আলোকিত ডেস্ক:
বিএনপির ডাকা সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে জেলায় জেলায় মিছিল, বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হয়েছে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংর্ঘষ হয়েছে। গতকাল রোববার ২৯ অক্টোবর সকাল ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে ও সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করলে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দাফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে বিএনপির সহযোগী দল গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা চাষাঢ়ায় মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ জেএসডি’র মহানগরের সভাপতি মোতালেব মাস্টারকে আটক করে। অন্যদিকে শনিবার রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের আধুরিয়ায় সড়ক অবরোধ করে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। কুমিল্লার চকবাজারে বিএনপির মিছিলে বাধা এবং টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি চালায় পুলিশ। এসময় এক পুলিশ সদস্য আহত হয়, আটক করা হয়েছে চারজনকে। এছাড়াও ভোলা, বরিশাল, টাঙ্গাইল, নেত্রকোণা, ঠাকুগাঁও, বগুড়া, রাজশাহী, টঙ্গী, গাজীপুর, লালমনিরহাট, খুলনায় মিছিল ও বিক্ষোভ, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে লালমনিরহাটে একজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে হরতালে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। টঙ্গীতে বিআরটিসির দোতলা বাসে আগুন: গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতে বিআরটিসি দোতলা বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় টঙ্গীর চেরাগআলী মার্কেটের সামনে ঢাকাগামী বিআরটিসির দোতলা বাসে অগ্নিসংযোগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল চলাকালে চেরাগআলী মার্কেটের সামনে কে বা কারা ঢাকাগামী বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৫৩৯৮) আগুন দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বাসের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। বাসটি যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিল। কয়েকজন যাত্রী ভেতরে থাকলেও আগুন লাগতে দেখে দ্রুত নেমে পড়ায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাসের দোতলায় তিন-চারজন যাত্রী ছিলেন বলে বাসটির চালক জানিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে কেউ হয়ত আগুন দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাস ভাঙচুর-ট্রাকে অগ্নিসংযোগ, মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ: গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থানা এলাকায় একটি মিটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে চারটি বাসে ভাঙচুর, জৈনাবাজার এলাকায় ও বেড়াইদেরচালা ১নম্বর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে হরতালের সমর্থনকারীরা। রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হরতালের সমর্থনে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থানায় এলাকায় মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিটি ট্রাকে আগুন দেয় হরতালকারীরা। পরে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে মিনি ট্রাকের আগুন নেভায়। অন্যদিকে মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় চারটি বাসে ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। এদিকে সাড়ে ৯টার দিকে জৈনাবাজার এলাকায় ও মহাসড়কের বেড়াইদেরচালা এলাকায় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হরতাল সমর্থনকারীদের সরিয়ে দেয়। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহতাব উদ্দিন বলেন, রোববার সকালে জয়দেবপুর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তিন টন মালামালবাহী মিনি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, ধারনা করা হচ্ছে হরতাল সমর্থনকারীরা ওই ট্রাকে আগুন দিয়ে পালিয়েছে। এবিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর মো. বেলাল বলেন, ট্রাকে আগুন লাগার খবর পেয়েছি। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো. নাসিম বলেন, পুলিশের টহলের মধ্যেই দুর্বৃত্তরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে মুহূর্তেই ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে কারা এ কাজ করেছে। এবিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নারায়ণগঞ্জে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া–সংঘর্ষ, আটক ৮: বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা হলে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া–সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টার দিকে নগরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ ও মিশনপাড়া এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্ধশতাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে পুলিশ। মিছিল থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি, সমাজতান্ত্রিক দলের নেতাসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল সাতটার দিকে নগরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় হরতালের সমর্থনে গণতন্ত্র মঞ্চ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ব্যানার কেড়ে নিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ মিছিল থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সমাজতান্ত্রিক দলের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি আবদুল মোতালেবকে আটক করে। এ বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের লাঠিপেটায় গণসংহতি আন্দোলনের জেলার নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, ছাত্র ফেডারেশনের জেলার সহসভাপতি সাইদুর রহমান, মমিন হোসেনসহ চারজন আহত হয়েছেন। মিছিল থেকে আবদুল মোতালেবকে আটক করে পুলিশ। সকাল ৯টার দিকে নগরের মিশনপাড়া এলাকায় মহানগর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হরতালের সমর্থনে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান নেন। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশও তাঁদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি শটগানের গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ বলেছেন, সকালে প্রেসক্লাবের সামনে নেতা-কর্মীরা সমবেত হতে শুরু করলে পুলিশ গুলি ছুড়লে তাঁদের তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মিশনপাড়া এলাকায় পুলিশ নির্বিচার বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে। তাঁদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর আগে সকাল সাতটার দিকে নগরের কালীর বাজার এলাকার নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী। পুলিশ আসার আগেই দলটির নেতা-কর্মীরা সটকে পড়েন। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন, ওরা (হরতাল সমর্থনকারীরা) পুলিশের ওপর আক্রমণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ অর্ধশতাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হরতালের সমর্থনে মিছিল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল সাতটার দিকে মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করলে তাঁদের আটক করে পুলিশ। আটক ইকবাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, হরতালে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামতে দিচ্ছে না পুলিশ। তাঁদের ওপর গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে। নারায়ণগঞ্জে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও ভাঙচুরের চেষ্টা করলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনকে আটক করা হয়। লালমনিরহাটে আ’লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত: হরতালকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়েছে। এতে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৫) নামে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের চার কর্মী। রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ২টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কর্মী মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে এ সংঘর্ষ ঘটে। নিহত জাহাঙ্গীর মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। তিনি ওই ইউনিয়নের বেড়পাংগা গ্রামের আজিজার রহমান ছেলে। আহতরা হলেন- মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী বাবলু (৩৫), রাজু (৩৮), দুলাল (৪৪) ও আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী পলাশ (২৬)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে লালমনিরহাটের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল ও পিকেটিং করতে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাপ্টিবাড়ি বাজারে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম হরতাল বিরোধী মিছিল নিয়ে বের হলে ধাওয়া পালটা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় বিএনপির দুই কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়। বেলা ১১টার দিকে আদিতমারী উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে মিছিল নিয়ে যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে সংঘর্ষ শুরু হলে এক আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হন। এ সময় বিএনপির অফিসের চেয়ার ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। বর্তমানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপর দিকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন ও তিন আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ দুই রাউন্ড রবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এছাড়া মিশন মোড় এলাকায় পুলিশের দুটিসহ চার মোটরসাইকেলে ভাঙচুর চালিয়েছে বিএনপির সমর্থকরা। লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, লালমনিরহাট শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, লালমনিরহাট জেলার পরিস্থিতি শান্ত। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন আছে। বর্তমানে আমি মহেন্দ্রনগরে অবস্থান করছি। মির্জা ফখরুলকে আটকের প্রতিবাদ, ঠাকুরগাঁও বিএনপির বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটকের প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁয়ে বিক্ষোভ করেছে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ১টায় শহরের কালিবাড়ি থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে চৌরাস্তার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও পাল্টা রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। তবে এ ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির জানান, বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খুলনায় বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর-আগুন: খুলনা মহানগরের বৈকালী মোড়ে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৯ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে কে বা কারা আগুন দিয়েছে জানা যায়নি। খালিশপুর ফায়ার স্টেশনের লিডার মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, বৈকালী মোড়ে গাড়িতে আগুন লেগেছে শুনে এসেছি। এসে দেখি বিএনপি কার্যালয়ে আগুন জ্বলছে। বর্তমানে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নগরীর ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক জহর মীর বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশে হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে হরতাল চলছে। আমাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী ঢাকায়। বেলা ১২টার দিকে আমাদের কোনো নেতাকর্মী বৈকালী মোড়ের ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে ছিল না। এ সময় অফিস ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আগুনে চেয়ার-টেবিলসহ কিছু আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কুমিল্লা শহরে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ১৫, আটক ৭: কুমিল্লা নগরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে দুপক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। রোববার সকাল আটটার দিকে নগরের চকবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বিএনপির সাত নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল আটটার দিকে নগরের চকবাজার এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ওরফে ইয়াছিনের নেতৃত্বে বের হওয়া মিছিলটি চকবাজার চৌরাস্তার পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময়ে মিছিলকারীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর আশপাশের এলাকা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করেন তাঁরা। তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আক্কাস, সাবেক সদস্য রেজাউল হকসহ সাতজন নেতা-কর্মীকে আটক করে। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ বলেন, ‘বিনা উসকানিতে পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা দিয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। পুলিশের হামলায় আমাদের ১৪ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। দলের কয়েকজন নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করেছেন। এতে একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। রাজশাহীতে হরতাল সমর্থকদের আগুনে পুড়লো প্রাইভেটকার: রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল সমর্থকদের দেওয়া আগুনে একটি প্রাইভেটকার পুড়েছে। তবে কেউ হতাহত হননি। রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীরা জানান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য মো. রিপন পরিবার নিয়ে ভাড়ায় প্রাইভেটকারে এক আত্মীয়র বাড়িতে যাচ্ছিলেন। রাজশাহী বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়ায় এলাকায় পৌঁছালে বাধা দেন হরতাল সমর্থকরা। এ সময় তারা রিপনসহ অন্যদের গাড়ি থেকে নামিয়ে পেটাতে থাকেন। হঠাৎ একটি বিকট শব্দে গাড়িতে আগুন জ্বলতে থাকে। গাড়িতে আগুন দিয়ে হরতাল সমর্থকরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভান। রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহীর বাঘায় একটি প্রাইভেটকারে আগুন দিয়েছেন হরতাল সমর্থকরা। এ ঘটনায় কেউ আহত নেই। তবে গাড়িতে আগুনে দেওয়ার ঘটনায় বাঘা থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বগুড়ায় পুলিশ-হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষ, শিশুসহ গুলিবিদ্ধ ৭: বগুড়া সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষে দুই শিশুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া হরতাল সমর্থকদের হামলায় সাংবাদিক ও পুলিশসহ আরও আটজন আহত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীনের গাড়ি ভাঙচুরের পর রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বাঘোপাড়া খোলারঘরে এ সংঘর্ষ ঘটে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে বগুড়া সদর উপজেলার বাঘোপাড়া খোলারঘরে আব্দুর রবের ছেলে মহিউদ্দিন মাহি (৮), মাকসুদুরের ছেলে আওলাদের (১৫) নাম জানা যায়। বাকি পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এদের মধ্যে শিশু মাহি বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। পিকেটারদের হামলায় আহত তিন সাংবাদিক হলেন- দৈনিক করতোয়ার মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাহাত রুপান্তর, দৈনিক জয়যুগান্তরের সাব্বির শাকিল ও এনসিএন নামে এক অনলাইন নিউজ পোর্টালের রিপোর্টার ববিন রহমান। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত ডিবি পুলিশের দুই সদস্য হলেন- ইসমাইল ও মোস্তাফিজুর। তারা সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া রোগীবাহী মিনিবাসে থাকা তিনজন রোগী হলেন- সাগরিকা (৩০), নাহিদা (৩৫) ও লুৎফন্নেছা (৫৫)। তারা টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলের ডাকা হরতালের সমর্থনে মহাসড়কে খোলারঘরে স্থানীয় প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ এসে বুঝিয়ে তাদের সড়ক থেকে তুলে দেন। এরপর আবারো তারা মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় কয়েকটি বাস, ট্রাক ও অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও ফিরোজা পারভীন লাহেড়িপাড়া ইউনিয়নের একটি মন্দির পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়িটিও ভাঙচুর করেন হরতাল সমর্থকরা। একই সময় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালের বিনামূল্য রোগীবাহী দুইটি মিনিবাসও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় মিনিবাসে থাকা জয়পুরহাটের তিন রোগী আহত হন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মারধরের স্বীকার হন তিন সাংবাদিক। খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে গেলে তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন হরতাল সমর্থকরা। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছুড়লে দুই শিশু ও পাঁচ হরতাল সমর্থক আহত হন। হরতাল সমর্থকদের হামলায় ডিবির দুই সদস্য আহত হন। বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও ফিরোজা পারভীন বলেন, উপজেলার একটি মন্দির পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। গাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে তবে হতাহত নেই। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিদর্শক তানজিলা আক্তার বুলবুলি বলেন, কিছু দুর্বৃত্তরা হঠাৎ বাসে হামলা করে। রোগীদের বহন করা হচ্ছে বলার পরও তারা ছাড় দেয়নি। তাদের বেশিরভাগই কিশোর ছিল। বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি রোগীদেরও মারধর করা হয়। টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, গুলিবিদ্ধ সাতজন এখানে এসেছিলেন। ছয় জনের হাত ও পা থেকে গুলি বের করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এক শিশুর চোখে গুলিবিদ্ধ গুরুতর জখম আছে। তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৯ অক্টোবর ২৩/ এসবি