আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে আরও কয়েক লাখ মানুষ। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাজায় নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। অর্থাৎ অবরুদ্ধ এই উপত্যকার প্রায় অর্ধেক মানুষই এখন বাস্তুহারা। খবর আল জাজিরার। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনডব্লিউআরএ জানিয়েছে, গাজায় সংস্থাটি পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয়ের খোঁজে আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে ইউএনডব্লিউআরএর এসব স্কুলের অবস্থা ক্রমাগত ভয়াবহ হচ্ছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই স্কুলগুলোর মধ্যে একটি মধ্য গাজার আল-মাগাজি শরণার্থী শিবির। এখানে প্রায় চার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়। ইসরায়েলি বিমান হামলার সময় এসব মানুষ আহত হন। পরে সোমবার বিকেলে এদের মধ্যে কমপক্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত ৫০০ মানুষ নিহত হয়। গাজায় হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি যুদ্ধাপরাধ। হাসপাতালটি শত শত আহত ও অসুস্থ মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল। হাসপাতালটি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতাল নামেও পরিচিত ছিল। এটি একই সঙ্গে যুদ্ধে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের আশ্রয়স্থল এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো। এ ঘটনার পর পশ্চিম তীরের শহরগুলোতে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এদিকে হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির মহাপরিচালক এক্স নেটওয়ার্কে এক পোস্টে এ নিন্দা জানান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহায্য সংস্থা মেডগ্লোবালের জাহের সাহলুল এ হামলাকে কোনো চিকিৎসা স্থাপনায় ২১ শতকের সবচেয়ে বাজে আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। ফিলিস্তিনে ত্রাণ পাঠাবে বাংলাদেশ: বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠাবে। বুধবার গণভবনে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৭টায় বৈঠক শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শেষ হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। পররাষ্ট্র সচিব জানান, এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। সাক্ষাতে অবিলম্বে গাজায় সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের হামলায় নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সমস্যার মূলে যা আছে সেটা চিহ্নিত করে বিশ্বনেতাদের ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। এসময় প্রধানমন্ত্রী মুসলিম উম্মাহকে এক থাকার আহ্বান জানান। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জানিয়েছেন, ঐক্য না থাকলে ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে না। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনে নিপীড়িত মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠাবে। গাজায় ২৭ টন মানবিক সহায়তা পাঠাবে রাশিয়া: গাজায় ২৭ জন মানবিক সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। সহায়তা হিসেবে বেশির ভাগই খাদ্য পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। গাজা উপত্যকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। গাজায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের কারণে চরম মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিশরের প্রেসিডেন্ট সেখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে একটি সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতে রাজি হয়েছেন। এতে ত্রাণবাহী ২০টি ট্রাক প্রবেশ করতে পারবে বলে জানা গেছে। মিশর সীমান্ত খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরই রাশিয়া মানবিক সহায়তা পাঠানোর কথা জানিয়েছে। মিশর-গাজার রাফা ক্রসিং থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর সিনাই পর্বতের আল আরিশ শহরের কাছে পন্যবাহী একটি বিমান অবতরণ করেছে। এরপর এসব পণ্য গাজায় পৌঁছে দেওয়া হবে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাফাহ টার্মিনাল ব্যবহার করে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের জন্য শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শনিবার ফিলিস্তিনের জন্য আমাদের শোক দিবস ঘোষণা করেছি। সেদিন আমাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, ইজরায়েল যেভাবে হাসপাতাল হামলা করে নারী-শিশুদের হত্যা করেছে, আমরা একটা নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের কথা হচ্ছে, দ্রুত এটা বন্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনিরা তাদের ন্যায্য জায়গা যেন ফেরত পায়, যে জায়গাগুলো দখল করছে তাদের দিতে হবে। সেখানে শুধু মুসলমান নয়, খ্রিষ্টান, ইহুদি অনেকেই ছিল, যারা মারা গেছেন। আমি অনুরোধ করব আগামী শুক্রবার সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মসজিদে যেন জুমার পরে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য দোয়া এবং প্রার্থনা করা হয়। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের আজকের যে শিশু ও নারী আহত রয়েছে, তাদের জন্য ইতোমধ্যে আমি আমার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলে দিয়েছি ওষুধের ব্যবস্থা করতে। আমাদের অফিস থেকে যোগাযোগ করে তাদের জন্য কিছু শুকনো খাদ্য বা শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য আমরা পাঠাবো। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নিচ্ছি। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য থাকুক আমরা দুর্গত মানুষের পাশে আছি। সকাল হতে না হতেই গাজায় দফায় দফায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৪০: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি শিশুও রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে চালানো হামলায় প্রাণ হারান তারা। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় চলা ইসরায়েলের বিরামহীন হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলমান যুদ্ধের ১৩তম দিনে বৃহস্পতিবার সকালেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে এবং এসব হামলায় ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে। ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজা শহরের দক্ষিণে অবস্থিত খান ইউনিসের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাত শিশুসহ নয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও অভিযানে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৪৭৮ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন আরও ১২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার এই তথ্য জানায়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কেদরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৪৭৮ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন মাত্রার আঘাতে ১২ হাজার ৬৫ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। হামলার শিকার শত শত ফিলিস্তিনি এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলেও জানান তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৯ অক্টোবর ২৩/ এসবি