নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন আজ ১৬ ডিসেম্বর শনিবার । বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন আজ। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও, বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের জন্য। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের এই স্বাধীনতা। চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও, বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের জন্য। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের এই স্বাধীনতা।
গভীর শ্রদ্ধার সাথে সারাদেশে মহান বিজয় দিবস পালিত :
নেত্রকোনায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালিত:
প্রতিনিধি,নেত্রকোনা:
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদমুক্ত, সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দীপ্ত অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী, আধা সরকারী, সায়িত্বশাসিত এবং বেসরকারী ভবন ও স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬ টায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলকে ও স্মৃতিসৌধে সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৮টায় নেত্রকোনা আধুনিক স্টেডিয়ামে পুলিশ, আনসার বিডিপি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিশু কিশোরদের অংশগ্রহনে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। সকাল ১১টায় স্থানীয় পাবলিক হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান এবং দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জ ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। বেলা ২টায় হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা ও সরকারী শিশু পরিবারে উন্নত মানের খাবার বিতরণ করা হয়। বিকাল ৩টায় নেত্রকোনা কালেক্টরেট ন্কুল প্রাঙ্গণে মহিলাদের অংশ গ্রহনে আলোচনা সভা ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে মোক্তারপাড়া মাঠে প্রবীনদের হাটা প্রতিযোগিতা, বিকাল ৪টায় মোক্তারপাড়া মাঠে মুক্তিযোদ্ধা একাদশ বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল খেলা, কিড্ডি কিংডম পার্কে বিনা টিকিটে শিশুদের বিনোদন, সন্ধ্যা ৬টায় পাবলিক হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।





মাইনুল হাসান মজনু:
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে নানান কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর শনিবার প্রথম প্রহরে সারিয়াকান্দি পাবলিক মাঠে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যদিয়ে দিবসের শুভ সূচনা হয়। এছাড়াও সকাল ৬.১০ মিনিটে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তাবক অর্পন করেন, সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ তৌহিদুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোঃ রবিউল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম (মন্টু) , পৌর মেয়র মতিউর রহমান (মতি) , উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজাউল করিম (মন্টু) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক দুলু, সারিয়াকান্দি মডেল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারন সম্পাদক শাহাদত হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃহারুনুর রশিদ, বিভিন্ন সরকারি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠন। পুষ্পাবক অর্পণ শেষে সকাল ৮.২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুন ফেস্টুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ-সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মাধবপুরে নানা আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপন:
ত্রিপুরারী দেবনাথ তিপু:
নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুরে উদযাপন করা হচ্ছে মহান বিজয় দিবস ১৬ডিসেম্বর। দিবস উপলক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির শুরুতেই শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩১বার তপ্পোধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। এরপর প্রথমে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি, বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং উপজেলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এড. মাহবুব আলী এমপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি রাহাত বিন কুতুব, ওসি রকিবুল ইসলাম খাঁন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুজিব উদ্দিন তালুকদার ওয়াসিম, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ, এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক গণ উপস্থিত ছিলেন। এরপর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে উপজেলার মাধবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শনসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রাথমিক স্তরে গংগানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডিসপ্লে প্রদর্শনে ১ম স্থানে পুরস্কৃত হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয়, জয় বাংলা বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আরও একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ‘৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুনের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলিদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। অবশেষে নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।