বিশৃঙ্খলায় সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা

0
235

 

 

সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ৬ দফা নির্দেশনার কোনোটারই বাস্তবায়ন নেই

 

জাহিদ হাসান হৃদয়: 

 

তুমুল প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সড়কে মৃত্যু কমিয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস করা হয়। ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে সে সময় সড়ক ছেড়ে ঘরে ফেরে শিক্ষার্থীরা। আর সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ৬ দফা নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কোনোটারই বাস্তবায়ন নেই সড়কে। এখনও সড়কজুড়ে দীর্ঘশ্বাস। প্রতিনিয়তই ঝরছে তাজা প্রাণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বিশৃঙ্খলা, আইন না মানাসহ সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণে দুর্বলতা। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দরকার গবেষণা। দেশে এখনো এ ব্যাপারে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে কোনো মানদণ্ডেই দেশের সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে বরং গত ১৫ বছরে আরও অবনতি হয়েছে। নানা প্রণোদনা দিয়ে মোটরসাইকেল কেনায় উৎসাহ জোগানোর সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তা প্রমাণ হয়েছে এই যানে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায়। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যাবে না। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছে বেসরকারি সংগঠনগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দরকার গবেষণা, সড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গাইডলাইন প্রস্তুতকরণ, রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ না করলে সড়কে মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিনই যোগ হবে নতুন নতুন নাম। তারা বলছেন, সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারি কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দায় নিচ্ছে না কেউ। কোনো না কোনো কর্তৃপক্ষকে বা সরকারকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। কমাতে হবে দুর্নীতি। তাহলেই শৃঙ্খলা ফিরতে পারে সড়কে। এছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিনিয়ত ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। দ্রুতগতিতে চলা যানবাহনকে তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ পথচারী অসতর্কভাবে রাস্তা পার হন। রাস্তা পারাপারে শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরেও ডিভাইডার ডিঙিয়ে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন। শিশুসন্তান কোলে নিয়ে নারীরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি ফ্লাইওভারের এপাশ থেকে ওপাশে হামাগুড়ি দিয়ে পার হন। বেপরোয়া চালকরাও ট্রাফিক আইন মানছেন না। শৃঙ্খলা না মানায় প্রতিনিয়তই ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়কে মৃত্যুর মিছিল। যদিও গত ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কোনো গবেষণামূলক কার্যক্রম চলমান নেই। তবে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছ। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের ৩৬০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ রোড সেফটি প্রোগ্রাম (বিআরএসপি) প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। এ প্রকল্পে দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে নিরাপত্তার রেটিং প্রদান বিষয়ক গবেষণামূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত আছে। এ কার্যক্রমের আওতায় সড়কের নিরাপত্তা ও জিওমেট্রির ভিত্তিতে বিভিন্ন জংশন উন্নয়নের সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে ২০২৭ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন হবে। এদিকে নতুন আতঙ্ক বেপরোয়া মোটরবাইক। অতিষ্ঠ সবাই। নিয়ন্ত্রণহীন এই চালকদের উচ্চ শব্দে ছুটে চলার ঘটনা নিত্যদিনের। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত কয়েক বছর রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়তই রাস্তায় নামছে অসংখ্য মোটরসাইকেল। বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সড়কে তৈরি করছে বিশৃঙ্খলা ও যানজট। এমনকি ব্যস্ত সড়কে ফুটপাথের উপর মোটরসাইকেল তুলে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, ট্রাফিকের কোনো সংকেত ছাড়াই চলন্ত গাড়ির ভেতর দিয়ে একে-বেঁকে চলে মোটরসাইকেল। সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরির অন্যতম বাহন মোটরসাইকেল। সুযোগ পেলেই সিগন্যাল অমান্য করেন। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিধান জরুরিভিত্তিতে চালু করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, প্রতিবছর সড়কে প্রায় আট হাজারের বেশি প্রাণহানির তথ্য মিলেছে। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রাণ হারানোর কারণে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। যদিও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এ গঠিত সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ও আহত ব্যক্তিকে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান থাকলেও আইন কার্যকরের ৩ বছরের মাথায় এ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কার্যক্রম আজও শুরু করা হয়নি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৬। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৭৫৫। এ হিসাবে মোট যানবাহনের ৭২ শতাংশের বেশি মোটরসাইকেল। গত পাঁচ বছরে রাজধানীতে দুই চাকার এ যানবাহন বেড়েছে অন্তত ১০ লাখ। নিহতের সংখ্যার দিক দিয়েও অল্প সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা প্রথমে উঠে এসেছে। সড়কে এখন ৫০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হচ্ছে এ যানবাহনে। আর এসব মৃত্যুর শিকার ব্যক্তিদের একটা বড় অংশই তরুণ। এর বাইরেও দেশের সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ৬০ লাখ নিষিদ্ধ যানবাহন। এ পরিস্থিতিতে আজ রোববার পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৩। বিআরটিএ, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞসহ যাত্রী অধিকার আদায়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য অন্তত ১১টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব হলে পথের দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশে নিবন্ধিত যানবাহন থেকে অনিবন্ধিত বা অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। একই পথে চলে সব ধরনের যানবাহন। নিষিদ্ধ যানবাহনও চলে মহাসড়কে। সনাতন পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে যানবাহনের ফিটনেস। যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়াই মিলছে ভারী যানবাহনের চালকের লাইসেন্স। অদক্ষরা দিচ্ছে যানবাহনের রুট পারমিট। সেইসঙ্গে লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। মালিক-শ্রমিক ও আমলাদের প্রভাবমুক্ত করা যায়নি সড়ক পরিবহন আইন-২০২৩ থেকে। রোড সেফটি অডিট সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের সড়ক নেই। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল নেই বিআরটিএসহ পুলিশ বিভাগে। মালিক, শ্রমিককে আনতে হবে আইনের আওতায়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশের পেক্ষাপটে নিরাপদ সড়কের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো জানতে চাইলে সড়ক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, সচেতনতা ও আইন মেনে পথ চলাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আইন মেনে না চললে সড়ক নিরাপদ করা কষ্টকর। এতে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এজন্য চালক, পথচারী, মালিকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই দুর্ঘটনা কমবে। নিরাপদ হবে পথ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এআরআই) বলছে, টেকসইভাবে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ১৫ বছরে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। উল্টো আত্মঘাতী কাজ করে সড়কে বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা ও সড়কে মৃত্যু বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আগে পথচারী দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৪ শতাংশ। এখন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রধান কারণ মোটরসাইকেল। ৫০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হচ্ছে দুই চাকার এই যানে। নানাভাবে উৎসাহ আর প্রণোদনা দিয়ে এ যানটি সহজলভ্য ও জনপ্রিয় করে তোলার মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ১০ লাখের বেশি মোটরসাইকেল শুধুমাত্র রাজধানীতে বাণিজ্যিকভাবে অশুভ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলছে। এতে দেশের মূল জনশক্তি হিসেবে পরিচিত তরুণ প্রজন্মের মৃত্যু বাড়ছে, যা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এআরআইর পরিচালক ড. শামসুল হক বলেন, সরকার দুর্ঘটনা না কমিয়ে উল্টো কিছু আত্মঘাতী কাজ করে পথের মৃত্যু বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার গোঁজামিলের নানা হিসাব দিয়ে যাই বলুক; হিসাব হলো দুর্ঘটনা বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে মোটরসাইকেলের কারণে। যানজট সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ জানিয়ে এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, বিশৃঙ্খল প্রতিযোগিতার আয়োজনে টেকসই কোনো সমাধান মিলবে না। একটি করিডোরে একটি কোম্পানি দিয়ে বাস চালাতে হবে। সেইসঙ্গে চালকের বেতন নিশ্চিত করতে হবে। মোটরসাইকেল না বাড়িয়ে গণপরিবহন বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের পরামর্শও দেন এই বিশেষজ্ঞ। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক বিভাগ, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগ মুখে মুখে নিরাপদ সড়কের কথা বললেও তাদের কর্মকাণ্ডে তা চোখে পড়ে না। দুর্ঘটনা কমাতে পারে বিআরটিএ ও পুলিশের দপ্তরে এমন কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল নেই। ৪০ লাখের বেশি নিষিদ্ধ যানবাহন দেশে চলছে। এসব যানবাহনের চালকের কোনো লাইসেন্স নেই, দেখারও কেউ নেই। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন বাড়ছে। ২১টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন দেদার চলছে। তাছাড়া আইন প্রয়োগ নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও অভিযোগ আছে। সর্বোপরি সড়ক আইনকে এখনো মালিক-শ্রমিক ও আমলাদের প্রভাবমুক্ত করা যায়নি। এ প্রেক্ষাপটে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা কঠিন। তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরা পদ্ধতিতে সড়ক আইনের প্রয়োগ করতে হবে। উন্নত দেশের মতো মালিক ও শ্রমিককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে সারা দেশে ৫ লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন গাড়ি রয়েছে। ফিটনেসহীন এসব বাহনের মধ্যে ৩০ শতাংশ রাস্তায় চলে না জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, পাশাপাশি রাস্তা উন্নত হওয়ায় ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওভার স্পিডের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ওভার স্পিড, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপরাধে ড্রাইভারদের মার্কিংয়ে ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও বিআরটিএর পেশাদার চালকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চালকদের চক্ষু, রক্তচাপ ও র্যান্ডম ব্লাড সুগার পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ চালক উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক চালকের চোখের কন্ট্রাক্ট সমস্যাও পাওয়া গেছে। নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন সড়কে নিহত হচ্ছেন। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তা করতে হলে আমাদের সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘পরিবহন মালিক থেকে শ্রমিক ও সড়ক ব্যবহারকারী—সবাইকে সচেতন হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু ঢাকা শহরে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হলে ১০০ ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন। তবে আমাদের মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। তাই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এদিকে গত ৯ মাসে সরকারি হিসাব অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৮২৯ জনের প্রাণ গেছে। দিনে গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ জনের বেশি। বিআরটিএর মাসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪১০ জন, আগস্টে ৩৭৮, জুলাইয়ে ৫৩৩, জুনে ৫০৪, মে-তে ৩৯৪, এপ্রিলে ৪৫৯, মার্চে ৫১১, ফেব্রুয়ারিতে ৩০৩ ও জানুয়ারি মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বলেন, ‘পলিটিশিয়ানরা যতদিনে স্মার্ট না হবে, তাদের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনারোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা যতদিন না আসে ততদিনে এই মৃত্যু, সড়কে এই নৈরাজ্য থামবে না।’ তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব নিতে হবে। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন আইনের কথা বলেন তারা, পরে এর বাস্তবায়ন ঘটে না। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ কাছে সড়ক দুর্ঘটনারোধে সড়কে সেইফটি ইন্সপেকশন, আনফিট গাড়ি চলতে না দেওয়া, স্পিড লিমিট গাইডলাইন প্রস্তুত, সড়কে বিভিন্ন ধরনের মার্কিং ও সাইন লাগানো, ঢাকায় গাড়ি ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে না চলা, বেতনভুক্ত চালক নিয়োগ, চালকদের নিয়োগপত্র প্রদান, আনফিট গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে দিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালুসহ দুর্ঘটনারোধে যে ১১১টি সুপারিশ ২০১৮ সালে নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তায়নের কথা জানান। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের শুরুতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিল তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সে বিক্ষোভ শান্ত করতে সরকারের দিক থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট’-এর সভায় সড়কে শৃঙ্খলা আনার জন্য ১১১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, দুর্ঘটনাগুলো আমাদের হাতেই তৈরি। তাই এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যায় না। এটা ক্র্যাশ। চালক প্রশিক্ষিত ও দক্ষ না হলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। চালকদের দক্ষ বানাতে হবে। শুধু দক্ষই নয়, চালকদের নিরাপদও বানাতে হবে। যেন যে কোনো পরিস্থিতি তারা সামাল দিতে পারেন। দেশে নিরাপদ চালক তৈরি করা খুব জরুরি।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২০ অক্টোবর ২৩/ এসবি 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here