আলোকিত ডেস্ক:
গত মাসের মাঝামাঝি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম, এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। তবে নির্ধারিত সেই দাম সরকার কখনোই কার্যকর করতে পারেনি। দেড় মাস ধরে বাড়তি দামেই এসব পণ্য কিনেছেন ক্রেতারা। তবে নতুন করে আলু ও পেঁয়াজ এই দুই পণ্যের দাম বেড়েছে। আলুর দাম কেজিতে ২০ টাকাও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। বাজারের এমন পরিস্থিতি কেন বা দামের তরতাম্যের কারণ জানতে চাইলে বাজার মনিটরিংকে দায়ী করেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজার মনিটরিং হয় না, কোনও শৃঙ্খলা নেই কাঁচাবাজারে। যার যেমন ইচ্ছা দাম হাঁকাচ্ছেন। আলুর দাম গত কয়েক দিনে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকার বেশি। আলু: দেশে আলুর বাজার আগে থেকেই চড়া। মাস দুয়েক ধরে আলুর দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকায় স্থির ছিল। তবে গতকাল আরেক দফা দাম বেড়ে আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। কোনো কোনো বাজারে ৭০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহের সংকটে আলুর দাম বেড়েছে। আলু ও পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে, এসব কথা জানিয়ে শাহজাহানপুর বাজারের ফেনী জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আজহার উদ্দিন বলেন, ‘আপাতত আলু-পেঁয়াজ আর নতুন করে দোকানে ওঠাচ্ছি না। বাজার পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি দেখে মাল ওঠাব। রাজধানীর বাজারগুলোতে কয়েক দিন আগে যে আলুর কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন ৬০ টাকা। গোল লাল আলুও বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। শিয়া মসজিদ বাজারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ খান বলেন, ৩৫ টাকার আলু এখন ৬০ টাকা। কোল্ডস্টোরেজে নতুন আলু পুরোপুরি উঠলে হয়তো কোল্ডস্টোরেজের মালিকরা আলু ফেলে দেবেন, কিন্তু মানুষকে কম দামে খেতে দেবেন না। ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই আলু নতুন আলু বাজারে পুরোপুরি আসবে। তখন হয়তো দাম কমবে। নতুন আলু বেশি দামে কেউ কিনবে না, তাই দোকানে রাখিনি। সবজি ব্যবসায়ী এখলাস জানান, নতুন আলু ২৪০ টাকা, পুরনো সাদা আলু ৬০ ও লাল আলু ৭০ টাকা। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, দোকানভেদে দামের তফাত রয়েছে। পাইকারিভাবে কোন বাজারে কিনছে, তার ওপর নির্ভর করছে দাম। তবে অনেকে বেশি নিচ্ছেন নিজের ইচ্ছামতো। সেটি তার লাভ-লোকসানের বিষয়। এদিকে আলুর রেকর্ড’ উৎপাদন, তবুও দাম কমছে না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন বিভাগের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। চলতি বছর কৃষকরা রেকর্ড ১ কোটি ৪ লাখ টন আলু উৎপাদন করেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাজারে আলুর দাম কমছে না। ফলে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার বাজারগুলোয় আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। আলুর বর্তমান দাম গত বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা শীতে বিক্রির জন্য হিমাগারে আলু মজুদ রাখেন। তারা ধীরে ধীরে তাদের মজুদ থেকে আলু বাজারে ছাড়েন। সেপ্টেম্বরে আলু রোপণের পর তা সংগ্রহ করতে ৯০ দিন সময় লাগে। জানুয়ারিতে ফসল তোলার পর পরবর্তী কয়েক মাস বাজারে আলুর সরবরাহ নিশ্চিত থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জুনের মধ্যে হিমাগারে মজুদ আলু ছেড়ে দেওয়া হয়। যাতে পরবর্তী মৌসুমের আলু তোলা পর্যন্ত বাজারে পুরনো আলু থাকে। বছরের এই সময় অন্যান্য সবজির দাম বেশি থাকায় আলুর চাহিদা বেড়ে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বার্ষিক উৎপাদন পরিসংখ্যান বলছে, আগের বছরের তুলনায় দেশে আলুর উৎপাদন ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ কোটি টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন বিভাগের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে আলুর ঘাটতি নেই। আলুর এই বাড়তি দামের কারণ হিসেবে তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মতো দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর বাজার পর্যবেক্ষণের অভাবকে দায়ী করেন। তবে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সরকারের এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছে, এবার আলুর উৎপাদন ৮০ লাখ টনের বেশি হবে না। বিসিএসএ’র সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরকারি তথ্যের সঙ্গে একমত নই। কোল্ড স্টোরেজ ধারণ ক্ষমতার প্রায় ২০ শতাংশ খালি পড়ে আছে। তার প্রশ্ন, যদি আলুর উৎপাদন বেশি হয়, তাহলে এই বাড়তি আলু কোথায়? তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা আলুর মজুদ ছেড়ে দিচ্ছেন। তারা জানেন কৃষকের মজুদ শেষ। গত মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের কাঁচাবাজারের কয়েকজন দোকানদারকে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত নিতে দেখা গেছে। দোকানদার জুয়েল মোল্লা জানান, তিনি কারওয়ান বাজার থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন। ঢাকার অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১/২ সপ্তাহ আগে ৬৫ কেজির এক বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ টাকায়। দেশের উত্তরাঞ্চলেও আলুর দাম বেড়েছে। সেখানে দেশের বেশিরভাগ আলু উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে দিনাজপুরের রেলবাজারহাট ও বাহাদুরবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গত ঈদুল আযহা পর্যন্ত পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল ছিল। ঈদের ঠিক আগে জেলা শহরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকায়। এর পরপরই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ টাকা। এরপর থেকে খুচরা ও পাইকারি উভয় পর্যায়েই আলুর দাম বাড়তে থাকে। সম্প্রতি, কেজিতে আলুর দাম ১০ টাকা বেড়েছে। দিনাজপুরের রেলবাজারহাটের পাইকারি বিক্রেতা সুমন আলী বলেন, ‘মূলত সরবরাহের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ওঠানামা করে।’ গত সোমবার তিনি প্রতি কেজি আলু ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছিলেন বলেও জানান। সেই আলু এখন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে এই দাম বেড়েছে’ উল্লেখ করে দিনাজপুরের অপর পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য সবজির দাম বেশি হওয়ায় অনেকে আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দেশে আলুর ব্যবহার বেড়েছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ জন্য বাজার পর্যবেক্ষণের অভাব ও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতাকে দায়ী করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘যখন আলুর উৎপাদন বেশি, তখন এর বাড়তি দাম গ্রহণযোগ্য নয়। ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘বাজার মনিটরিংয়ের জন্য জনবলের অভাব আছে। তিনি আরও বলেন, ‘কাঁচাবাজারের সব পণ্য পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হয়ে গেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। আমাদের কাছে বাজারমূল্য বা উৎপাদন ব্যয়ের তথ্য নেই। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উচিত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিআরপির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের দেওয়া কৃষি পণ্য উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে বাজারের মজুদের বাস্তবে মিল পাওয়া যায় না। পেঁয়াজ: বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমছেই না। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে কয়েক দিন আগেই। এবার ভারতে পেঁয়াজের রফতানিতে মূল্যবৃদ্ধির খবরে দেশের বাজারে হঠাৎ করে আবার অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, পাইকারি বাজারে এক দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। গতকাল সোমবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, যা গত রোববার ১০ টাকা কম ছিল। আমদানি করা এসব পেঁয়াজ সোমবার ১২০ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত রবিবার দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে নতুন আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। গত শনিবার দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গত রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, যা শুক্র ও শনিবার ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ভারতে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি এবং দেশে সরবরাহ কমে যাওয়াকে দাম বাড়ার যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন। যদিও দেশের বাজারে এখনো ভারতের বর্ধিত মূল্যের পেঁয়াজ আসেনি। অসাধু সিন্ডিকেট বিনা কারণেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রফতানির সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বেঁধে দিয়েছে ভারত। শনিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি টন পেঁয়াজের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন এই মূল্যসীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিএফটি)। রামপুরা ভাই ভাই স্টোরের কালাম হোসেন বলেন, ‘রোববার ভারতে দাম বেড়েছে এমন খবরে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আজ আরও দাম বেড়েছে শুনছি। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার খবরে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ওইসব পেঁয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের তুলনায় আরও বেশি বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে পূজার ছুটির কারণে বেশ কয়েকদিন বন্দর বন্ধ ছিল। তখন থেকেই পেঁয়াজের ঘাটতি শুরু। এরমধ্যে আমদানিমূল্য বাড়ানোর খবরে বাজার একদম অস্থির হয়ে গেছে। বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। এখন আমদানি পেঁয়াজই ভরসা। এই অবস্থায় ভারতের এ সিদ্ধান্ত ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এর আগেও যখন ভারত দাম বাড়িয়েছে, দেশে চড়ামূল্য দিতে হয়েছে। তিনশ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত রফতানিমূল্য ৮৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল। তখন পেঁয়াজের বাজার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে। সেসময় বাজার সামাল দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানি করতে অনুরোধ করে সরকার। ওই বছর এস আলম ও সিটি গ্রুপ কার্গো বিমান এমনকি যাত্রীবাহী বিমানেও পেঁয়াজ আমদানি করে। আমদানি করা এসব পেঁয়াজ ভর্তুকি মূল্যে টিসিবিকে দিয়ে সারা দেশে বিক্রি করা হয়। চলতি বছরেও দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে সরকার পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে ৬৪-৬৫ টাকা। তবে সে দাম বাজারে কার্যকর হয়নি কখনো। গত সপ্তাহের আগে পর্যন্ত ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল দাম। তবে এখন নির্ধারণ করা দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। যদিও ভারতে নতুন দাম ঘোষণার পর সেই পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি। অর্থাৎ আগের দামে আমদানি করা পেঁয়াজই এখন বাজারে। তবুও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। অর্থাৎ যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এভাবে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়েছেন কতিপয় ব্যবসায়ী। তারা এই কারসাজি করে ভোক্তার পকেট থেকে স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা এও জানিয়েছেন, বাড়তি দামে আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে আরও তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। এরমধ্যে বাজারে যত পেঁয়াজ কেনাবেচা হবে তা আগের দামেই কেনা। জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ভারত মূল্যবৃদ্ধি করলেও নতুন দামের পেঁয়াজ এখনো দেশে আসার কথা না। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা খবর পেয়েই দাম বাড়িয়েছেন। তারা পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করছেন, অতিরিক্ত মুনাফা করছেন। তিনি বলেন, ‘আসলে বাজারে তদারকি সংস্থার কোনো নজরদারি নেই। দাম বেঁধে দিয়েও সেটা তারা কার্যকর করতে পারেনি। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে- বাজারে যেন কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। জানা গেছে, ভারতে প্রতিটন পেঁয়াজের দাম ৮০০ ডলার হলে কেজিপ্রতি এর রফতানিমূল্য পড়বে ৬৭ রুপি। আগে ভারতের রফতানিকারকরা অনির্ধারিত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলেও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশটির ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সরকার দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদনে বেশ সামঞ্জস্যের কথা বললেও মূলত বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার টন। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। দেশে যত পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা থেকে নষ্ট হয়ে যায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, যা ৮ থেকে ৯ লাখ টন। মোট উৎপাদন থেকে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজ বাদ দিলে দেশে উৎপাদিত নিট পেঁয়াজ থাকে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৭ লাখ ৪৩ হাজার টন পেঁয়াজ। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ভারতের এ সিদ্ধান্তে পেঁয়াজের বাজারে আবারও আগুন লেগেছে। ন্যূনতম মূল্য ৮০০ ডলারে আমদানি করলে দেশে আসতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকার মতো পড়বে। যা আগে ৪৫-৫৫ টাকার মধ্যে কেনা যেত। তিনি বলেন, ‘আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির নির্ধারিত মূল্য ছিল টনপ্রতি ৩৫০ ডলার। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানির ন্যূনতম মূল্য বাড়িয়ে ৮০০ ডলার করেছে। এর ফলে ৩৫০ ডলারে করা এলসিও (ঋণপত্র) বাতিল হয়ে যায়। টনপ্রতি ৮০০ ডলারের পর উভয় দেশে শুল্ক পরিশোধ, পরিবহন খরচ ছাড়াও ঘাটতি হিসাব করে পেঁয়াজের দাম সমন্বয় হয়েছে। বাজারে দাম বেড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের বিকল্প বাজার খুঁজতে আগে থেকেই আরও ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া রয়েছে গত আগস্টে। দেশগুলো হলো- চীন, মিশর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওইসব দেশের পেঁয়াজও ক্রমান্বয়ে বাজারে আসবে। যদিও বাংলাদেশে যতটুকু পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার সিংহভাগ আসে ভারত থেকে। এর আগেও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির দেওয়া হলেও বাস্তবে সেটা হয়নি। অনুমতির এক চতুর্থাংশ পেঁয়াজও দেশে আনতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে ভারত থেকে আমদানি ব্যাহত হলে সবসময় বাংলাদেশেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। আলু আমদানির সিদ্ধান্ত: বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারে আলু সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে আগ্রহী আমদানিকারদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে আলুসহ তিন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা মূল্যে বিক্রয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় নির্ধারিত মূল্যে আলু বাজারে বিক্রয় হচ্ছে কি না তার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশ দেন টিপু মুনশি। কিন্তু নির্ধারিত মূল্যে কোল্ড স্টোরেজ ও খুচরা কোনো পর্যায়েই আলু বিক্রয় হচ্ছে না বলে জানানো হয়। এছাড়া কোনো কোনো মহল আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতায় লিপ্ত আছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ৩০ অক্টোবর/ এসবি