আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
গাজার হাসপাতালে ইহুদি রাষ্ট্রটির নজিরবিহীন হামলায় অন্তত ৫শ মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর ব্যর্থ রকেট উৎক্ষেপণকে দায় দিয়েছে, কিন্তু গোষ্ঠীটি তা অস্বীকার করেছে। রযটার্স জানিয়েছে, তারা হাসপাতালে হামলায় নিহতের সংখ্যা ও এর দায় নিয়ে পরস্পরবিরোধী দাবি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে হওয়া হামলায় কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং উদ্ধারকারীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মৃতদেহ বের করে নিয়ে আসছে। এর আগে গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের প্রধান আল জাজিরা টেলিভিশনকে বলেছেন, গত মঙ্গলবার আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে ওই হামলায় তিনশর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিহতের সংখ্যা অন্তত ৫০০ বলে জানিয়েছেন। এ হামলার জন্য কারা দায়ী এবং এতে কতোজন নিহত হয়েছেন, এসব তথ্য পরিষ্কার হওয়ার আগেই ঘটনাটি ইতোমধ্যে সংকটে থাকা অঞ্চলটিতে আরও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আল জাজিরার দেখানো ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রক্তমাখা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকা লোকজনকে বের করে আনার জন্য উদ্ধারকর্মীরা উন্মত্তের মতো ছুটাছুটি করছেন। উদ্ধারকর্মী ও বেসামরিকদের অন্তত চারটি মৃতদেহ বডি ব্যাগে করে সরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এই হামলার আগে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ভূখণ্ডটিতে ১১ দিন ধরে চলা ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়ে গেছে। ৭ অক্টোবর ভোরে গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা আকস্মিক এক হামলায় ইসরায়েলকে হতবিহ্বল করে দেয়। তাদের এই নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ১৩০০ জন নিহত হন। হামাসের যোদ্ধারা প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায়। এরপর থেকে গাজায় ভয়াবহ বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারা হামাসকে নির্মূল করার প্রত্যয় জানিয়েছে। হাসপাতালে বোমা হামলার পর গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পর পশ্চিম তীরের শহরগুলোতে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এদিকে হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির মহাপরিচালক এক্স নেটওয়ার্কে এক পোস্টে এ নিন্দা জানান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহায্য সংস্থা মেডগ্লোবালের জাহের সাহলুল এ হামলাকে কোনো চিকিৎসা স্থাপনায় ২১ শতকের সবচেয়ে বাজে আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। নিন্দা জানিয়েছে মিশর এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো। গাজার হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ‘হতভম্ব’ জাতিসংঘ, কঠোর নিন্দা: জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনায় তিনি ‘হতভম্ব। এ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি। ইউএন নিউজে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) দেওয়া পোস্টে আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনে সব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজা সিটির আল-আহলি আল-আরবি হাসপাতালে বিমান হামলা হয়। এ ঘটনায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল একে অপরকে দোষারোপ করছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ বিমান হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামাসের ছোড়া রকেটই ওই হাসপাতালের ওপর পড়েছে। এক্সে দেওয়া পোস্টে গুতেরেস লিখেছেন, আন্তর্জাতিক আইনে সব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। এর আগে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি স্কুলে হামলার ঘটনায়ও নিন্দা জানিয়েছেন গুতেরেস। তাঁর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান ভল্কার তুর্ক হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুরোপুরি জানতে পারিনি। তবে এটা পরিষ্কার যে অবিলম্বে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। স্থল অভিযান শুরু করার হুমকি দিয়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য পরিষেবায় ৪১ বার হামলা করেছে ইসরায়েল: ডব্লিউএইচও: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও ) জানিয়েছে ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর থেকে ৪১ বার অঞ্চলটির স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা। ডব্লিউএইচও’র মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর থেকে, গাজায় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোতে ৪১টি নিশ্চিত আক্রমণ হয়েছে। সক্রিয় দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মোট ১১ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিহত হয়েছেন এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন। হামলা অব্যাহত থাকায় এই সংখ্যা বাড়তে পারে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাসারেভিচ বলেন, এই অঞ্চলের হাসপাতালগুলো মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে লড়াই করছে, যা তাদের সক্ষমতা সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। তিনি বলেন। সংগ্রহ করা ওষুধ শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু গাজার সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অসাধারণভাবে তাদের দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাচ্ছেন। তদুপরি, গাজায় জ্বালানির একটি গুরুতর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, যা হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম চালানোর জন্য অপরিহার্য। জাসারেভিচ জোর দিয়ে বলেন, উত্তর গাজার হাসপাতালগুলো খালি করার জন্য ইসরায়েলের দাবি বাস্তবায়ন করা বাস্তবিকভাবে অসম্ভব। তিনি বলেন লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগী যেমন ইনকিউবেটরে নবজাতক, ভেন্টিলেটরে কেমো ডায়ালাইসিসের রোগী, গর্ভাবস্থায় জটিলতা নিয়ে আসে মহিলাদের সরানো যায় না। তাই, আমরা ইসরায়েলকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাই। ডব্লিউএইচও এবং জাতিসংঘের অধিভুক্ত মানবিক সহায়তাকারী সংগঠন গুলোর আনা প্রায় ৮০ মেট্রিক টন অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামসহ বিভিন্ন ওষুধ গাজায় সরবরাহের জন্য মিশরের রাফাহ সীমান্তে অপেক্ষমান। এই ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করাতে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে, পরিশেষে এই বৈরিতার অবসান দরকার যা মানুষের জীবন বাঁচাতে আমাদের সাহায্য করবে। নিহত বেড়ে ৩ হাজার, আহত সাড়ে ১২ হাজার: ইসরায়েলের হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) পর্যন্ত নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার জনে। আহত লোকের সংখ্যাও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে এই খবর দিয়েছে বিবিসি। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। জবাবে গাজায় হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। এই হামলার এক পর্যায়ে ইসরায়েল উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে দেয়। গাজায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। দেশটি এক পর্যায়ে উত্তর গাজা থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে সরে যেতে বলে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দার প্রাণ গেছে। আর আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৫০০ বাসিন্দা। অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে আহত ১ হাজার ২৫০ ছাড়িয়েছে। সেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬১ ফিলিস্তিনি। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র আরেক আপডেটে জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় এবং জ্বালানির অভাবে সেখানকার হাসপাতালগুলো কার্যকর ক্ষমতার পতনের দশায় প্রবেশ করেছে। ইসরায়েলের সতর্কবার্তা জারির পর উপত্যকাটির উত্তরাঞ্চল থেকে ৬ লাখ লোক দক্ষিণের দিকে পালিয়ে গেছেন। দক্ষিণে খান ইউনিসে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে, সেখানে একটি বাড়িতে ৯০ জনেরও বেশি লোক বাস করছে। সেখানে লোকজন সড়কে ঘুমাচ্ছে, পানের পানি সেখানে সীমিত। খাবারের জন্য লোকজন লাইন ধরে আছে। হামাসের হামলায় ৩১ মার্কিন নাগরিক নিহত: হোয়াইট হাউজ: ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলায় প্রায় ৩১ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউজ। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত চলমান সংঘাতে এসব মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির। তবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, ইসরায়েলে ১৩ মার্কিন নাগরিক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে বুধবার (১৮ অক্টোবর) ইসরায়েলে সফর করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এদিকে গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৫০০ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গাজায় হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি যুদ্ধাপরাধ। হাসপাতালটি শত শত আহত ও অসুস্থ মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল। হাসপাতালটি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতাল নামেও পরিচিত ছিল। এটি একই সঙ্গে যুদ্ধে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের আশ্রয়স্থল এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পর পশ্চিম তীরের শহরগুলোতে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। হাসপাতালে হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের পথে বাইডেন: ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন জানাতে দেশটিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেন গতকাল বুধবার ইসরায়েলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের পথে রওনা হওয়া বাইডেন ছড়িয়ে পড়া আঞ্চলিক উত্তেজনার কিছুটা আঁচ পেতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আম্মানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তা আল সিসির সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠক বাতিল করেছে জর্ডান। আব্বাস নিজেও বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। গাজা সংকটে নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি: ইসরায়েলের মুহুর্মুহু হামলায় গাজায় তীব্র সংকটের পরিস্থিতিতে ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংঘাতে বিরতির’ আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব এনেছে ব্রাজিল। রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার ওই প্রস্তাবের ওপর ভোট হয়েছে। সংঘাত বিরতি দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে। কূটনীতিকরা বলছেন, গত মঙ্গলবার গাজার একটি হাসপাতালে বোমা বর্ষণে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও রাশিয়ার অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে নিরাপত্তা পরিষদে। হাসপাতালে ‘গণহত্যা’ চালানোর জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে দূষছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মনসুর। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে ওই হামলার পেছনে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীকে দায়ী করছেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত গিলাড এরদান। তবে ইসলামিক জিহাদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ব্রাজিলের খসড়া প্রস্তাবে সোমবার ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আরও সময় দিতে ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়। বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া: গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। একে ‘গণহত্যা’ অভিহিত করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক। হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যুকে ‘জঘন্য অপরাধ’ অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি বাহিনীর হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় বলেছে, ইসরায়েল যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে, এতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না, গাজায় হাসপাতালে হামলা তার সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গাজার আল–আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন। মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসি বিবৃতি দিয়ে হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরানও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে। জঘন্য এ অপরাধের মাধ্যমে ইহুদি রাষ্ট্রটি আরও একবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকাতেই তুলে ধরেছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও এ হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গাজার হাসপাতালের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগও। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের অবিলম্বে এ ‘ট্রাজেডি’ বন্ধ করতে হবে। এদিকে গাজার হাসপাতালে হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একটি জরুরি বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা আল–মিজান। সংস্থাটি বলছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, হাসপাতালগুলো ‘নিরাপদ স্থান’ হিসেবেই বিবেচিত। গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। যুদ্ধের কিছু নিয়মনীতি আছে। কোনো হাসপাতালে এভাবে হামলা করার ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।গাজার হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮ অক্টোবর ২৩/ এসবি