সহিংসতার ঘটনায় আন্তর্জাতিক নানা মহলের উদ্বেগ  

0
219

আলোকিত ডেস্ক:

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন জোরদারে উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা।  সহিংসতার ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত, দমন নিপিড়ন থেকে বিরত থাকার জন্য পৃথক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। আন্তর্জাতিক মহল মনে করে সরকারের উচিত আইনের শাসনকে সম্মান করা এবং বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পৃথক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায়। সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং নির্বিচারে আটক করা থেকেও বিরত থাকার আহ্বান, বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ ও দেশের রাজনৈতিক সংকট প্রশমণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের গণগ্রেফতার এবং তাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযানের কারণে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের গুরুতর উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বিরোধী জনসভাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং অংশগ্রহণকারীদের লাঞ্ছিত করছে। কিন্তু সরকার এসব ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানানো হয়। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচন বানচাল করাই বিএনপির উদ্দেশ্য। ২৮ অক্টোবর সারা দেশে বিএনপি নৈরাজ্য চালিয়েছে অভিযোগ করেন তিনি। গত সোমবার বিকালে কূটনীতিক, মিশনপ্রধান, জাতিসংঘের সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশিদের কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে কূটনীতিকদের এ ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি: ঢাকায় ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠিত ঘটনাবলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে সেদিন সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে তারা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমর্থনে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে। গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই আহ্বান জানান মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। ব্রিফিংয়ে একজন তাঁর প্রশ্নে বলেন, বাংলাদেশে বিরোধীদের মহাসমাবেশে হামলা ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তাহান্তের বিবৃতি লক্ষ্য করেছেন তিনি। মূলত পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এই সহিংসতা চালিয়েছে। সমাবেশ শুরুর আগে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর বিএনপির মহাসচিবসহ শত শত বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিরোধী নেতাদের পরিবারের সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে শত মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী। জবাবে মিলার বলেন, ‘২৮ অক্টোবর ঢাকায় যে রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে, আমরা তার নিন্দা জানাই। পুলিশের এক কর্মকর্তা ও একজন রাজনৈতিক কর্মীর নিহত হওয়া, হাসপাতাল ও বাসে আগুন দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। একইভাবে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের ঘটনাবলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও সহিংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মিলার আরও বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। একই ব্যক্তি আরেক প্রশ্নে বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে বৈঠক করার কারণে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছে সরকারপন্থী গণমাধ্যম ও তাদের সমর্থকেরা। এসব প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয়, সরকার মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে। প্রশ্নকারী সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশে মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি কি যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন দেয়? জবাবে মিলার বলেন, কূটনীতিকেরা সুশীল সমাজের সংগঠন, গণমাধ্যম পেশাজীবী, ব্যবসায়ী নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেন। কূটনীতিকেরা তাঁদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবেই এসব করেন। তাঁরা তাঁদের এই কাজ করে যাবেন। ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সশস্ত্র ক্যাডারেরা, পুলিশের ইউনিফর্ম পরে, পেট্রল বোমা ও গানপাউডার ব্যবহার করে নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছেন। সরকারের পাশাপাশি জনগণের সম্পদ ধ্বংস করেছে। ক্ষমতাসীন দল বলছে, এসব হামলা বিরোধী দল চালিয়েছে। তারা গত ১৪ বছর ধরে এটি করছে। প্রশ্নকারী বলেন, তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিকভাবে সবাই স্বীকার করে যে, এসব হামলায় ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডার, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অন্য কিছু লোক জড়িত। তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা কি মার্কিন সরকারের আছে? জবাবে মিলার বলেন, তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ-সম্পর্কিত আগের প্রশ্নে যে উত্তর দিয়েছেন, তা এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাঁরা স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমর্থনে প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে। তবে তিনি (মুখপাত্র) পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে তা কখনো আগেভাগে বলবেন না। জাতিসংঘের বিবৃতি: বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাবেশে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বাংলাদেশের সকল পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং নির্বিচারে আটক করা থেকেও বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন গুতেরেস। স্থানীয় সময় গত সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে এবং আমি আপনাকে বলতে পারি, মহাসচিব বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাবেশে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। এই সহিংসতায় অন্তত ৯ জন মারা গেছেন এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, সব পক্ষকে সহিংসতা বা অত্যধিক বলপ্রয়োগ বা নির্বিচারে আটক থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে পারার অধিকারকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সঙ্গে পুলিশ এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার চালিয়ে যাচ্ছে, তারা প্রধান বিরোধীদের গ্রেপ্তার করেছে…। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থায় আপনি কীভাবে বিশ্বাস করতে পারেন যে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, যখন বিরোধীদলের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে এবং সকল পর্যায়ের নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র বলেন, এসব ঘটনায় আমরা স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন, যেমনটা আমি বলেছি, সহিংসতা নিয়ে। আমরা এখনও মনে করি, নির্বাচনের আগে শান্ত থাকা এবং সকল মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে শ্রদ্ধা থাকা জরুরি। তবে আমি মনে করি না, কেউ নির্বাচন নিয়ে পূর্বাভাস দিতে পারে। এর আগে, গত আগস্টের শেষের দিকেও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। সেসময় তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি, আমরা তো বটেই এবং আমি মনে করি, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় সবাই। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিরোধী মতের প্রতি সম্মান থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেছিলেন শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট ভউল। গত ৩১ জুলাই এক এক্স বার্তায় তিনি বলেন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সহিংসতা ও গ্রেপ্তারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই অবস্থায় সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কর্তৃপক্ষকে তাদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করবে এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিরোধী মতকে সম্মান করা গুরুত্বপূর্ণ।অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি: বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ ও দেশের রাজনৈতিক সংকট প্রশমণের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা বিষয়ে বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনার ইয়াসমিন কবিরত্নে বলেন, ‘সপ্তাহান্তে বিরোধী দলের নেতা ও বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন আগামী জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে ভিন্নমতকে কঠোরভাবে দমন প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে যে ভিন্নমত পোষণ করা অপরাধ নয় এবং অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও পরে বাংলাদেশে হত্যা, গ্রেফতার ও দমন-পীড়নের চক্র হয়ে গেছে। যা দেশের মানবাধিকারের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। কবিরত্নে বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আবারো বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সহজ করতে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, বিক্ষোভে কিছু ব্যক্তি সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। পুলিশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছে তারা তা চালিয়ে যেতে পারবে। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ থাকতে পারে এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের ওপর শারীরিকভাবে হামলা করা যাবে না এবং এই সংকটের সম্ভাব্য বৃদ্ধি এড়াতে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সমস্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রয়োজনে বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কঠোরভাবে মেনে চলবে। আরো বলা হয়, ঢাকায় গত শনিবারের (২৮ অক্টোবর) বিক্ষোভ ছিল চলতি বছরের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের একটি এবং ফের পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও সংঘর্ষের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, সংঘর্ষে আহত হয়ে মারা যান যুবদল নেতা শামীম মোল্লা ও একজন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। এর একদিন পর বিএনপির বিভিন্ন নেতার বাসায় অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। রোববার গ্রেফতার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরো বলা হয়, বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও সহিংস হামলার প্রমাণ যাচাই করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রাইট টু ফ্রিডমের ওয়েবিনারে বক্তারা যা বললেন : ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সারা দুনিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে কালো এক অধ্যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও অবাধ ও সুষ্ঠু হয় নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এর আগে অনুষ্ঠিত ৪টি নির্বাচনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা সরকারের প্ররোচনারই অংশ। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। গত সোমবার ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংগঠন-রাইট টু ফ্রিডম আয়োজিত ‘বাংলাদেশ’স ইলেকশনস: ওভারকামিং দ্য ইন্টেগ্রিটি ডেফিসিট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন সব মন্তব্য করেছেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম। ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ’র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এন্টনিও স্পিনেলি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী ডাইমেনশনে প্রয়োজনীয় সংস্কার না আনা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হলে যেসব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে সাধারণ মানুষ নিরাপদে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরে যেতে পারবে। ২০১৪ সালের নির্বাচন সারা দুনিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে কালো এক অধ্যায়। বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকাটা বেআইনি নয়, তবে সেটা অনৈতিক। নিরপেক্ষ প্রশাসন তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশের এর আগে অনুষ্ঠিত ৪টি নির্বাচনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও অবাধ ও সুষ্ঠু হয় নি। রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে, সকালেই নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে (হিরো আলম) মারার সময় পুলিশ বোবা হয়ে ছিল। বর্তমানে নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নামালেও তারা নিজেরা মেজিস্ট্রেটের কথা ছাড়া একশনে যেতে পারে না। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বলেছেন, গত দুটি নির্বাচনে তাদেরকে কিছুই করতে বলা হয় নি। এই হাইব্রিড সরকারের আমলে সবকিছুতে রাজনীতি ঢুকানো হয়েছে। ৯০% সরকারি কর্মকর্তা পক্ষপাতদুষ্ট। ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারে নি। তত্বাবধায়ক সরকার বহালের জন্য বিরোধীদের এবং জনগণের দাবির প্রতি সরকার কোনো গুরুত্ব দেয় নি। সরকারের লোকজনের কথায়, সহিংসতা না করতে পারলে আন্দোলন হয় না। ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা সরকারের প্ররোচনার অংশ। বর্তমান সরকার অতীতে এতো খারাপ কাজ করেছে যে তাদের জন্য ক্ষমতা ত্যাগ করা কঠিন। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে রাজনীতিকরণ করে সরকার ভাবছে এভাবে টিকে থাকা যাবে। কিন্তু, তাদের মানুষের কথা শোনা উচিত। প্রধানমন্ত্রী জানেন, কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হয়। মার্কিন সরকারের অধীন বেসামরিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি’র গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশাসন বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা জেফ্রি ভ্যানাস বলেন, নির্বাচন একদিনের বিষয় নয়। এটা একটা প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জনমত জরিপ বলছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে দেশের ৪৪ শতাংশ মানুষ। পরিসংখ্যান বলছে- র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব এবং এর সাতজন কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটেড স্যাংশনের ফলে অনেক মানুষের প্রাণ বেঁচেছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসঙ্গে কাজ করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক ডেপুটি চিফ অফ মিশন এবং রাইট টু ফ্রিডম এর বোর্ড মেম্বার জন এফ ড্যানিলোভিজের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সংগঠনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুশফিকুল ফজল আনসারী।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৩১ অক্টোবর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here