হিজবুল্লাহ নিয়ে উদ্বেগ ইসরাইলের

0
230

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

 

 

ইসরাইলের হামাসের চেয়েও বড় ভয় এখন লেবাননভিত্তিক জিহাদি সংগঠন হিজবুল্লাহ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিজবুল্লাহ নিজেদের দলকে একটি ক্রমবর্ধমান কার্যকর সামরিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দলটি তার দীর্ঘকালীন শত্রু  ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন লড়াইয়ে দেশটির জন্য শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ২০২১ সালে এক লাখ যোদ্ধা রয়েছে বলে দাবি জানিয়েছিল দলটি। যদিও ইসরাইলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ (আইএনএসএস) জানিয়েছে, তাদের এই যোদ্ধার সংখ্যা অর্ধেক। স্বাধীন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ইভা কৌলোরিওটিস অনুমান করেছেন, হিজবুল্লাহর ২০ হাজার উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা রয়েছে। আর রিজার্ভ সেনা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। রিজার্ভ সেনারা লেবাননে তিন মাস আর ইরানে তিন মাসের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগারে এক লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএনএসএস। যার মধ্যে রয়েছে শত শত শক্তিশালী রকেট। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ২০২০ সালে অনুমান করেছে, এই দলের কাছে ২০ হাজার সক্রিয় যোদ্ধা ও প্রায় ২০ হাজার অস্ত্রের রিজার্ভ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ছোট অস্ত্র, ট্যাঙ্ক, ড্রোন ও  বিভিন্ন দূরপাল্লার রকেট। হিজবুল্লাহ গত মে মাসে ইসরাইলে একটি আন্তঃসীমান্ত অভিযান চালিয়েছে। যার মধ্যে ইরান, সিরিয়া, রাশিয়া ও চীনের অস্ত্রব্যবস্থাও ছিল। হিজবুল্লাহ মূলত একটি লেবাননভিত্তিক শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত রাজনৈতিক দল। যার রয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংগঠন ও সামাজিক পরিষেবা নেটওয়ার্ক। দলটির মূল লক্ষ্য ইসরাইল আর মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা প্রভাবের বিরোধিতা করা। হিজবুল্লাহর উত্থান: ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত লেবাননে ১৫ বছরের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন হিজবুল্লাহর আবির্ভাব ঘটে। সেসময় আরব রাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ হিসাবে ইরান ও তার ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) লেবাননের উদীয়মান ইসরাইলবিরোধী গোষ্ঠীকে বিভিন্ন তহবিল ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে। আর এই দলই হিজবুল্লাহ নামটি গ্রহণ করেছিল। যার অর্থ ‘আল্লাহর দল’। হিজবুল্লাহ ইরানের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে ওঠেছিল। হিজবুল্লাহ নিজেকে একটি শিয়া প্রতিরোধ আন্দোলন হিসাবে গড়ে তুলেছে। ১৯৮৫ সালের একটি ইশতেহারে নিজেদের মতাদর্শকে অন্তর্ভুক্ত করে। ইশতেহারে লেবানন থেকে পশ্চিমা শক্তিকে বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দেয় দলটি। এতে ইসরাইল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার আহ্বানও জানানো হয়। এছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। দলের সংগঠন: হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসারাল্লাহ (৬৩)। তিনি ১৯৯২ সালে ইসরাইল গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পূর্ববর্তী নেতা আব্বাস আল-মুসাভিকে হত্যার পর সেক্রেটারি-জেনারেলের দায়িত্ব নেন। নাসারাল্লাহ সাত সদস্যের শূরা কাউন্সিল ও এর পাঁচটি উপ-কাউন্সিলের তত্ত্বাবধান করেন। উপ-কাউন্সিলগুলো হলো-রাজনৈতিক সমাবেশ, জিহাদ সমাবেশ, সংসদীয় সমাবেশ, নির্বাহী পরিষদ ও বিচারিক সমাবেশ। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী হিজবুল্লাহর কয়েক হাজার সদস্য ও সমর্থক রয়েছে। হিজবুল্লাহ লেবাননের বেশিরভাগ শিয়া-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দলটির অবস্থান লেবাননে হলেও এর ইশতেহারে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এর কার্যক্রম শুধু অভ্যন্তরীণ সীমানার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে পরিচালনা করা হয়। লেবাননের রাজনীতিতে হিজবুল্লাহর ভূমিকা : হিজবুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে লেবাননের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। সেসময় দলটির আটজন সদস্য সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলটি ২০০৫ সাল থেকে মন্ত্রিসভা পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আর ২০০৯ সালে একটি আপডেট ইশতেহারের মাধ্যমে মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেয় দলটি। ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে হিজবুল্লাহ লেবাননের ১২৮ সদস্যের সংসদে ১৩টি আসন পায়। ইসরাইলের প্রতি এই দলের অবস্থান: ইসরাইল হিজবুল্লাহর প্রধান শত্রু। ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলের দখলদারিত্বের সময় হিজবুল্লাহ অন্যান্য দেশে ইহুদি ও ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছিল। ২০০০ সালে ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও এখনো এটি হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষ অব্যাহত রেখেছে। হিজবুল্লার ২০০৯ সালের ইশতেহারে ইসরাইল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে হিজবুল্লাহর সম্পৃক্ততা: হামাস ইসরাইলে অভিযান চালানোর পর হিজবুল্লাহও ইসরাইল-লেবানন সীমান্তজুড়ে গুলি চালিয়েছে। এই কার্যক্রমকে দলের নেতারা হামাসের সঙ্গে ‘সংহতি’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরাইলে হিজবুল্লাহ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল বলেও জানা গেছে। হামাসকে আরও সমর্থনের ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছে দলটি। সংগঠনের ভবিষ্যৎ: বিশেষজ্ঞদের মতে, হিজবুল্লাহর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক প্রসারিত হচ্ছে। তবে দলটি ইসরাইল অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে আগ্রহী নয়। এর পরিবর্তে কিছু গোপন অভিযান চালাতে পারে দলটি। গাজা আক্রমণ নিয়ে ইসরায়েলের চূড়ান্ত পরিকল্পনা কী? ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীসহ দেশটির অনেক কর্মকর্তাই বলেছেন, ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। কিন্তু এর পরে কী হবে তা খুব একটা সুনির্দিষ্ট করা নেই। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার কাজটা হয়তো বলার চেয়ে করা অনেক কঠিন হতে পারে ইসরায়েলের জন্য। ‘এ শহরে মাটির তলায় এত সুড়ঙ্গ আছে যে তার তুলনায় ভিয়েতকং নস্যি ঠেকে। তারা হামাসকে ট্যাংক, গোলাগুলির মাধ্যমে ধ্বংস করতে পারবে না,’ বলেন একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা। হিজবুল্লাহর হামলা: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, নিজেদের উত্তর ফ্রন্টে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো আগ্রহ নেই ইসরায়েলের। লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ যদি সংযত থাকে, তাহলে সীমান্ত পরিস্থিতি যেমন আছে তেমনই রাখবে ইসরায়েল। রয়টার্স জানায়, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যেই লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে গোলা বিনিময় চলছে ইসরায়েলের। উত্তর ইসরায়েলজুড়ে হামলার সাইরেন শোনা যায়। দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, লেবানন থেকে ছোড়া ৯টি রকেটের মধ্যে তারা ৫টিকে নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় রকেট উৎক্ষেপণ স্থলে কামানের গোলা ছুড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। ইয়োভ গ্যালান্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘উত্তরে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো আগ্রহ আমাদের নেই। আমরা উত্তেজনা আর বাড়াতে চাই না। হিজবুল্লাহ যদি যুদ্ধের পথ বেছে নেয়, তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে, চরম মূল্য। তবে তারা যদি সংযত থাকে, আমরা তাদের সম্মান জানাব এবং পরিস্থিতি যেমন আছে তেমনই রাখব’, যোগ করেন তিনি। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আচমকা হামলার পর গাজায় নিরবচ্ছিন্ন পালটা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকা থেকে হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে চায় ইসরায়েল। কিন্তু এ যুদ্ধ নিয়ে দেশটির কাছে চূড়ান্ত কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। অঞ্চলটিতে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, চলমান সংঘাত কেবল গাজায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। লেবাননের হিজবুল্লাহ ও এর মদতদাতা ইরান হামাসের সমর্থনে নতুন রণাঙ্গনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে পারে — এমন সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকেই। চলমান যুদ্ধ বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এমন আট আঞ্চলিক ও পশ্চিমা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্স-এর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তারা জানান, ইসরায়েলের ‘অপারেশন সোর্ডস অভ আয়রন’ শীর্ষক এ সামরিক অভিযান গাজায় অতীতে ইসরায়েলের পরিচালনা করা যেকোনো অভিযানের তুলনায় অনেক বেশি নৃশংস হবে। তিনজন আঞ্চলিক কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েলের প্রাথমিক কৌশল হচ্ছে গাজার অবকাঠামো ধ্বংস করা, এমনকি তা যদি হয় বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের প্রাণের বিনিময়েও। এছাড়া গাজাবাসীকে মিশরীয় সীমান্তের দিকে ঠেলে দিয়ে তারপর গাজার মাটির তলায় থাকা হামাসের সুড়ঙ্গগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের। খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধপরবর্তী ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নিয়ে তাদেরও পরিষ্কার ধারণা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন, ইসরায়েলের হয়তো হামাসের ওপর বড় কোনো আঘাত হানার পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে, কিন্তু এটি এখনো প্রস্থান-কৌশল তৈরি করে উঠতে পারেনি। ২৩ লাখ বাসিন্দার আবাস গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইসরায়েল এখনো পরিষ্কার কোনো পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেনি বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরব দেশগুলোর কর্মকর্তারাও। ‘গাজার জন্য চূড়ান্ত কোনো পরিকল্পনা নেই ইসরায়েলের। এটির কৌশল হলো হাজার-হাজার বোমা ফেলা, সবকিছু ধ্বংস করা, গাজায় প্রবেশ করা, কিন্তু তারপর কী? তার পরের দিনের জন্য তাদের প্রস্থানের কোনো কৌশল নেই,’ একজন আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন। গত বুধবার ইসরায়েল সফরে বাইডেন বলেছেন, হামাসকে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। তবে তিনি এও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নিউ ইয়র্কে ৯/১১-এর হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু ভুল করেছিল। ফিলিস্তিনিদের বড় অংশ হামাস নন। হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না,’ বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ দেশটির অনেক কর্মকর্তাই বলেছেন, ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। কিন্তু এর পরে কী হবে তা খুব একটা সুনির্দিষ্ট করা নেই। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার কাজটা হয়তো বলার চেয়ে করা অনেক কঠিন হতে পারে ইসরায়েলের জন্য। এ শহরে মাটির তলায় এত সুড়ঙ্গ আছে যে তার তুলনায় ভিয়েতকং নস্যি ঠেকে। তারা হামাসকে ট্যাংক, গোলাগুলির মাধ্যমে ধ্বংস করতে পারবে না,’ বলেন একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা। দুই আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ রয়টার্সকে বলেন, হামাসের সশস্ত্র বিভাগ আল-কাসাম ব্রিগেড ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা গাজায় ইতোমধ্যে ট্যাংক-বিধ্বংসী মাইন ও বিস্ফোরক-সমৃদ্ধ ফাঁদ পেতে রেখেছে। এর আগে হামাসের বিরুদ্ধে তিনবার লড়েছে ইসরায়েল — ২০০৮–৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে। দুইবার দেশটি সীমিত পরিসরে গাজায় স্থল আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু এখনকার মতো ইসরায়েল অতীতে কখনো হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার শপথ করেনি। ওই তিন যুদ্ধে ৪০০০-এর মতো ফিলিস্তিনি এবং ১০০-এর কম ইসরায়েলি মারা গিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনও খুব বেশি আশাবাদী নয়। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, ইসরায়েল হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে, তবে এটি গাজার ক্ষমতা ধরে রাখতে বা গাজা পুনর্দখল করতে চাইবে না। মার্কিন এক সূত্রমতে, আরও একটি সম্ভাবনাময় দৃশ্যপট হতে পারে, ইসরায়েলি বাহিনী যত সম্ভব হামাস সদস্যকে হত্যার বা ধরার চেষ্টা করবে, হামাসের সুড়ঙ্গ ও রকেট কারখানাগুলো ধ্বংস করবে, এবং এরপর ইসরায়েলি হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এটি বিজয় ঘোষণা করবে ও গাজা ত্যাগ করার উপায় খুঁজবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সংযত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ইরান সাইডলাইনে বসে বসে দেখবে না। মার্কিন সেক্রেটারি অভ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন। আরব নেতারা তাকে জানিয়েছেন, তারা ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণকে নিন্দা জানালেও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দলগত শাস্তির বিরুদ্ধে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সমর্থনে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরীবহর পাঠিয়েছে। ওয়াশিংটন আশঙ্কা করছে, ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে লড়াই শুরু করতে পারে ইসরায়েল। তবে মার্কিন সেনাবাহিনী বর্তমান ভূমিকা ছেড়ে এ সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে যাবে — এমন কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি। আঞ্চলিক ওই সূত্ররা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন প্যালেস্টাইনিয়ান অথোরিটিকে (পিএ) নতুন করে শক্তিশালী করার চিন্তা করেছে। ২০০৭ সালে হামাসের কাছে গাজার ক্ষমতা হারায় পিএ। তবে গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত করলে সেখানে পিএ বা অন্য কোনো সংগঠন শাসন করতে পারবে কি না তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। এদিকে গাজার প্রতিবেশী আরব দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ইসরায়েল গাজায় স্থল-আক্রমণ শুরু করলে ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটবে — নতুন করে বিপুলসংখ্যক মানুষ স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হবেন। এর আগে লাখ-লাখ ফিলিস্তিনি জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তারা আশ্রয় নেওয়া দেশগুলোতে এখনো শরণার্থী হিসেবেই অবস্থান করছেন। গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৩০৭, বিধ্বস্ত ভবনে আটকা অনেকই: ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের গাজায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০৭ জন নিহত হয়েছে। এতে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩ হাজার ৭৮৫ জনে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর- আলজাজিরা। জাতিসংঘের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৫২৪ শিশু এবং ১ হাজার ৪৪৪ নারী রয়েছে। এছাড়া সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। গাজায় বিধ্বস্ত ভবনগুলোর নিচে আটকে পড়েছেন অনেকই। গাজার আবাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানকার ৩০ শতাংশ ঘরবাড়ি ইসরায়েলি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।  এদিকে আন্তর্জাতিক এনজিও সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, গড় হিসাবে প্রতি ১৫ মিনিটে একজনেরও বেশি শিশুর মৃত্যু ঘটছে গাজায়। গত ১২ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। এদিকে এরই মধ্যে পানি, খাবার ও জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। ফলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

 

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২০ অক্টোবর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here