আলোকিত ডেস্ক:
৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। জাতিসংঘ প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। স্বেচ্ছাসেবী ও স্বেচ্ছসেবী সংস্থাগুলোর পক্ষে বিশ্ব সম্প্রদায়, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), জাতিসংঘের সংস্থা, সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে তাদের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা, তাদের কাজের প্রচার করা, তাদের মূল্যবোধ ভাগ করে নেওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয় এর মাধ্যমে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সংহতি’। স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম রয়েছে বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস, নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত রেঞ্জার ইউনিটসহ আরও বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। তবে এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবার ধারণা প্রচার করা হয়। এই স্বেচ্ছাসেবকরা কোনও প্রাপ্তির আশা ছাড়াই যেকোনও দুর্যোগে সেবা নিতে প্রস্তুত থাকে। দেশে জাতীয় দৈনিকগুলোও পাঠক সংগঠন গড়ে তুলেছে বেশ কয়েকটি, যাদের কার্যক্রমের অন্যতম অনুষঙ্গ স্বেচ্ছাসেবা। বিশেষ কোনও দুর্যোগে ক্রান্তিতে এই সংগঠনগুলোর সদস্যরাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন দুর্যোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমতালে কাজ করে রোভার স্কাউটস। বাংলাদেশে অনেকগুলো রোভার স্কাউট ইউনিটের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে দেশ-বিদেশে যদি কেউ আত্মমানবিকতার সেবা স্কাউটকে স্মরণ করে বা জানতে পারে, তাহলে সব স্বতপ্রণোদিত হয়ে সেখানে স্বেচ্ছাসেবা দিতে উপস্থিত হয় ঢাবি শাখা রোভার স্কাউট। নিমতলী অগ্নিকাণ্ড, সাভার অগ্নিকাণ্ডে সম্মুখ সারিতে ছিল তারা। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের বন্যায় নিয়মিত সেবা স্বেচ্ছাসেবক মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্লাস্টিক-মুক্ত রাখা, নতুন বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ ধ্বংসকারী বৃক্ষ নিধন কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করে রোভার স্কাউট। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত কার্যক্রম মধ্যে রয়েছে শহীদ দিবস, মঙ্গল শোভাযাত্রা বিভিন্ন সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সিনেটের অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিরাপত্তা দেওয়া। নেপালের ভূমিকম্পের উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে বাংলাদেশ থেকে একটি রোভার স্কাউট টিম যায়, সেখানে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটরাও। ঢাবি রোভার স্কাউটসের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমার স্কাউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি নতুন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সেটি হলো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। উদ্দেশ্য ক্যাম্পাসে অপ্রত্যাশিত গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করা, ক্যাম্পাসের শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখা, অযাচিত দুর্ঘটনার হাত থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা। ‘সেবাই মূল লক্ষ্য’ চেতনায় শিক্ষার্থীদের তৈরি করা হয়। এখানে পাওয়ার কিছুই নেই। সেবা দিতেই তারা সব সময় প্রস্তুত থাকে। বিএনসিসি এবং রোভার স্কাউটে নারী-পুরুষ উভয় শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ থাকলেও শুধু নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত হয় রেঞ্জার ইউনিট। অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের অনুষ্ঠান হয়, সেটি জাতীয়, আন্তর্জাতিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোক, বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি এবং রোভার স্কাউটের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেঞ্জার ইউনিট নিয়মিতভাবে এসব প্রোগ্রামের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে। বিদ্যালয়ের প্রোগ্রামের বাইরে বিভিন্ন টিকা দিবস সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কাজ করে। এ ছাড়া হলে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় রেঞ্জার ইউনিটের সভাপতি অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবে এই স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পাশাপাশি সেবামূলক কার্যক্রম আমাদের মানবিক কোণগুলো বিকশিত হতে সহায়তা করে। বিশেষ শৃঙ্খলা কাজগুলো তাদের পরবর্তী ক্যারিয়ার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি আমি মনে করি, এসব কার্যক্রম তাদের পরবর্তী জীবনে এক ধাপ এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সমরবিজ্ঞানে পারদর্শী করে তোলে বিএনসিসি। এই সংগঠনে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে ক্যাডেট হয়। এরপর বছরে ৩০টির মতো ক্লাস হয় তাদের। এই ট্রেনিং ক্লাসগুলোয় তাদের প্রতিরক্ষা, অস্ত্র ব্যবহার, অস্ত্র খুলে জোড়া দেওয়া, অস্ত্র পরিচালনা, পিটি প্যারেড শেখানো হয়। শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে ভর্তির এক বছর পর সমরবিজ্ঞান-১, দুই বছর পর সমরবিজ্ঞান-২ নেওয়া হয় বলে জানান ঢাবি কন্টিনজেন্ট কমান্ডার অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, বেশি ঠান্ডা, বেশি গরম, বন্যা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে বিএনসিসি। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন সর্বপ্রথম প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস উদযাপন শুরু করে। অবিচ্ছিন্ন মানব বিকাশের জন্য এই স্বেচ্ছাসেবীরা অনলাইনে স্বেচ্ছাসেবক পরিষেবাগুলো ব্যবহার করে এবং একটি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ৪ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি