হরতাল/ বাস সংকটে দিনভর জনভোগান্তি

0
262

 

 

আলোকিত ডেস্ক:

 

বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে  গতকাল রোববার রাজধানীর কোথাও কোথাও রয়েছে বাসের সংকট। বাস না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন অফিসসহ নানা কাজে ঘর থেকে বের হওয়া নগরবাসী। অন্যদিকে কোথাও কোথাও বাস থাকলেও সেখানে রয়েছে যাত্রী সংকট। গতকাল রোববার সকাল থেকে রাজধানীর শনির আখড়া, রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলী, গুলিস্থান, জিরো পয়েন্ট, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়া ও কাজলা এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষকে রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান এলাকায় দেখা গেছে যাত্রী সংকট। বিভিন্ন গন্তব্যের বাসগুলোকে এসব জায়গায় যাত্রীর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। শনির আখড়ায় ফার্মগেট যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন শাহাদাত হোসেন।  তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। ৯টা বেজে গেলেও কোনো বাস পাচ্ছি না। দুই-একটা যা আসছে পুরো ভরা, ঠেলে-ঠুলেও ওঠার অবস্থা নেই। সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ীর কাজলায়ও বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। শনির আখড়া, কাজলা থেকে কাউকে কাউকে পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্য যেতে দেখা গেছে। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় অনেক বাস ছিল যাত্রীর অপেক্ষায়। যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচল করা গাবতলী পরিবহন, যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটে চলাচল করা শিকড় পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস দাঁড়িয়ে ছিল চৌরাস্তায়। শিকড় পরিবহনের এক বাসের চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রী নেই। অন্যদিন এই সময় ১০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি ভরে যায়। আজ অনেকক্ষণ ধরে এখানে অপেক্ষা করছি, গাড়ি অর্ধেকও ভরেনি। মিরপুর যেতে বেশি সময় লাগবে না, কিন্তু যাত্রী না থাকলে বাস চালিয়ে লাভ কী! ঢাকা জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী শোভা বলেন, ‘বাস চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধ নেই। সব রুটের সব বাস চলছে, তবে যাত্রী একটু কম। গত শনিবার দুপরে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। কিন্ত সংঘর্ষের কারণে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে দলটি। হরতালের প্রভাব ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে: হরতালের প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অন্যান্য দিনের মতো রবিবার ছিল না প্রাণচাঞ্চল্য। ব্যাংক কর্মীরা চাপবিহীন একটি কার্যদিবস পার করছেন। অন্যান্য কর্মদিবসে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের ভিড় থাকলেও আজ তেমন কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।  রবিবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গ্রাহকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়নি দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালীতে। ব্যাংকটির মতিঝিলে প্রধান শাখার নিচতলায় দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। অন্যান্য কার্যদিবসে গ্রাহকদের যে ভিড় এবং চাপ থাকে তা দেখা যায়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, দুই-একজন করে গ্রাহক আসছেন ব্যাংকে। এদের প্রায় সবাই আসছেন পে-অর্ডার বা অফিসিয়াল কাজে। চেক ক্লিয়ারিংয়ের তেমন কোনো গ্রাহক এখনো পাননি বলে জানান শাখায় দায়িত্বরত একজন নারী কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় গ্রাহক নেই বললেই চলে। আমাদের ব্যাংকে সাধারণত প্রতিটি দিনই মানুষের ভিড় থাকে। বিশেষত, সপ্তাহের প্রথম ও শেষ কার্যদিবসে প্রচণ্ড চাপ থাকে। আজ (রবিবার) অবস্থা ভিন্ন। হরতালের প্রভাব কি না জানি না। তবে আজ অনেকটা রিলাক্স আছি। এছাড়া প্রধান শাখা হওয়ায় অন্যান্য কাজেও মানুষজন আসেন।  তেমন কিছুই নেই। কাজের চাপ না থাকায় আজ দ্রুত বের হতে পারব। ব্যাংকটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত একজন আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা হয় । তিনি বলেন, ‘প্রধান শাখার মূল ফটকে আমরা ৮ জনের একটি টিম কাজ করি। অন্যান্য দিনে চাপ থাকে অনেক। লোকজন এলে তাদের সামলাতে আমাদের সতর্ক থাকতে হয়। আজকে (রবিবার) লোকজন নেই বললেই চলে। তাই আট জনের জায়গায় চারজন ডিউটি করছি। তবুও আমরা নিশ্চিন্তেই আছি। সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার মূল ফটকের গাড়ি প্রবেশের গেট দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর গাড়ি ঢোকে।  কর্মকর্তাদের গাড়ি ছাড়া অন্যদের গাড়ি নেই বলে জানান এখানকার আনসার সদস্য সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক দিন গাড়ি, রিকশা আর সিএনজি সরাতে খাটতে হয় অনেক। গেটের সামনে রিকশা এসে জাম বাধায়। আজকে (রবিবার) গাড়ির চাপ নাই। রিকশাও কম। অফিসারদের গাড়ি ছাড়া গেস্টের গাড়ি এখনো আসে নাই একটাও। তাই ঝামেলা হয় নাই । হরতালের কারণেই মনে হয় এই অবস্থা। পাবলিক বাসও রাস্তায় দেখি নাই। এই গেটের সামনে এসেই দাঁড়ায় গাবতলী, মিডলাইন, বিআরটিসি বাস। একটা কি দুইটা এখনো দেখছি। এদিকে একই অবস্থা রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকের। এ ব্যাংক দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল গ্রাহক চাপ  ছিল না।  অল্প কয়েকজন গ্রাহক আসছেন ব্যাংকে। এদের মধ্যে প্রায় সবাই ডলার কিনতে চাচ্ছেন। তাদেরকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় কর্মকর্তারা খোশমেজাজে ছিলেন। গল্প আর আড্ডাতে কাটছে দিন গ্রাহক চাপ না থাকায়। অগ্রণী ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজ (রবিবার) মন্ত্রণালয়ের একটি মিটিং ছিল। তা পরিবর্তন করা হয়েছে। অফিসিয়াল কাজ যা জমে আছে তা আজকে (রবিবার) করতে পারছি।  খুব বেশি কাজ নেই। আগের দিনের জমানো কাজগুলোই করছি। মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত মেটলাইফ আলিকো বিমা কোম্পানির অফিসে প্রতিদিন কর্মতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। আজ (রবিবার) তেমন কোনো গ্রাহকের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। এখানকার নিরাপত্তা রক্ষীরা  বেশ তৎপর। যারা আসছেন কার্যালয়ে তাদের চেক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢুকতে দিচ্ছেন নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। জীবন বিমা কর্পোরেশন অফিসেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া মতিঝিলে অবস্থিত ডাচ-বাংলা, এনসিসি, এনআরবিসি, সোশ্যাল ইসলামী, সাউথইস্ট ও সিটিজেন ব্যাংকের প্রধান শাখায়ও গ্রাহক একেবারেই কম বলে জানান এসব ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তারা। ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখায় কিছু গ্রাহকের উপস্থিতি দেখা গেছে। তারা মূলত আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যায়। এদিকে মতিঝিলে অবস্থিত বেশ কয়েকটি শেয়ার বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটিজ হাউসগুলোতেও লোকসংখ্যা কম দেখা গেছে। ডব্লিউডব্লিউ টাওয়ারে অবস্থিত এবি সিকিউরিটিজে গ্রাহক সংকট চলছে বলে জানান এখানকার দায়িত্বরতরা। শেয়ার বিজনেস করা অনেক লোকই সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আসেন। তাদের নাস্তার ব্যবস্থাও করেন এখানকার কর্তৃপক্ষ। লোকজন না থাকায় নাস্তাও বিতরণ করা হয়নি বলে জানান তারা। মডার্ন সিকিউরিটিজ, লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজেও একই চিত্র দেখা যায়।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৯ অক্টোবর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here