পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে চলছে ছিনিমিনি

0
388

আলোকিত ডেস্ক:

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১২০ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা পেঁয়াজের সঙ্গে হু হু করে বেড়েছে দেশি নতুন ও পুরাতন পেঁয়াজের দাম। পাইকারিতেই ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আগে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ভালো মানের দেশি পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে যা এখন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। যা গতকাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সোমবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা ও রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। সব মিলে দেশের বাজারে আবারও ঝাঁজ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ। ১৮০ টাকার নিচে ভালো কোনো পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে না। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার খবর আসে শুক্রবার। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। মাত্র একরাতের ব্যবধানে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এরপরের তিন দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে গেলো। এক্ষেত্রে বিক্রেতারা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। পাশাপাশি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এতে নতুন করে বাড়ছে দাম। তালতলা বাজারে বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, শুক্রবার যে মানের ভারতীয় পেঁয়াজ রাজধানীর শ্যামাবাজারে বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকায়। এ দাম গতকালের থেকেও ২০ টাকা বেশি। আবার দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম একরাতে ৬০ টাকা বেড়েছিল। কাল (রোববার) আবারও বেড়েছে। পাইকারিতে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২১২ টাকা কেজি দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা থেকে ঠেকেছে ১৯০ টাকায়। তবে বাজারের এ অস্থিরতাকে সাময়িক বলছেন তারা। নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে ওঠা শুরু হলে দাম কমে যাবে বলেও মত তাদের। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে আহসান বাণিজ্যালয়ের আক্কাস জোয়ার্দার বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি। শিগগিরই নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তাই আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। তাই সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় পেঁয়াজের দাম সাময়িক বেড়েছে। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেলে দাম আবার কমে যাবে। পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এর প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে। এমনিতেই বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী। নিষেধাজ্ঞার এ খবরে দাম আরও বাড়ছে। তবে পেঁয়াজের এ ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোববার ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ৪টি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৪০টি জেলায় একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এতে সারাদেশে ৪৩টি টিম বাজার অভিযানের মাধ্যমে ৮০ প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে। তার আগের দিনও ১৩৩টি প্রতিষ্ঠান গুনেছিল পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রির জন্য জরিমানা। পেঁয়াজ আমদানিতে বিকল্প মার্কেট খোঁজার আহ্বান এফবিসিসিআইর: পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ও বর্তমান সংকট হতে উত্তরণের জন্য আপাতত বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। রোববার  দিনগর রাতে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এসময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম না বাড়ানোর জন্যও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। মাহবুবুল আলম বলেন, নিন্মবিত্ত হতে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য হলো পেঁয়াজ । নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে যারা দেশের সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলেছেন তারা কোনোভাবেই দেশের ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রত্যাশা করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে হবে। পাশাপাশি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে খুচরা, পাইকারি বাজার এবং আড়ৎ পর্যায়ে পণ্য কেনা-বেচায় নজরদারির তাগিদ দেন তিনি। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সময় বেঁধে দিলো ঢাকার জেলা প্রশাসন: পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে অভিযান চালিয়েছে ঢাকার জেলা প্রশাসন। অভিযানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে দুইদিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজার, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার ও মিরপুর-১ কাঁচাবাজারে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ব্যবসায়ীরা যাতে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি ও মজুত করতে না পারেন সেজন্য এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মনিটরিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পাইকারি ও খুচরা বাজারের কাঁচা ও পাকা ভাউচার পর্যবেক্ষণ করা হয়। একই সঙ্গে যারা সঠিকভাবে ভাউচার সংরক্ষণ করেননি তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। অধিক লাভের আশায় কেউ যেন বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি এবং পেঁয়াজ মজুত না করে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়। এছাড়া অভিযানে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার দাম নিয়ন্ত্রণে দুইদিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তখন দোকানিরা নিয়ন্ত্রিত ও সঠিক দামে পেঁয়াজ বিক্রি করবেন বলে জেলা প্রশাসকের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবুবকর সিদ্দিক, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসন সায়েম ইমরান, মিরপুর রাজস্ব সার্কেল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১১ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here