চালের বাজারে কূটচাল, চিনি আলুতে অস্থিরতা

0
627

আলোকিত ডেস্ক:

দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে বাড়ছে মোটা চালের দাম। এতে মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা। মাঝারি ও সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে সরবরাহ কমায় বাজারে মোটা চালের দাম বাড়ছে। যদিও সরকারের গুদামে চালের মজুত পর্যাপ্ত। যে কারণে পাইকারি বাজারের একপক্ষের অভিযোগ, মিলারদের কারসাজির কারণেই মূলত চালের দামে উল্লম্ফন। তারা সরবরাহের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। অন্যদিকে, চাল ছাড়া অন্য সব নিত্যপণ্যের দামও ঊর্ধ্বগতি। বাজারে এখন আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে আলু ও চিনির দাম। গত তিনদিনে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫-২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে চিনি।সবমিলিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের। আর ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ পরিবারের সদস্যরা হতাশায় পড়েছেন। চালের জন্য বাড়তি টাকা জোগারে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের পাইকারি ও খুচরা চালের বাজার ঘুরে এমন তথ্যই মিলেছে। বিক্রেতাদের কেউ অবরোধকে দুষছেন, তো কেউ দুষছেন মিল মালিকদের। তবে রাজধানীর পাইকারি বা খুচরা চাল বিক্রেতাদের কেউই নির্দিষ্ট করে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানাতে পারেননি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬০ থেকে ৬১ টাকা, নাজিরশাইল ৬৩ টাকা, আটাশ ৫২ টাকা, পাইজাম (স্বর্ণা) ৫১ থেকে ৫২ টাকা, পাইজাম (গুটি) ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, দেড় সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৫৮ টাকা, আটাশ ৫৪ টাকা, পাইজাম (স্বর্ণা) ৪৯ থেকে ৫২ টাকা, পাইজাম (গুটি) ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা ছিল। দেড় সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৭ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা, আটাশ ৫৩ টাকা, পাইজাম (স্বর্ণা) ৫৩ টাকা, পাইজাম (গুটি) ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেড় সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে ২ থেকে ৩ টাকা কম ছিল সব ধরনের চালের দাম। কৃষি মার্কেটের পাইকারি চালের বাজারের লামিয়া রাইসের ম্যানেজার মো. সেলিম বলেন, বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চালের দাম বেড়েছে। তবে কী কারণে দাম বাড়ছে, আমরা বলতে পারি না। মিল মালিকরা বলছেন, ধান কম উৎপাদন হয়েছে, তাই দাম বেশি। কিন্তু বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তার মানে মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন চাল উঠলে দাম কমার আশা করছেন এ বিক্রেতা। দেশের বিভিন্ন জেলার আড়ৎ ও গ্রাম অঞ্চলের মিলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২ হাজার ২০০ টাকা ছিল। আর প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা, যা আগে ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারি চালের ব্যবসায়ী হালিম চৌধুরী বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলে মোটা চাল নেই বলে দাবি করা হলেও মৌসুম শেষে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, মিল থেকে দিচ্ছে তার কম। আমনের চাল বাজারে আসতে এখনও মাসখানেক দেরি আছে। এভাবে চলতে থাকলে মোটা চালের দাম আরও বাড়বে। তবে বাংলাদেশ মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন দাবি করেন, ধানের সংকটে হাসকিং মিলগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ। এখন যেসব ধান রয়েছে সেগুলোর মজুতদার ব্যবসায়ীরা। তারা এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফাতেমা রাইসের ম্যানেজার নূর মোহাম্মদ বলেন, নতুন চাল ইতোমধ্যে উঠতে শুরু করেছে। নতুন চাল উঠলেই দাম বাড়ে। বাজারে ও মিলে পর্যাপ্ত চাল আছে। তারপরও দাম বাড়ছে। সরকারের যথাযথ তদারকি নেই বলেই এভাবে কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটরা শুধু খুচরা আর পাইকারি বাজারেই অভিযান চালান, মিলগুলোতে যান না। বাজারে অস্থিরতা কমাতে হলে সব যায়গায় তাদের মনিটরিং করতে হবে। আমরা মিল মালিকদের কাছ থেকে যে দামে কিনে আনি, কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করি। দাম আমরা বাড়াই না। একই কথা বলেন মক্কা রাইসের ম্যানেজার শাখাওয়াত। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট বাজারে এসে যে দোকানে পলিথিন পায় তাকে ধরে। কিন্তু যে জায়গায় পলিথিন উৎপাদন হয় সেখানে যায় না। চালের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। মিলগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট যায় না। পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান করে চালের দাম কমানো যাবে না। যদিও অনেকদিন ধরে ম্যাজিস্ট্রেট বাজারেই আসে না। দুলাল নামে এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিনের হরতাল-অবরোধে গাড়ি আসতে পারছে না, যে কারণে চালের দাম বাড়ছে। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আর নতুন চাল উঠলে দাম কমে যাবে। অস্থিতিশীল আলু ও চিনির বাজারও : আমদানি শুরুর পর নিম্নমুখী হয়ে উঠেছিল আলুর দাম। চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক নামিয়ে আনা হয়েছিল অর্ধেকে। যদিও বাজারে এখন আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পণ্য দুটির দাম। গত তিনদিনে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫-২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে চিনি। এজন্য ডলারের সংকটকে দায়ী করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে প্রয়োজনমতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে নির্ধারিতের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে আমদানিতে। এরই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আলু ও চিনির বাজারদরে।  সরজমিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। যদিও গত শুক্রবার তা ৪৫-৫০ টাকায় ‍বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে তিনদিনের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। আবার বাজারে চিনিও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো দোকানে চিনি মিলছেই না। যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা কেজি দরে। যদিও ১০-১২ দিন আগে প্রতি কেজি চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অব্যাহত দর বৃদ্ধির মুখে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর কেজিপ্রতি মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। যদিও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। গত মাসে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৬৫-৭০ টাকায়ও উঠে যায়। নানামুখী পদক্ষেপ কাজে না আসায় গত ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এরপর দেশে আমদানির আলু আসতে শুরু করলে দাম কিছুটা কমে আসে। গতকাল পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৬ হাজার ৬৩০ টন আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র ১০ হাজার ৫৭ টন। এ আলুর সিংহভাগ এসেছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। এখানে বর্তমানে আমদানীকৃত কাটিনাল জাতের লাল আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৬-৩৭ টাকায়, যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩৪-৩৬ টাকা কেজি দরে। এছাড়া সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি দরে, যা আগের দিন ৩১-৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। হিলি স্থলবন্দরের আলু আমদানিকারক আবু হাসনাত খান রনি বলেন, ‘‌আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। যদিও বর্তমানে আমরা দেশের চাহিদা অনুযায়ী আলু আমদানি করতে পারছি না। ব্যাংকগুলোয় এলসি খোলার জন্য দিনের পর দিন ধরনা দিতে হচ্ছে। তার পরও ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমাদের এলসি দিতে চাইছে না। অনেক চেষ্টা করে এলসি খোলা হলেও তা সীমিত পরিমাণে। আবার দেখা যাচ্ছে আমরা ব্যাংকে এলসি খুলছি প্রতি ডলার ১১১ টাকা দরে। কিন্তু আমদানির পর বেচাকেনা শেষে ব্যাংকে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে আমাদের আবার বাড়তি ৪-৫ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে আমরা যে ব্যয় হিসাব করে দাম ধরছি, বিল পরিশোধের সময় সে হিসাব ঠিক থাকছে না। আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও জটিলতা নিরসন করে চাহিদা অনুযায়ী এলসি দেয়া হলে বন্দর দিয়ে ব্যাপক পরিমাণে আলু আমদানি শুরু করা যাবে। এতে পণ্যটির দামও কমে আসবে। আবার ভারতেও আলুর দাম এখন বেড়েছে জানিয়ে হিলি স্থলবন্দরের আলু ব্যবসায়ী সাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বাজারে আলুর বাড়তি চাহিদাকে ঘিরে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যে আলু আগে কেজিপ্রতি ১২-১৪ রুপি দাম ছিল, সে আলু এখন দাম বেড়ে ১৫-১৬ রুপি হয়ে গেছে। এর সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে। খুচরার মতো পাইকারিতেও আলু বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৫ টাকা দরে। তিনদিন আগে এ দাম ছিল ৩৬-৩৭ টাকা। এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মো. সোহেল বলেন, ‘‌বাজারে আলুর সরবরাহ কম। তিনদিন ধরে দাম বাড়তির দিকে। হিমাগার পর্যায় থেকে আলুর সরবরাহ কম। এ কারণে দাম বাড়ছে। চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে কিছুদিন আগেই শুল্ক কমিয়ে অর্ধেকে নামানোর ঘোষণা দেয় সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ১ নভেম্বর প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানির শুল্ক ৩ হাজার থেকে কমিয়ে দেড় হাজার এবং পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে ৬ হাজার থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করে। তবে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, শুল্ক কমানোর ফলে প্রতি কেজিতে মাত্র দেড় টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। যদিও শুল্ক কমানোর দিনই বাজারে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল চিনির দাম। জানতে চাইলে দেশের অন্যতম অপরিশোধিত চিনি আমদানি ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘সরকার চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু ডলারের বিনিময় হার যেভাবে বেড়েছে আর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা আমদানিতে কেজিপ্রতি ৪৩ টাকা শুল্ক পরিশোধ করি। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, শুল্ক কমছে মাত্র দেড় টাকা। গত সপ্তাহে যে হারে ডলারের দর বেড়েছে তাতে দামের অস্থিরতা কমানো কিংবা লোকসান এড়ানোর ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের কিছুই করার থাকছে না। অনেকটা একই কথা বললেন এস আলম গ্রুপের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী। আবার খোলাবাজারে ডলারের দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সরকার চিনির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডলার ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করছে না। এক্ষেত্রে সমন্বয় করে নিলে সমস্যা কেটে যাবে। সরকারের কাছে শুল্ক কমানোর দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু যা কমানো হয়েছে, তাতে কেজিতে দেড় টাকা সাশ্রয় হবে। অথচ ডলারের দর বেড়েছে ৭-৮ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু দাম বেশি, তাতে সরকার শুল্ক কমালে সবার জন্য সুবিধা হতো। ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুল্ক হ্রাসের পর এখানে পাইকারি পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যেই চিনির দাম বেড়ে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৫ হাজার ৭০ টাকায় উঠে যায়। বর্তমানে কিছুটা কমে ৪ হাজার ৯০০ টাকায় নামলেও ডলার ও সরবরাহ সংকটে চিনির বাজারে অস্থিরতা কাটেনি। প্রায় তিন মাস আগে সরকার খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করেছিল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। বেসরকারির পাশাপাশি বেড়েছে সরকারি মিলের চিনির দামও। বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সম্প্রতি চিনির দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২৫ নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সংস্থাটির সারা দেশের প্রায় ৪ হাজার ডিলার প্রতিনিধিদের মাত্র ৫০ কেজি করে চিনির বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। নতুন মাড়াই মৌসুম শুরু হওয়ায় চিনির সরবরাহ বাড়িয়ে বিএসএফআইসির বাজার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখা উচিত বলে দাবি করেছেন ডিলার ও পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী দাবি করলেন, কোম্পানিগুলো থেকেই সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে, যা পণ্যটির ঊর্ধ্বমুখিতাকে আরো জোরালো করে তুলেছে। এখানকার ব্যবসায়ী মো. ইসহাক বলেন, ‘চিনি নেই। কোম্পানিগুলো থেকেই চিনি মিলছে না। সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগেও তারা প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি কিনেছেন ৬ হাজার টাকায়। বর্তমানে কিনছেন ৬ হাজার ৭০০ টাকায়। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও কেজিপ্রতি চিনির দাম অন্তত ১০-১২ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য নীতিনির্ধারকরা দায়ী করছেন বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের দেশে না পুরো বিশ্বে ঘটছে। তেল ও চিনিসহ যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেসব পণ্যের দাম সময়ে সময়ে নির্ধারণ করে দিয়েছি। পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালে রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় হয়তো পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ‘পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছি। খাদ্যপণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে ডলারের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ নভেম্বর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here