দেশে বাড়ছে বিদেশি প্রতারক

0
269

আলোকিত ডেস্ক:

বাংলাদেশে বিদেশি প্রতারকদের একাধিক চক্র ধরা পড়েছে সম্প্রতি। এই এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রধানত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তারা অনলাইন প্রতারণাসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য এইসব চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকরাও যুক্ত। তারা দেশে বা বিদেশে থেকে বাংলাদেশি অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণায় সহায়তা করেন। কেউ কেউ চক্রের নেতৃত্বও দেন। গত বছরের অক্টোবর  মাসে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ এমন একটি প্রতারক চক্রের সদস্যদের আটক করেছে যে চক্রে দেশি এবং বিদেশি দুই ধরনের নাগরিকই আছে। আটক ১১ জনের মধ্যে পাঁচজন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং ছয় জন বাংলাদেশি। এই চক্রের মূল হোতা বিপ্লব নামের একজন বাংলাদেশি নাগরিক। এই চক্রটি বাংলাদেশি নাগরিকদের সাথে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে দামি  উপহার ও ডলার পাঠানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তারা তাদের ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বিশেষ করে ইউরোপ-অ্যামেরিকার  নাগরিকদের ছবি ব্যবহার করা হয়। এক পর্যায়ে পার্সেলের মাধ্যমে দামি উপহার, ডলার পাঠানোর কথা তার ছবি তোলা হয়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা আবার বাংলাদেশে নিজেদের কাষ্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে ওই দামি পার্সেল ছাড় করানোর জন্য মাশুল হিসবে টাকা আদায় করত। তাদের কাছ থেকে পুলিশ কাস্টমস কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয়পত্রও উদ্ধার করেছে। আবার কথিত ডলার পাঠিয়ে তা গ্রহণ করতে মোটা অংকের টাকা আদায় করত। পার্সেলের ডলার গ্রহণ না করলে মামলার ভয়ভীতিও দেখাতো। তারা ১০ বছর ধরে এই প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে দাবি করেন গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার কথা বলেও প্রতারণা করে আসছিলো। প্রতারণা অপরাধের যত ধরণ: গত বছর ৩০ আগস্ট ঢাকায় ক্যামেরুনের এক নাগরিককে আটক করা হয়। সেও একই কৌশলে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে দামি উপহার ও ডলার পঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছিলো। সে পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করলেও তার বৈধ ডকুমেন্ট ছিল না। গত বছরের ১২ জানুয়ারি  সাত জন নাইজেরিয়ান ও দুইজন বাংলাদেশি নাগরিককে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদস্যরা। কিছু নাইজেরীয় নাগরিক টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে দামি উপহার ও ডলার পাঠানোর নামে প্রতারণায় যুক্ত। গত এপ্রিলে ১১ জন বিদেশি নাগরিক ও তাদের বাংলাদেশি সহযোগিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার  করে সিআইডি। ১১ বিদেশি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তারা ‘ডলার ট্রিক’ বক্স নামে একটি বাক্স থেকে ডলার তৈরি দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে বিপূল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের প্রতারণার কৌশলটি হলো বাক্সে যত পরিমাণ টাকা ঢোকানো হবে তত ডলার বেরিয়ে আসবে। বিদেশিরা এই প্রতারণা ছাড়াও নকল পণ্য তৈরির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছেন। গত ডিসেম্বরে ঢাকার তুরাগ থানা এলাকা থেকে নামী ব্র্যান্ডের বিপূল পরিমাণ নকল সেলাই মেশিনসহ দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি  ঢাকার  শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তিন কেজি হোরোইনসহ  গ্রেপ্তার করা হয় আফ্রিকার বাতসেয়ানার এক নারীকে। প্রতারণার শিকার পুলিশও: গোয়েন্দা  বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান  জানান, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং তাদের স্ত্রীরাও এই বিদেশি প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছে। এক নারী তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যাও করেছেন। একজন ৭৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন। সংসার ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও আছে। তকে মূলত লোভী লোকজনই এদের শিকার হন। তিনি বলেন, তারা প্রধানতঃ বিনিয়োগ, ডলার তৈরি করে দেয়া এবং দামী উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণা  করে। এছাড়া তারা মাদক ব্যবসা, এটিএম কার্ড জালিয়াতি এবং অনলাইনে আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তারা মাদক ব্যবসাও করে। তবে এই  বিদেশি নাগরিকদের  প্রতারক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকেরা যুক্ত থাকেন। তারা প্রতারণা করার জন্য ফেসবুকে ইউএস আর্মি, বিদেশি কোনো পদস্থ ব্যক্তি, ব্যবসায়ীর ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খোলে। আর বিদেশি নারীদের ছবিও তারা ব্যবহার করে। ফেসবুক ফ্রেন্ড হওয়ার পর প্রাথমিক তথ্য তারা ফেসবুক থেকেই পায় বলে জানান তিনি। তিনি বিনিয়োগ প্রতারণার উদাহরণ দিয়ে বলেন, তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার কথা বলে তার বড় অংকের ডলার পাওয়ার গল্প বানায়। এরপর ওই প্রকল্পে বাংলাদেশি প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। তারপর একপর্যায়ে ডলার পাঠানোর খরচ বা অন্য কিছু বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। এই বিদেশিরা বাংলাদেশে টুরিস্ট, স্টুডেন্ট বা বিনিয়োগ ভিসায় এসে পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে প্রতারণা ব্যবসা শুরু করে। গত পাঁচ বছরে সিআইডি এইসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ৫৭টি মামলা করেছে। গ্রেপ্তার করেছে প্রায় দুইশ বিদেশি নাগরিককে। যাদের প্রায় সবাই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তবে পুলিশের সব সংস্থা মিলে মামলার সংখ্যা ১৫০টির বেশি হবে। গ্রেপ্তারে সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচশ’ বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, আফ্রিকান নাগরিকদের আরো বেশ কিছু প্রতারক চক্র বাংলাদেশে সক্রিয় আছে। তাদের আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এই প্রতারকদের সহযোগী বাংলাদেশি বেশ কিছু নাগরিককেও আমরা চিহ্নিত করেছি। এরা অল্প সময়ের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করে। তারা বিদেশে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণায়ও যুক্ত হয়েছে। তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী শিক্ষকরাও। তারা হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং অনুদানের নামেও প্রতারণা করে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৩ নভেম্বর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here