*রাজনীতির পাঁচ ইস্যুতে নজর রাখবে তিনমাস
আলোকিত প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার বাংলাদেশ সরকারকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তার দেশের অবস্থান আবারো স্পষ্ট করে গেছেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরো দুই কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। জানা গেছে, তিনি বাংলাদেশ সফরে অংশহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথাই ঘুরেফিরে বলেছেন। আর বাংলাদেশে যাতে সেরকম একটি নির্বাচন হয়, তার সার্বিক বিষয় দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আগামী তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখবে বলে জানিয়ে গেছেন। মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে যে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে, তার সঙ্গে একমত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওই পাঁচ দফার শীর্ষে আছে নির্বাচনের আগে একটি অর্থবহ সংলাপ। পাশাপাশি রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন। দ্বিতীয় সুপারিশে তারা নির্বাচনের সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে অনুরোধ করেছে। সেই সঙ্গে নাগরিকদের ভিন্নমতকেও সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তৃতীয়ত, অহিংসার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। চতুর্থত, সব রাজনৈতিক দলকে অর্থবহ ও সমান রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে, যেন তা স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। সবশেষে নাগরিকেরা যেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত এই বিষয়গুলোই দেখবে আগামী তিন মাস। বাংলাদেশে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল এবং আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের কথা রয়েছে। কিন্তু প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখনো যার যার অবস্থানে অনড় আছে। বিএনপি এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আর সরকার এবং শাসক দল আওয়ামী লীগ এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে আছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবারই বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বার্তা দিচ্ছে। তারা আগামী তিন মাস এই বিষয়েই তীক্ষ্ম নজরদারী করবে। তারা যে ধরনের নির্বাচন চায় তার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, তা তারা দেখবে। আইনের কী সংশোধন করে, নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা এগুলো সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে যায় কিনা তা তারা মনিটরিং করবে। তার কথা, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিষয়ে কোনো কথা বলবে না। তবে তাদের রিআ্যাকশন বোঝা যাবে। সার্বিক ব্যবস্থায় তার হ্যাপি না আনহ্যাপি তা প্রকাশ করবে তাদের কাজের মধ্য দিয়ে। ভিসানীতি, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়া, বাংলাদেশে ট্র্যাভেল অ্যাডভাইজারিকে একটা ইস্যু করার মধ্য দিয়ে তারা তা প্রকাশ করছে। আইএমএফ-এর দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। আগামী তিন মাসে আমরা হয়তো আরো কিছু দেখতে পাবো। তিনি মনে করেন, চাইলে হয়তোবা একটি নির্বাচন করে ফেলা যাবে, কিন্তু সেটা যদি তাদের চাওয়ার সঙ্গে না মেলে, তাহলে নির্বাচনের পর আরো কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সেটা হয়তো দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে না। দুই দল যা ভাবছে: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের সামনে তো এখন বার্নিং ইস্যু প্যালেস্টাইন আছে। সেখানে চারটি বৃহৎ শক্তির বিরোধিতার কারণে জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলো না। সেখানে আমাদের দেশে এই অভদ্র, অসভ্যদের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একা তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে বেশি কিছু করতে পারবে বলে আমাদের কাছে পরিস্কার নয়। সেজন্য আমরা আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি আর তারাও তাদের তীক্ষ্ম নজরদারি অব্যাহত রাখুক। আমরা ভেতর থেকে চাপ দিচ্ছি, তারা বাইরে থেকে চাপ রাখুক। তার কথা. র্যাব- পুলিশের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মার্কিন ভিসানীতি কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। সে কারণেই একজন বিচারপতি বলতে পেরেছেন, ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’। একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানি হচ্ছে। তারা সেটা বলতে পারছেন। কিন্তু আমাদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন দেখছি না। গ্রেফতার, ধরপাকড় আগের মতোই চলছে। ক্যান্সারের রোগীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। গত বুধবার সমাবেশে আসার সময় পথে পথে হয়রানি করা হয়ছে। তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংলাপের পরিবেশ তো নাই। যেখানে ওবায়দুল কাদের সাহেবের মতো লোক বলেছেন , বিএনপির পরিণতি নাকি শাপলা চত্ত্বরের মতো হবে, তাহলে তো তাকে এখন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন যে, শাপলা চত্ত্বরে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। যারা হন্তারক, কথায় কথায় মানুষ হত্যা করে, তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? এদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দেখবে নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হচ্ছে কিনা, কেউ নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে কিনা, কেউ সন্ত্রাস করছে কিনা। এটা তো ভালো কাজ। তারা তো সুষ্ঠু নির্বাচনই চায়। যারা নির্বাচন বর্জন করবে, নির্বাচন করতে দেবে না, শান্তি ভঙ্গ করবে, তাদের ওপর তারা নজরদারি করবে। এটা আমাদের ওপর কোনো চাপ নয়। যারা সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদকে লালন করে, তাদের ওপর চাপ। বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন. সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। যারা সংবিধান মানবে, তারা নির্বাচনে আসবে। যারা সংবিধান মানবে না, তারা নির্বাচনে আসবে না। যারা সংবিধানের বিরুদ্ধে যাবে, তাদের ব্যাপারে আমরা কী বলতে পারি। সংবিধানে তো নিবন্ধিত কোনো দলের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। তার কথা, আমরা তো সংলাপ চাই। কিন্তু কোনো শর্ত দিয়ে সংলাপ হবে না। সংলাপ হতে হবে খোলা মনে। আপনার দিক থেকে প্রস্তাব আসতে হবে। আপনি সংলাপ চান কিনা তা বলতে হবে। কোনো শর্ত দিয়ে সংলাপ হবে না।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৯ অক্টোবর ২৩/ এসবি