প্রতিনিধি, দেবিদ্বার:
১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের সবচেয়ে আনন্দের দিন। একটি স্বাধীন, একটি জাতির পরিচয়, বীরত্বের এক অবিস্মরণীয়, স্বার্বভৌম দেশ প্রাপ্তির দিন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামের নতুন এক রাষ্ট্রের। বাঙালি জাতি বিশ্বকে জানিয়েছিল আপন অস্তিত্ব। ব্যাপক আনন্দ আর উৎসবের মধ্য দিয়ে জাতি এবার পালন করলো ৫৩ তম বিজয় দিবস। জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেছে ৩০ লক্ষ শহীদকে, যাদের রক্তের বিনিময়ে অবসান ঘটেছিল পাকিস্তানি শাসনামলের। শনিবার দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিজয়ের ৫৩ বছরে দিনব্যাপী ছিল সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচি। ভোরের প্রথম প্রহরে বীর শহীদদের প্রতি ফুলের পুষ্পস্তবক অর্পণ এর মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুল নিয়ে উপস্থিত হন দেবিদ্বার উপজেলা মধ্যে বঙ্গবন্ধু মোড়ালের সামনে। শীতের কুয়াশা ঠেলে একের পর এক শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে আসতে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবীসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। দেবিদ্বার এবিএম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজন করা হয় কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শন অনুষ্ঠান। সেখানে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ছিলো স্বাধীনতার অবস্থান নাট্য চিত্র উপস্থাপন, বিকালে আয়োজন করা হয় প্রতি ফুটবল খেলা, উপজেলা অডিটোরিয়াম হল রুমে আয়োজন করা হয় গানের অনুষ্ঠান, ছিলো নাট্য চিত্র সেরা বিজয়ীদের জন্য পুরষ্কার বিতরন এবং উপজেলা মুক্তিযুদ্ধের জন্য বিশেষ সম্মাননা। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপি, জনাবা নিগার সুলতানা (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) দেবীদ্বার সার্কেল এএসপি শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান। মো: রায়হানুল ইসলাম (সহকারী কমিশনার- ভূমি), মো: নয়ন মিয়া (অফিসার ইনচার্জ- দেবিদ্বার), মোঃ ফখরুল ইসলাম (দেবিদ্বার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা), হাজী আবুল কাশেম ওমানি (ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান), জনাবা এডঃ নাজমা বেগম (উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান), জনাব রোশন আলী মাস্টার (সেক্রেটারি- কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামিলীগ), শিরিন সুলতানা (সভাপতি- কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামিলীগ), একেএম সফি উদ্দিন আহমেদ (সভাপতি- দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগ), জনাব মোস্তফা কামাল চৌধুরী (সেক্রেটারি- দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগ), জনাব সাইফুল ইসলাম শামীম ( পৌর মেয়র), সেচ্ছাসেবক লীর এর সেক্রেটারি সাদ্দাম হোসেন, যুবলীগ নেতা ইকবাল হোসেন রুবেল সহ আরো অনেক নেতাকর্মী। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান বাহিনীর ৯১ হাজার ৬৩৪ জন সদস্য লেঃ জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তান কারাগারে বন্দী। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত মুজিবনগর সরকার নয় মাস যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয়টি সেক্টরে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল মুক্তিবাহিনী। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের কোনো মিল ছিল না। সে কারণে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাঙালিকে আলাদা অবস্থানের নির্দেশ দেন। ছাত্র জনতা সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে পথ চলা শুরু করে। এরপরই পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাঙালিরাও। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।”
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৬ ডিসেম্বর ২৩/মওম