জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো সরকারকে সবসময় সংলাপের আহ্বান করতে বলছি। এখন লোক দেখানো আহ্বান করলে তো হবে না। আমরা সংলাপের পক্ষে আছি। বড় দলের এই বিপরীতমুখী অবস্থান সত্ত্বেও আলোচনার টেবিলে বসে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চায় জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা সব সময় বলেছি, বহুবার বলেছি, আলোচনায় বসে সংকটের সমাধান বের করা জরুরি। আমরা মনে করি, অবশ্যই সংলাপের প্রয়োজন আছে। তবে দুই প্রধান দল যেভাবে যার যার অবস্থানে অনড় তাতে আমার মনে হয়, সংলাপে বসলেও কোনো সুফল মিলবে না। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এর আগে নানা দফায় সংলাপে বসলেও এর ফলাফল খুব একটা ইতিবাচক কখনো পাওয়া যায়নি। কখনো তারা নিজেরা আলোচনার টেবিলে বসেছে, কখনো তারা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আলোচনায় বসেছে, দিনশেষে ফল আশানুরূপ হয়নি। এক-এগারোর জরুরি অবস্থার আগে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল জলিল এবং বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ওই সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দফায় দফায় বৈঠক করেন। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি। এরও আগে ১৯৯৪ সালের শেষদিকে কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রতিনিধি স্যার নিনিয়ান স্টেফানের মধ্যস্থতায় এবং পরে ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেজের মধ্যস্থতায় আলোচনার টেবিলে বসেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ আলোচনারও সুফল পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার আশ্বাস দেন তিনি। যদিও পরবর্তী সময়ে বিরোধীরা ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, এমনকি দিনের ভোট রাতেই করার অভিযোগ আনেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ভিত শক্ত করতে হলে, সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বা আলাপ-আলোচনা করে এর সমাধান করা উচিত। কারণ, সংলাপ ছাড়া এ দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। আলোচনা ছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তবে এটা ঠিক, অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, দুই বড় দল নিজেরা আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। বরং তারা একসঙ্গে বসে মারামারি করবে। তাই সংলাপে তৃতীয় পক্ষকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে রাখা প্রয়োজন। অতীতেও এরকম বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থিতিতে সংলাপে বসার নজির রয়েছে, তাই এটা নতুন কিছু না।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ অক্টোবর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here