আলোকিত ডেস্ক:
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ঝুঁকি বেড়েছে দেশের বস্ত্র খাতে। সংকটে রয়েছে সুতা উৎপাদনকারী স্পিনিং মিলগুলো। ক্রয়াদেশ কমায় এখন সুতার দাম নিম্নমুখী। এ সময়ে গ্যাসের দাম বাড়ায় সুতা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। এ পরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট সুতা উৎপাদনে ৪০-৫০ সেন্ট ক্ষতি হচ্ছে মিলগুলোর। ২ বছর ধরে ক্রমাগত সংকটের মধ্যে থাকায় কয়েকটি মিল বন্ধও হয়ে গেছে। যদিও আশা করা হচ্ছে, নতুন মৌসুমে ক্রয়াদেশ বাড়বে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটে বিভিন্ন ব্যাংক মিলগুলোকে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে দিচ্ছে না। সম্প্রতি তুলার ফাইবারের দাম কমেছে। এখন যদি মিলগুলো ফাইবার কেনার জন্য সহজে এলসি খুলতে পারে, তাহলে সংকট অনেকাংশেই কমবে। সুতা উৎপাদনকারীদের অনেকে বলছেন, ব্যাংক এলসি খুলতে না দেওয়ায় ফাইবারের কম দামের সুযোগ নেওয়া যাচ্ছে না। আগামী মাসে ক্রয়াদেশ বাড়লে মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়বে। এতে পুরো সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হবে, যা গার্মেন্টস শিপমেন্টেও প্রভাব ফেলতে পারে। স্পিনিং মিলগুলো যদি কম ফাইবারের দামকে পুঁজি করতে পারে তাহলে তারা আগামীতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সুতা সরবরাহ করতে পারবে। তা না হলে, পোশাক প্রস্তুতকারীরা ভারতীয় সুতা কিনতে যাবে, যা মিলগুলোকে আরও ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ডলার সংকট দেশের স্পিনিং মিলগুলোকে বিপাকে ফেলেছে। সময় মতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে স্পিনিং মিলগুলো টিকে থাকার চেষ্টা করছে। বর্তমানে নতুন কোনও বিনিয়োগের সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। এসব মিল যদি নিজেদের ব্যবসা ঠিকমতো চালাতে না পারে তবে তা অবশ্যই দেশের মোট রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পকে প্রভাবিত করবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রয় মূল্য ও উৎপাদন খরচের মধ্যে সামঞ্জস্যতা তৈরি সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ মনোযোগ আশা করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, এক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ নজরদারি দরকার। এলসি খোলার জটিলতা নিরসন করা গেলে সুতা আমদানি অনেকাংশে কমবে, যা বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইতিবাচক হবে। বিটিএমএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে স্পিনিং মিলের সংখ্যা ৫১০। এসব মিলের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৩৬০ কোটি কেজি বা দেড় কোটি বেল। এ পরিমাণ সুতা দেশের রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণে সক্ষম। তারপরও রফতানিমুখী পোশাক শিল্প-কারখানাগুলো প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ তুলার সুতা আমদানি করে থাকে, যার সিংহভাগেরই জোগানদাতা ভারত। ২০২২ সালে দেশের মোট সুতা আমদানির ৭৪ শতাংশই হয় ভারত থেকে। চীন থেকে এসেছে ১২ শতাংশ। পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছে যথাক্রমে ৭ ও ৫ শতাংশ। তুরস্ক থেকে আমদানি হয় ১ শতাংশ। বাকি ১ শতাংশ আমদানি হয় অন্যান্য দেশ থেকে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১১ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি